বাইরে সিলগালা ভেতরে সচল কারখানা

নির্দেশনা অমান্য করে কেরানীগঞ্জে শতাধিক ওয়াশিং, ডাইং ও প্রিন্টিং কারখানা এখনও চালু রয়েছে কেরানিগঞ্জে। বুড়িগঙ্গার পানি দূষণরোধে দুই তীরে ইটিপি ছাড়া (পানি বিশুদ্ধকরণ প্রক্রিয়া) স্থাপিত সব ওয়াশিং, ডাইং ও প্রিন্টিং কারখানা বন্ধের নির্দেশনা রয়েছে উচ্চ আদালতের। কিন্তু এ নির্দেশনা মানছে না কেউ। সিলগালা করে দেয়া এসব কারখানা সচল রয়েছে। কারখানাগুলোর প্রধান ফটক বন্ধ রয়েছে। কিন্তু বিকল্প গেট বানিয়ে ভেতরে কাজ করছেন শ্রমিকরা। নেয়া হয়েছে বিদ্যুৎ ও গ্যাস সংযোগও।

সর্বশেষ গত ৩০ নভেম্বর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা অমিত দেবনাথ আগানগর এলাকার ৬টি ওয়াশিং কারখানার বিদ্যুৎ ও গ্যাস সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে সিলগালা করে দেন। এমনকি কারখানাগুলো বন্ধ করা হয়েছে মর্মে স্টিকার লাগিয়ে দেয়া হয়।

আগানগর কেচিশাহ ডক এলাকায় পাশাপাশি অবস্থিত ৩টি ওয়াশিং কারখানা। এগুলো হল- গ্লোবাল ওয়াশিং, আধুনিক ওয়াশিং ও কালারটাচ ওয়াশিং। অভিযান চালিয়ে কারখানাগুলো বারবার বন্ধ করা হলেও তা মানছেন না মালিকরা।

আগানগর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পাশে রয়েছে ৬টি ওয়াশিং কারখানা। ৩০ নভেম্বরের অভিযানে এগুলো বন্ধ করা হলেও বুধবার কারখানাগুলো সচল পাওয়া যায়।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে একটি কারখানার মালিক মাজেদুল ইসলাম বলেন, সবাই চালাচ্ছে তাই আমিও চালাচ্ছি।

জানা যায়, গত ২৭ অক্টোবর আগানগর ও কালীগঞ্জ এলাকার ২২টি কারখানা বন্ধ করে দেয় পরিবেশ অধিদফতর। এরপর ২৬ নভেম্বর উপজেলা প্রশাসন ও পরিবেশ অধিদফতর যৌথ অভিযান চালিয়ে আরও ১২টি কারখানা বন্ধ করে। এর আগে ২০১৭ সালে তৎকালীন বন ও পরিবেশ উপমন্ত্রী আবদুল্লাহ আল জ্যাকব ও ২০১৫ সালে পরিবেশ অধিদফতরের পরিচালকের নেতৃত্বে বেশ কিছু কারখানা বন্ধ করা হয়। আর্থিক জরিমানাও করা হয় কয়েকজনকে। কিন্তু কিছুদিন না যেতেই বন্ধ করে দেয়া এসব কারখানা সচল হয়ে যায়।

বুড়িগঙ্গা তীরের আগানগর এলাকার বাসিন্দা মো. সালাউদ্দিন বলেন, ‘১৫ বছর আগেও বুড়িগঙ্গার পানি ফকফকা আছিল। এখন কালা কুচকুচা। ওয়াশিং কারখানার কেমিক্যাল মিলাইন্না (মেশানো) পানি বুড়িগঙ্গায় পইড়া নদীর পানি এমন হইছে।’

কেরানীগঞ্জ ওয়াশিং মালিক সমিতির তথ্যমতে, সমিতির তালিকাভুক্ত ওয়াশিং কারখানা রয়েছে ৮১টি। তবে সমিতির বাইরেও অনেক কারখানা রয়েছে। এসব কারখানার মধ্যে একটিরও ইটিপি নেই। আগানগর, চুনকুটিয়া, শুভাঢ্যা, চরকালিগঞ্জ, খেজুরবাগ, কালীগঞ্জ, হাসনাবাদ, দোলেশ্বর এলাকায় এসব কারখানার অবস্থান।

কেরানীগঞ্জ ওয়াশিং মালিক সমিতির সভাপতি কাজী আবু সোহেল বলেন, সিলগালা বা বন্ধ করা কারখানা কীভাবে চালু করেছেন সেটা ওই কারখানার মালিকই ভালো বলতে পারবেন। উচ্চ আদালতের নির্দেশনা রয়েছে ইটিপি ছাড়া কারখানা বন্ধের- এটা আমরা জানি। এজন্য কেরানীগঞ্জের রুহিতপুর ইউনিয়নে ৪০ বিঘার মতো জমি কেনা হয়েছে। যেখানে ওয়াশিং ডাই কারখানাগুলো সরিয়ে নেয়া হবে। সেখানে সেন্ট্রাল ইটিপির ব্যবস্থা করা হবে। তবে এজন্য সময়ের প্রয়োজন।

কেরানীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা অমিত দেবনাথ বলেন, উচ্চ আদালতের নির্দেশনা বাস্তবায়নে উপজেলা প্রশাসন ও পরিবেশ অধিদফতর কয়েক দফায় কারখানাগুলোতে অভিযান চালিয়েছি। কিছু কারখানাকে জরিমানা করা হয়েছে। কিছু কারখানা বন্ধ করে দেয়া হয়েছে।

বন্ধ কারখানা কীভাবে চালু হল? এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, খোঁজখবর নিয়ে বলতে পারব। যদি এমনটা হয়ে থাকে তাহলে তাদের বিরুদ্ধে এবার আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে। সূত্র: যুগান্তর