বাগমারার জোকাবিলে আ’লীগের দুই গ্রুপে উত্তেজনা হামলা ও ভাংচুর, ২৫ লাখ টাকার ক্ষতি

বাগমারা প্রতিনিধি:

রাজশাহীর বাগমারার সেই জোঁকাবিলে মাছ চাষ কে কেন্দ্র করে স্থানীয় আ’লীগের দুই গ্রুপের মধ্যে আবারো উত্তেজনা দেখা দিয়েছে। শুক্রবার রাত থেকে ওই বিলে মাছচাষের জন্য ঘিরে দেওয়া বাঁশের বেড়া (বানা) কেটে ফেলেছে প্রতিপক্ষরা। আ’লীগ নেতা জাবের আলী বাহিনীর নেতৃত্বে ৫০-৬০জনের একটি দল বেড়া কেটে ফেলে বলে অভিযোগ করা হয়। এই ঘটনায় পাল্টা প্রতিশোধ হিসাবে প্রতিপক্ষের পোল্ট্রি খামারে হামলা করা হয়। উভয় পক্ষের মধ্যে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়লে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশের তৎপরতা বাড়ানো হয়। নেতৃত্বে এক পক্ষে রয়েছেন আ’লীগ নেতা সাবেক চেয়ারম্যান আব্দুর রশিদ অপর পক্ষে রয়েছেন আ’লীগ নেতা জাবের আলী। এর আগে এই বিলে মাছচাষের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে মৎস্যচাষ প্রকল্পের কোষাধ্যক্ষ আনিসুর রহমানকে (৬২) ধারাল অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে হত্যা করা হয়।

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, উপজেলার নরদাশ ইউনিয়নের জোঁকাবিলে স্থানীয় মৎস্যজীবি ও লোকজন মিলে মাছচাষ করে আসছেন। বিলের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে দুটি পক্ষের সৃষ্টি হয়। এ নিয়ে প্রতিপক্ষের হামলার মৎস্যচাষ প্রকল্পের কোষাধ্যক্ষ আনিসুর রহমানকে প্রকাশ্যে কুপিয়ে হত্যা করা হয়। এরপর স্থানীয় প্রশাসন উভয় পক্ষকে নিয়ে বসে তাদের মধ্যে সমঝোতা করে দেয়। রাজশাহীর পুলিশ সুপারের নেতৃত্বে ওই সমঝোতা হয়। সেখানে তৃতীয় পক্ষের নিরপেক্ষ ব্যক্তি হিসাবে নরদাশ ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি আবদুর রশিদকে প্রকল্পের সভাপতি করে একটি কমিটি গঠন করে দেওয়া হয়। চলতি বছরের আগস্ট মাসে এই কমিটির মেয়াদ শেষ হবে। এর মধ্যে আবারো আবদুর রশিদকে সভাপতি করে নতুন কমিটি গঠন করা হয়েছে।

এদিকে আনিসুর হত্যা মামলার আসামিদের একটি অংশ আবারো বিশৃংখলা সৃষ্টির চেষ্টা করে। তারা জাবের বাহিনীর প্রধান জাবের আলীর নেতৃত্বে বিলটি নিজেদের নিয়ন্ত্রণে নেওয়ার চেষ্টা চালায়। এদের সঙ্গে হাটমাধনগর গ্রামেরও কিছু লোক যোগ দেয়। তবে বিশৃংখলা এড়াতে সম্প্রতি পানিয়া, গোড়সার, বাসুদেবপাড়া ও কাষ্টনাংলা গ্রামের লোকজন বিলটিতে বাঁশের বেড়া দিয়ে সমঝোতার ভিত্তিতে ভাগ করে। বিলে মাছও ছাড়া হয়।

এদিকে গত শুক্রবার দিবাগত রাতে জাবের বাহিনীর অর্ধশত লোকজন ধারাল অস্ত্রে সজ্জিত হয়ে বিলে হানা দেয়। এসময় সেখানে পাহারা দেওয়া সাদ্দাম হোসেন, শফিকুল ইসলাম, আলম, বাক্কারসহ অন্যদের ধাওয়া করে। তারা প্রাণভয়ে পালিয়ে যায়। পরে তারা নির্বিঘ্নে বিলের বাঁশের বেড়া কেটে ফেলে এবং লুট করে নিয়ে যায়। এতে প্রায় ২০-২৫ লাখ টাকার ক্ষতি হয়। সকালে বিষয়টি জানাজানি হলে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। এক পর্যায়ে ক্ষুব্ধ লোকজন প্রতিপক্ষ জোনাব আলীর পোল্ট্রি খামারে হামলা চালায় বলে অভিযোগ করা হয়। খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।

বিলের মৎস্যচাষ প্রকল্পের সভাপতি আব্দুর রশিদ অভিযোগ করে বলেন, জাবের বাহিনীর লোকজন ধারাল অস্ত্রে সজ্জিত হয়ে বিলের বেড়া কেটে প্রায় ২৫ লাখ টাকার ক্ষতি করেছে। বিলের নিয়ন্ত্রণ নিতে এই ঘটনা ঘটানো হয়েছে। এর আগে বাসুপাড়ায় বিলের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে জাবের আলী বিশৃংখলা সৃষ্টি করেছিল। এতে বহুলোক পঙ্গু হয়েছে। পুলিশের কাছ থেকে হাতকড়া পরানো অবস্থায় পালিয়ে যায়। তবে পোল্ট্রি খামারে কারা হামলা করেছে তা তিনি বলতে পারেননি।

হাটগাঙ্গোপাড়া তদন্তকেন্দ্রের ইনচার্জ রফিকুল ইসলাম বলেন, প্রাথমিক তদন্তে এই বেড়া কাটার সঙ্গে জাবের বাহিনীর জড়িত থাকার প্রমাণ পাওয়া গেছে। পুলিশ তদন্ত করে দ্রুত ব্যবস্থা নিবে। পরিস্থিতির উপর পুলিশ নজর রাখছে। তবে জাবের আলীর সঙ্গে যোগাযোগ করা হলেও তিনি ফোন না ধরায় কথা বলা সম্ভব হয়নি।

স/রি