বাংলাদেশ মিয়ানমার: সীমান্তে সৈন্য সমাগম করছে বাংলাদেশ, অভিযোগ মিয়ানমারের

সম্প্রতি মিয়ানমার সীমান্তে বাংলাদেশ সৈন্য সমাবেশ করছে বলে মিয়ানমারের সামরিক কর্তৃপক্ষ অভিযোগ করেছে। দেশটির ইংরেজি পত্রিকা দ্য ইরাওয়াদি’তে সোমবার প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে এমন কথা বলা হয়েছে।

দুই সপ্তাহ আগে একই অভিযোগ করেছিল বাংলাদেশ।

এখন বাংলাদেশের সৈন্য সমাবেশের যে অভিযোগ মিয়ানমার করছে তা অস্বীকার করেছেন বাংলাদেশের কর্মকর্তারা।

কী অভিযোগ করা হয়েছে?

দ্য ইরাওয়াদি’তে সোমবার প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, মিয়ানমার সেনাবাহিনীর মুখপাত্র মেজর জেনারেল জ মিন টুন অভিযোগ করেছেন, সম্প্রতি ”দ্বিপাক্ষিক সামরিক সম্পর্কে ব্যাঘাত না ঘটিয়ে” দেশটির নিরাপত্তা বাহিনী সীমান্তে টহল বাড়িয়েছিল।

“কিন্তু এখন বাংলাদেশ সীমান্তে সৈন্য সমাবেশ করছে,” অভিযোগ মেজর জেনারেল জ মিন টুন-এর।

দেশটির নিরাপত্তা বাহিনীর কয়েকটি বেনামী সূত্রকে উদ্ধৃত করে রিপোর্টে বলা হয়েছে, ২৫শে সেপ্টেম্বর থেকে বাংলাদেশের ১০ নম্বর ডিভিশনকে সৈন্য সংখ্যা বৃদ্ধি করতে দেখা গেছে।

এই সঙ্গে সেখানে ১৫৫মিমি রকেট লঞ্চার, কাঁধে নিয়ে চালানো অ্যান্টি-এয়ারক্রাফট মিসাইলস এবং অ্যান্টি-এয়ারক্রাফট মেশিন গানসহ অস্ত্র সমাগম করছে বাংলাদেশ এমন অভিযোগও করা হয়েছে।

শনিবার এক অনলাইন প্রেস কনফারেন্সে মেজর জেনারেল জ মিন টুন বলেছেন, “বুথিডং এবং মংডুতে সম্প্রতি আরাকান আর্মি এবং আরসার তৎপরতা বেড়ে যাওয়ায় সীমান্ত এলাকায় নিরাপত্তা বাড়ানো হয়েছে।”

এখন বাংলাদেশের এই আপত্তি ও অভিযোগ জানানোর বিষয়টি নিয়ে, মিয়ানমারের সামরিক বাহিনীর মুখপাত্র সন্দেহ পোষণ করে বলেছেন, “বাংলাদেশের কোনও ‘হিডেন এজেন্ডা’ বা গোপন এজেন্ডা রয়েছে” বলে তারা মনে করেন।

মিয়ানমারের অভিযোগ নিয়ে বাংলাদেশের কর্মকর্তারা

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এবং সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিজিবির কর্মকর্তারা কেউই সীমান্তে সৈন্য বাড়ানোর কথা বিবিসির কাছে স্বীকার করেননি। এ অভিযোগকে কর্মকর্তারা অসত্য বলে দাবি করেছেন।

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা বলেছেন, দুই সপ্তাহ আগে সীমান্তে মিয়ানমারের সেনাদের গতিবিধি বেড়ে গেছে অভিযোগ করে ঢাকায় মিয়ানমারের রাষ্ট্রদূত অং কিউ মোয়েকে ডেকে উদ্বেগ জানানো হয়েছিল এবং আনুষ্ঠানিক চিঠি দেয়া হয়েছিল।

২০১৭ সালে লক্ষ লক্ষ রোহিঙ্গা বাংলাদেশে পালিয়ে আসে

তার জবাবে মিয়ানমারে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূতকে ডেকে দেশটির কর্তৃপক্ষ জানিয়েছিল যে ওই মহড়া ”হুমকি বা ভয় দেখানোর” জন্য ছিল না।

কিন্তু তখনো বাংলাদেশের কর্মকাণ্ড নিয়ে সন্দেহ পোষণ করার মত কোন বক্তব্য দেয়নি কর্তৃপক্ষ।

মিয়ানমারের ওই খবরটির সঙ্গে প্রকাশিত একটি ছবিতে দেখা যাচ্ছে, মিয়ানমার সীমান্তে বাংলাদেশের সীমান্তরক্ষী বাহিনীর একটি দল একটি রকেট লঞ্চার স্থাপনের চেষ্টা করছেন।

বিজিবির কর্মকর্তারা বলেছেন, ছবিটি বিজিবির কোন একটি প্রশিক্ষণ কালে তোলা, এবং বেশ আগে তোলা।

আসলেই কি বাংলাদেশের সৈন্য সংখ্যা বাড়ানো হয়েছে?

সীমান্তবর্তী টেকনাফ এবং বান্দরবানের ঘুমধুমের স্থানীয় মানুষ, সংবাদকর্মী এবং স্থানীয় জনপ্রতিনিধিসহ অনেকের সঙ্গে কথা বলেছে বিবিসি বাংলা।

তারা বিবিসিকে জানিয়েছেন, মিয়ানমারের সীমান্ত এলাকায় স্বাভাবিকের তুলনায় বেশি সেনা টহল লক্ষ্য করার পর থেকেই মূলত ওইসব এলাকায় বিজিবি টহল বাড়ানো হয়েছে।

এমন সব জায়গায়ও টহলের ব্যবস্থা করা হয়েছে যেখানে কোন টহল চৌকি নেই।

কিন্তু এই বক্তব্যের সত্যতা নিরপেক্ষ কোন সূত্র থেকে যাচাই করতে পারেনি বিবিসি।

এছাড়া অস্ত্র সমাগমের যে অভিযোগ মিয়ানমার তুলেছে, সেটিও সত্য নয় বলে স্থানীয় মানুষেরা জানিয়েছেন।

 

সূত্রঃ বিবিসি