বাংলাদেশ জিম্বাবুয়ে একমাত্র টেস্ট আজ শুরু

সিল্কসিটিনিউজ ডেস্ক:

প্রাক-টেস্ট সংবাদ সম্মেলন তখন শেষ। অধিনায়ক মুমিনুল হকের কথার আগেই শেষ কোচ রাসেল ডমিঙ্গোর প্রশ্ন-উত্তর পর্বও। সবার প্রশ্ন থামার পর কিছুটা সময় নিলেন কোচ। বললেন, ‘বাংলাদেশে ক্রিকেট ক্ষ্যাপাটে। দর্শক, সংবাদমাধ্যম, সবার মনোযোগ এখানে অবিশ্বাস্য। সবাইকে বুঝতে হবে যে, কোচিং করাচ্ছি অনভিজ্ঞ একটি দলকে। সংবাদমাধ্যমকে ধৈর্য ধরতে হবে। নির্বাচকদেরও ক্রিকেটারদের ওপর ভরসা রাখতে হবে।’

ডমিঙ্গো বাংলাদেশের টেস্ট ক্রিকেটের বর্তমান অবস্থা তুলে ধরেন। টেস্ট খেলা ভুলতে বসেছে বাংলাদেশ। সবশেষ ছয় টেস্টে হার। পাঁচটাই ইনিংস ব্যবধানে। এর মধ্যে রয়েছে দেশের মাটিতে আফগানিস্তানের বিপক্ষে বিধ্বস্ত হওয়ার ঘটনা। দুঃসময় থেকে বের হওয়ার জন্য জিম্বাবুয়ের চেয়ে সহজ প্রতিপক্ষ আর কে হতে পারে।

আজ মিরপুর শেরেবাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামে শুরু দু’দলের একমাত্র টেস্ট। জিম্বাবুয়ের ২০১৮ সালে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে দুই টেস্টে হার দিয়ে শুরু। এরপর গত বছর দেশের মাটিতে আফগানিস্তানের বিপক্ষে ম্যাচ বাঁচাতে পারেনি স্বাগতিকরা। ভারত সফরে দুই ম্যাচের টেস্টে নাস্তানাবুদ হওয়ার পর পাকিস্তানেও প্রথম টেস্টে ইনিংস ব্যবধানে হার। টেস্ট চ্যাম্পিয়শিপের নতুন যুগে তিন ম্যাচ খেলে সবগুলোতেই ইনিংস ব্যবধানে হেরেছে মুমিনুলের দল।

জিম্বাবুয়ের বিপক্ষেও সহজে জয়ের চিন্তা করতে পারছে না স্বাগতিকরা। সবশেষ এই জিম্বাবুয়ে বাংলাদেশ সফরে এসে দুই ম্যাচের সিরিজে প্রথমটি জিতেছিল। পরে বাংলাদেশ সমতায় ফেরে। এবার সফরকারীরা দেশের মাটিতে শ্রীলংকার বিপক্ষে দুটি টেস্টে ভালো খেলে বাংলাদেশে এসেছে। স্পিনের বিপক্ষে ভালো খেলার অভিজ্ঞতা হয়েছে তাদের। তাইজুল-মিরাজকে সামলাতে নিজেদের পুরোপুরি প্রস্তুত মনে করছেন, ক্রেগ আরভিনরা।

জিম্বাবুয়ে অধিনায়ক বলেন, ‘ঘরের মাটিতে খেলতে সবাই চাপ অনুভব করে। বাংলাদেশের সম্প্রতি টেস্ট ফর্মও ভালো না। তবে আমরা আমাদের শক্তি ও পরিকল্পনাতেই ফোকাস রাখছি।’

১৬ সদস্যের বাংলাদেশ দলে ছিলেন পাঁচ পেসার। এর মধ্যে হাসান মাহমুদকে বিসিএলে খেলতে ছেড়ে দেয়া হয়েছে। কোচ জানিয়েছেন, মোস্তাফিজ দলে রয়েছেন। এখন ইবাদত হোসেন, আবু জায়েদ ও তাসকিন আহমেদদের মধ্য থেকে দু’একজনকে নিয়েই একাদশ সাজাতে পারে বাংলাদেশ। উইকেট যে স্পিনারদের জন্য সহায়ক হবে সেটা অনুমান করাই যায়। তাইজুল ইসলামের সঙ্গে মেহেদী হাসান মিরাজ ও নাঈম হাসানকেও একাদশে রাখা হতে পারে।

দেশের বাইরে খেলার সময় তিন পেসার নিয়েই মাঠে নামতে হয়। তাই ভারসাম্য রাখার পরিকল্পনা করছেন কোচ। এছাড়া বাংলাদেশ সবশেষ দুই টেস্টে ঘরের মাটিতে খেলেছে অল-স্পিন বোলিং আক্রমণ নিয়ে। তার আগের দুটি টেস্টে পেসাররা থাকলেও সেভাবে বল করার সুযোগ পায়নি। সেই পরিকল্পনা থেকে বের হতে চায় দল।

তবে বাংলাদেশের বড় চিন্তা ব্যাটিং নিয়ে। নিউজিল্যান্ড সফরে তামিম ইকবালের সেঞ্চুরির পর আর কেউ তিন অঙ্কের দেখা পাননি। সিনিয়রদের মধ্যে নিষিদ্ধ সাকিবের সঙ্গে নেই মাহমুদউল্লাহ। তার জায়গায় অভিষেক হতে পারে ইয়াসির আলীর। ব্যাটসম্যানদের রানে ফেরা জরুরি। আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে ফেরার কথা জানান মুমিনুল।

টানা ব্যর্থতায় জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে জয়ের চিন্তা দলকে চাপে ফেলে দিতে পারে। কিন্তু আর পাঁচটা ম্যাচের মতো করেই খেলতে চান অধিনায়ক মুমিনুল।

তিনি বলেন, ‘অবশ্যই আশাবাদী। খেলতে নামি জয়ের জন্যই। তবে শুধু আশাবাদী হলেই তো হবে না, আত্মবিশ্বাস থাকতে হবে। বিশ্বাস করি ভালো ক্রিকেট খেলতে পারব।’

জিম্বাবুয়ে ও বাংলাদেশ এখন পর্যন্ত খেলেছে ১৬ টেস্ট। এর মধ্যে সাতটি জিতেছে জিম্বাবুয়ে, বাংলাদেশের জয় ছয়টিতে। বাকি ম্যাচগুলো ড্র হয়েছে। এর মধ্যে সবশেষ ছয় ম্যাচের পাঁচটি জিতেছে বাংলাদেশ। দু’দলের লড়াইয়ে একমাত্র ব্রেন্ডন টেলর এক হাজারেরও বেশি রান করেছেন। তিনি এবারও রয়েছেন জিম্বাবুয়ে দলে।

জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে বাংলাদেশের হয়ে সর্বোচ্চ রান মুশফিকুর রহিমের (৬৪৩)। দু’দলের লড়াইয়ে বোলিংয়ে সর্বোচ্চ উইকেট শিকারি তাইজুল ইসলাম (৩৫) ও সাকিব আল হাসান (২৬)। সাকিব না থাকায় বড় দায়িত্ব তাইজুলের ওপরই। সব মিলে ব্যর্থতার বৃত্ত থেকে বের হওয়ার জন্য জিম্বাবুয়েই লক্ষ্য বাংলাদেশের।