বাংলাদেশে শহরের ২৮টি নদী মৃতপ্রায়

সিল্কসিটিনিউজ ডেস্ক:

বাংলাদেশের নদী গবেষকেরা বলছেন, দেশটির শহরের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত অন্তত ২৮টি নদ-নদী দখল আর দূষণের শিকার হয়ে এখন মৃতপ্রায়।

এই পটভূমিতেই বাংলাদেশের সরকার ও বেসরকারি সংগঠনগুলো রবিবার পালন করছে বিশ্ব নদী দিবস।

রাজধানী ঢাকার পাশ দিয়ে প্রবাহিত বুড়িগঙ্গা নদীর ব্যাপারে পানি সম্পদ মন্ত্রণালয় বলছে, আগামী দু’তিন বছরের মধ্যে বুড়িগঙ্গাকে বাঁচিয়ে তোলা হবে।

কিন্তু অন্যান্য শহুরে নদীগুলোর রক্ষায় সরকার কী করছে?

ধলেশ্বরী নদী থেকে বের হয়ে টাঙ্গাইল শহর এবং এর বিভিন্ন উপজেলার ওপর দিয়ে ঢাকার কাছে বালু নদীতে এসে পতিত হওয়া লৌহজং নদী একসময় ছিল দারুণ প্রমত্তা।

লেখকদের লেখনীতে পাওয়া যায়, এই নদীতে বড় বড় জাহাজডুবির ঘটনা।

এখনো এর উপর থাকা পুরনো সেতুগুলো দেখলে বোঝা যাবে, সেগুলোকে উঁচু করে তৈরি করা হয়েছিল তলা দিয়ে সহজে জাহাজ চলাচলের সুবিধার্থে।

কিন্তু বহু বছর এই নদীতে জাহাজ চলে না, দু’পাড় দখল হতে হতে নদীর ধারা হয়ে পড়েছে সরু। আশপাশে গড়ে ওঠা শিল্প কারখানার বর্জ্য দুষিত করে তুলেছে তার পানি।

নদীর এখনকার পরিস্থিতি বর্ণনা করতে গিয়ে টাঙ্গাইলের বাসিন্দা এবং স্থানীয় একটি কলেজের শিক্ষক সৈয়দ আবদুর রহমান বলছিলেন, “ছোটবেলায় আমরা দেখেছি, নদীর অনেক গভীরতা ছিল। এখন আর তেমনটি নেই। কচুরিপানায় ভরে গেছে। পানির রং বদলে গেছে। মাছ থাকার কোন পরিবেশ সেখানে নেই।”

নদীর দু’পাশে দখল করে ঘরবাড়ি বানিয়েছে মানুষ জন, তাদের পয়ঃনিষ্কাশন হচ্ছে নদীর পানিতে। কারখানার বর্জ্যও সেখানে পড়ছে, বলেন মি. রহমান।

লৌহজং নদীর আজকের যে পরিণতি সেই একই পরিণতি ঢাকার আশপাশের বুড়িগঙ্গা, শীতলক্ষ্যা, তুরাগ, বালু প্রভৃতি নদ-নদী যে আগেই বরণ করেছে সেকথা আজ আর নতুন করে বলার প্রয়োজন রাখে না।

কিন্তু রিভারাইন পিপল নামে একটি সংগঠন জানাচ্ছে, বাংলাদেশের শহর-কেন্দ্রিক যেসব নদনদী রয়েছে, তার মধ্যে ২৮টিরই একই পরিণতি হয়ে গেছে কিংবা হবার পথে রয়েছে।

রিভারাইন পিপলের মহাসচিব ও নদী গবেষক শেখ রোকন বলছেন, শহর-ভিত্তিক একটি মোটে নদী আছে, যেটি দখল ও দূষণের শিকার নয়।

এটি হচ্ছে বরিশালের পাশ দিয়ে বয়ে চলা কীর্তনখোলা।

এই নদীটি এখনো ভাল থাকবার কারণ হিসেবে মি. রোকন বলছেন, “শহরটিতে শিল্পায়ন কম, নদীতে পানিপ্রবাহও বেশী।”

“যে নদীতে প্রবাহ বেশী থাকে সেখান থেকে দখলদাররা দূরে থাকে,” বলছিলেন মি. রোকন।

কিন্তু দখল ও দূষণের শিকার ২৮টি নদনদীকে বাঁচাতে সরকার কি করছে?

পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের সচিব ড. জাফর আহমেদ খান জানাচ্ছেন, তারা ঢাকার কাছে বুড়িগঙ্গাকে পুনরুদ্ধার করার ব্যাপক উদ্যোগ নিয়েছেন।

দূষণ থামাতে ঢাকার ট্যানারি সরানোর উদ্যোগ নিয়েছেন, ওয়াসা ও ঢাকা সিটি কর্পোরেশনে বসানো হচ্ছে ‘এফ্লুয়েন্ট ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্ট’ বা ইটিপি।

এগুলো হয়ে গেলেই পুংলি নদী থেকে পানি এনে বুড়িগঙ্গার পানিকে পুন-স্থাপন করা হবে বলেও উল্লেখ করছেন ড. খান।

এটা করতে ২ থেকে ৩ বছর সময় লাগবে বলে তিনি উল্লেখ করেন।

অন্যান্য নদ-নদীগুলোকে পর্যায়ক্রমে দখল ও দূষণমুক্ত করা হবে জানিয়ে ড. খান বলেন, “দখলদার রাজনৈতিকভাবে যত শক্তিশালীই হোক না কেন, আমাদের সরকারের কাছে কোনভাবেই পার পাবে না।”

এদিকে, রিভারাইন পিপলের শেখ রোকন বলছেন, বুড়িগঙ্গা নদীর সংস্কার কর্মসূচির অংশ হিসেবে পুংলি নদী থেকে পানি আনাটা হবে ভারতের আন্তঃনদী সংযোগ প্রকল্পকে নৈতিক বৈধতা দেবার শামিল।

অথচ বাংলাদেশের সরকার ভারতের এই উদ্যোগের ঘোর বিরোধী।

ভারত যদি এই প্রকল্প বাস্তবায়নের মাধ্যমে তার দেশের নদ-নদীগুলো থেকে পানি দেশটির খরা-পীড়িত অঞ্চলের দিকে সরিয়ে নিয়ে যায়, তার প্রভাবে বাংলাদেশের নদনদীগুলো জলশূন্য হয়ে পড়বে বলে আশঙ্কা রয়েছে।

সূত্র: বিবিসি বাংলা