বুধবার , ২ আগস্ট ২০১৭ | ১৫ই জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
  1. অন্যান্য
  2. অপরাধ ও দুর্নীতি
  3. অর্থ ও বাণিজ্য
  4. আইন আদালত
  5. আন্তর্জাতিক
  6. কৃষি
  7. খেলা
  8. চাকরীর খবর
  9. ছবিঘর
  10. জাতীয়
  11. তথ্যপ্রযুক্তি
  12. দুর্ঘটনা
  13. ধর্ম
  14. নারী
  15. নির্বাচিত খবর

বাংলাদেশ-ভারতীয় গোয়েন্দাদের ‘মাথাব্যথা’ জেএমবির আমির সালাউদ্দিন

Paris
আগস্ট ২, ২০১৭ ১১:১৮ পূর্বাহ্ণ

সিল্কসিটিনিউজ ডেস্ক: বাংলাদেশ ও ভারতে ধারাবাহিক জঙ্গিবিরোধী অভিযানে অনেক শীর্ষ জঙ্গি ধরা পড়েছে। তবে এখনও দুই দেশের গোয়েন্দাদের মাথাব্যথার কারণ হয়ে রয়ে গেছে সালাউদ্দিন ওরফে সালেহীন। ২০১৪ সালে ময়মনসিংহের ত্রিশালে প্রিজন ভ্যান থেকে পালিয়ে যাওয়ার পর থেকে সে জামআতুল মুজাহিদীন বাংলাদেশের (জেএমবি) আমিরের দায়িত্ব পালন করছে।

বাংলাদেশের গোয়েন্দাদের ধারণা, সালাউদ্দিন ভারতে কোথাও লুকিয়ে রয়েছে। সেখান থেকেই সে জেএমবিকে সংগঠিত করার চেষ্টা করছে। সম্প্রতি ঢাকায় আসা ভারতের স্পেশাল টাস্কফোর্স (এসটিএফ) ও জাতীয় তদন্ত সংস্থার (এনআইএ) কর্মকর্তাদের সঙ্গে এই জঙ্গির অবস্থান এবং কার্যক্রম নিয়ে আলোচনা হয়েছে ঢাকার কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিট অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম (সিটিটিসি) ইউনিটের কর্মকর্তারা।

সিটিটিসির একজন কর্মকর্তা জানান, ভারতের গোয়েন্দারাও সালাউদ্দিনকে নিয়ে কিছুটা ‘বিচলিত’। তাকে ধরতে না পারলে ফের জেএমবির তৎপরতা বাড়তে পারে।

সালাউদ্দিন ওরফে সালেহীনের দৈহিক বর্ণনা দিয়ে গোয়েন্দাদের বিজ্ঞাপনপ্রতিবেশী দুই দেশের গোয়েন্দাদের আশঙ্কার বিষয়টির আভাস পাওয়া গেছে সালাউদ্দিনের সাক্ষাৎকারে। ১৩ জুলাই ‘সাহম আল-হিন্দ’ নামে জঙ্গিদের একটি চ্যানেলে তিনি জানান, তিনটি কর্মপদ্ধতি দাওয়াত বা উদ্বুদ্ধকরণ, প্রশিক্ষণ ও কিতাল বা সশস্ত্র যুদ্ধ নিয়ে জেএমবি আবার সংগঠিত হচ্ছে। এর মানে সদস্য সংগ্রহের পাশাপাশি জেএমবির সদস্যরা ফের কিতাল বা সশস্ত্র যুদ্ধে নামতে যাচ্ছে।

সিটিটিসির উপ-কমিশনার মহিবুল ইসলাম খান বলেন, ‘সালাউদ্দিন তো অবশ্যই আমাদের টার্গেট। ২০১৪ সালে প্রিজন ভ্যান থেকে পালিয়ে যাওয়ার পর আত্মগোপনে থেকে সে সংগঠিত হওয়ার চেষ্টা করছে। আমাদের কাছে যে তথ্য রয়েছে তা অনুযায়ী সে ভারতে আছে। বিষয়টি সম্প্রতি এসটিএফ ও এনআইএ-কেও জানানো হয়েছে। তারাও আমাদের মতো তাকে খুঁজছে।

সালাউদ্দিন জেএমবির অনেক পুরনো নেতা। সে চুপচাপ আত্মগোপনে থাকবে না। সে জেএমবিকে সংগঠিত করার চেষ্টা করবে এটাই স্বাভাবিক। তবে পুরনো জেএমবি সংগঠিত হতে সময় লাগবে। কারণ তাদের বেশিরভাগ নেতাকর্মী কারাবন্দি। শীর্ষ কিছু নেতার অনেকের ফাঁসি হয়েছে।’

সালাউদ্দিনের সাক্ষাতকারের বিজ্ঞাপন

ভারতে আত্মগোপনে থেকে বাংলাদেশে জেএমবি তাদের কার্যক্রম সংগঠিত করে। এক সময় ভারতেও সমর্থক ও অনুসারী তৈরি হয়। সেখানে ছোট পরিসরে সাংগঠনিক কার্যক্রমও শুরু করে। তবে এ নিয়ে ভারতীয় গোয়েন্দাদের কোনও ধারণাই ছিল না। ২০১৪ সালের ২ অক্টোবর পশ্চিমবঙ্গের বর্ধমানের খাগড়াগড়ে বিস্ফোরণের পর নড়েচড়ে বসে তারা।

ওই বছরের ২৩ ফেব্রুয়ারি ময়মনসিংহের ত্রিশালে প্রিজন ভ্যানে হামলা চালিয়ে তিন জঙ্গিকে ছিনিয়ে নেওয়া হয়। যার একজন পরে পুলিশের গুলিতে নিহত হয়। বাকি দুজনের একজন, এই সালাউদ্দিন। তার সঙ্গে পুরনো জেএমবির আরেক শীর্ষ নেতা জাহিদুল ইসলাম ওরফে সুমন ওরফে হারুন ওরফে কামরুলও রয়েছে। বোমা তৈরিতে বিশেষ পারদর্শী হওয়ায় যাকে বোমা মিজান বলেই চেনে সবাই। মিজানসহ সালাউদ্দিনকে ধরতে বাংলাদেশ পুলিশে ২০১৪ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি ৫ লাখ টাকা করে পুরস্কারও ঘোষণা করে।

সিটিটিসির একজন কর্মকর্তা বলেন, ‘জেএমবির শীর্ষ নেতাদের প্রায় সবাই কারাগারে এবং অনেকের ফাঁসির দণ্ড কার্যকর হয়েছে। বাইরে অল্প যে কয়েকজন রয়েছে তাদের মধ্যে অন্যতম এই সালাউদ্দিন, যাকে সোহেল, সজীব এবং তওহীদ নামেও ডাকা হয়। জেএমবির প্রতিষ্ঠাকাল থেকেই সে এই সংগঠনের সঙ্গে সম্পৃক্ত। প্রতিষ্ঠাতা আমির আব্দুর রহমানের সঙ্গে দীর্ঘ সময় কাজ করেছে সে। ফলে তার বিষয়ে কিছুটা ‘ভয়’ থেকেই যায়। তার মোটিভেশন ক্ষমতা অনেক বেশি। খুব অল্প সময়ে সে লোকজনকে মোটিভেটেড করে নিজের দলে ভেড়াতে পারে। অনেক বেশি ডেডিকেটেডও।’

সিটিটিসির কর্মকর্তারা বলছেন,২০১৪ সালে খাগড়াগড়ে যে বোমা বিস্ফোরণ হয়েছে সেসব বোমা তৈরি হচ্ছিল বাংলাদেশে হামলার জন্য। তদন্তে ভারতীয় গোয়েন্দারা এ তথ্য জানতে পারেন।

যে কর্মপরিকল্পনায় এগুচ্ছে: সাহম আল হিন্দ-এ প্রকাশ হওয়া সাক্ষাৎকারে জেএমবি কর্মনীতি সম্পর্কে সালাউদ্দিন বলেছেন, ‘…দীন কায়েমের ক্ষেত্রে আমরা কিতালের আকিদা পোষণ করি। …আমাদের লক্ষ্য হলো-আল্লাহর জমিনে আল্লাহর দেওয়া পদ্ধতি কিতাল তথা সশস্ত্র যুদ্ধের মাধ্যমে শিরককে উৎখাত করে তাওহিদ তথা আল্লাহর আইন প্রতিষ্ঠা করে জান্নাত প্রাপ্তি। … আমরা তিন দফা কর্মসূচি নিয়ে কাজ করছি। তা হলো দাওয়াত তথা উদ্বুদ্ধকরণ, প্রশিক্ষণ ও কিতাল তথা সশস্ত্র যুদ্ধ। …আমাদের প্রধান টার্গেট হচ্ছে আইম্মাতু কুফর (কুফফারদের শক্তির কেন্দ্র) যাদের মাথা ভেঙে দিলে অন্য অংশ এমনিতেই ভেঙে পড়বে।’

তার ভাষ্যমতে, ‘আমরা কিতালি কাজগুলো মাসালিহ (উপকার) এবং মাফাসিহ (ক্ষতি) এর মধ্যে ভারসাম্য রেখে সম্পাদন করা জরুরি মনে করি। যে মুজাহিদীনরা দীন প্রতিষ্ঠার কাজ করছেন সেটা পৃথিবীর যে কোনও প্রান্তেই হোক তারা আমাদের থেকে আমরা তাদের থেকে। কার্যকর ও সুদৃঢ় ফল বয়ে আনে এমন টার্গেটকে প্রধান্য দিয়ে কর্মসূচি হাতে নেওয়াই আমাদের কিতালি কর্ম পরিকল্পনা।’

গাজওয়াতুল হিন্দ সম্পর্কিত এক প্রশ্নের জবাবে সালাউদ্দিন বলে, ‘জিহাদ গজওয়াতুল হিন্দে আমরা আল্লাহর কালিমাকে সুউচ্চে বুলন্দ করতে তিন দফা কর্মসূচি নিয়ে একযোগে কাজ চালিয়ে যাচ্ছি। জাতীয়তাবাদের ভিত্তিতে কোনও ভূখণ্ডের সীমানা বর্ধিতকরণ বা কোনও তাগুতি গোয়েন্দা সংস্থার পরিকল্পনা বাস্তবায়নের নামে যে জিহাদ, এসব থেকে আমরা আমাদের মুক্ত ঘোষণা করছি। যেভাবে ইরাক, সিরিয়া, আফগানিস্তান, ইয়েমেন ও উত্তর আফ্রিকার দেশগুলোতে মুজাহিদরা হিজরতের মাধ্যমে জিহাদরত, ঠিক সেভাবে হিন্দুস্থানেও (ভারত) খিলাফাহ প্রতিষ্ঠায় আমরা পরিকল্পনা নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছি।’

সিটিটিসির অতিরিক্ত উপ-কমিশনার মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম বলেন, ‘আমরা সালাউদ্দিনকে খুঁজছি। তাকে ও তার আরেক সহযোগী বোমা মিজানকে ধরতে নানাভাবে চেষ্টা করে যাচ্ছি।’

সালাউদ্দিন ওরফে সালেহীনকে এই সালাউদ্দিন: ১৯৮০ সালের ২৫ জানুয়ারি নারায়ণগঞ্জের বন্দর থানাধীন মাধবপাশায় জন্ম নেওয়া সালাউদ্দিনও আগে জামায়াতে ইসলামের ছাত্র সংগঠন শিবিরের সমর্থক হিসেবে কাজ করেছে। ১৯৯৭ সালে দশম শ্রেণিতে পড়ার সময় শিবিরের সাথী নির্বাচিত হয়। ওই বছরই এসএসসি পাসের পর সিলেট পলিটেকনিক্যাল ইনস্টিটিউটে ভর্তি হয়। পরে ঢাকা পলিটেকনিক্যাল স্থানান্তর হয়ে ২০০১ সালে ডিপ্লোমা ইন সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং পাশ করে।

২০০৬ সালের ২৬ এপ্রিল চট্টগ্রামের পাহাড়তলী এলাকা থেকে র‌্যাবের হাতে গ্রেফতার হওয়া সালাউদ্দিনকে জিজ্ঞাসাবাদের একটি নথি থেকে জানা যায়, ১৯৯৮ সালে মেজ ভাই আব্দুল মতিনের মাধ্যমে যাত্রাবাড়ীর মোহাম্মদীয় আরাবিয়া মাদ্রাসার এক অনুষ্ঠানে যোগ দিয়ে নাসরুল্লাহ ও ছানাউল্লাহ নামে দুই ব্যক্তির সঙ্গে তার পরিচয় হয়। তাদের মাধ্যমেই পরিচয় হয় জেএমবির প্রতিষ্ঠাকালীন আমির শায়খ আব্দুর রহমানের সঙ্গে। ওই বছরই সে শায়খ রহমানের সঙ্গে জঙ্গি কার্যক্রম বিস্তৃত করতে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে যায়। ১৯৯৯ সালের শেষের দিকে বাসাবোর একটি অফিসে বসে জেএমবির যে প্রথম সুরা কমিটি করা হয়, রাকিব হাসান ওরফে হাফেজ মাহমুদ, শাহেদ বিন হাফিজ, রানার সঙ্গে তাকেও সুরা কমিটির সদস্য করা হয়। ২০০১ সালে আনুষ্ঠানিকভাবে যাত্রা শুরু করা জেএমবির গুরুত্বপূর্ণ নেতা হিসেবেই কাজ করে আসছিল এই সালাউদ্দিন, যাকে ২০০৭ সালে একটি হত্যা মামলা ও ময়মনসিংহ আদালতে বোমা হামলার ঘটনায় মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়।

 

সূত্র: বাংলাট্রিবিউন

সর্বশেষ - জাতীয়