সিল্কসিটিনিউজ ডেস্ক:
বাংলাদেশকে সাড়ে চার বিলিয়ন ডলার ঋণ দেওয়ার প্রস্তাবটি অনুমোদন দিয়েছে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) নির্বাহী পর্ষদ।
যুক্তরাষ্ট্রের রাজধানী ওয়াশিংটন ডিসিতে সোমবার রাতে আইএমএফ এর নির্বাহী বোর্ডের সভা বসে। সেখানেই বাংলাদেশের ঋণ প্রস্তাবটি অনুমোদন পেয়েছে।
এর আগে গত ১৬ জানুয়ারি আইএমএফের উপ ব্যবস্থাপনা পরিচালক অ্যান্তইনেত মনসিও সায়েহ তার ঢাকা সফরের সময় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাত করেন। সেদিন তাদের মধ্যে ঋণের বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হয়।
বাংলাদেশকে সাড়ে ৪ বিলিয়ন ডলার ঋণ দিতে গত নভেম্বরে ঢাকায় কর্মকর্তা পর্যায়ের বৈঠকে প্রাথমিক সমঝোতায় পৌঁছায় আইএমএফ। সেই ঋণচুক্তির শর্তসহ খুঁটিনাটি চূড়ান্ত করার প্রক্রিয়ার মধ্যেই বাংলাদেশ সফর করেন আইএমএফ এর উপ ব্যবস্থাপনা পরিচালক।
আইএমএফের উপব্যবস্থাপনা পরিচালক অ্যান্তইনেত মনসিও সায়েহ তাঁর ঢাকা সফরের সময় ১৬ জানুয়ারি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করেন। সেদিন তাঁদের মধ্যে ঋণের বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হয়। বাংলাদেশকে সাড়ে চার বিলিয়ন ডলার ঋণ দিতে গত নভেম্বরে ঢাকায় কর্মকর্তা পর্যায়ের বৈঠকে প্রাথমিক সমঝোতায় পৌঁছে আইএমএফ। সেই ঋণচুক্তির শর্তসহ খুঁটিনাটি চূড়ান্ত করার প্রক্রিয়ার মধ্যেই বাংলাদেশ সফর করেন আইএমএফের উপব্যবস্থাপনা পরিচালক। সে সময় এক বিবৃতিতে তিনি বলেন, ঢাকার আলোচনায় এই ঋণ কর্মসূচির মূল বিষয়গুলোতে মনোযোগ দিয়েছেন তাঁরা।
তিনি বলেন, ‘জলবায়ু পরিবর্তনের দীর্ঘমেয়াদি চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় বাংলাদেশের পরিকল্পনা নিয়েও আমরা আলোচনা করেছি, যা সামষ্টিক অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতার জন্য হুমকি হয়ে দাঁড়াতে পারে। জলবায়ু বিনিয়োগে বাংলাদেশের চাহিদা পূরণে সাশ্রয়ী ও দীর্ঘমেয়াদি অর্থায়নের পাশাপাশি আমদানিনির্ভর জলবায়ু বিনিয়োগের ক্ষেত্রে রিজার্ভের ওপর চাপ কমানোও আইএমএফের আরএসএফের (রেজিলিয়েন্স অ্যান্ড সাসটেইনেবিলিটি ফ্যাসিলিটি) লক্ষ্য।’
কভিড মহামারির ধাক্কা সামলে বাংলাদেশের অর্থনীতি ভালোভাবে ঘুরে দাঁড়াতে শুরু করলেও ইউক্রেন যুদ্ধের জেরে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ বড় ধরনের চাপে পড়েছে; ডলারের বিপরীতে মান হারিয়ে চলছে টাকা, মূল্যস্ফীতিও পৌঁছেছে উদ্বেগজনক পর্যায়ে। রিজার্ভ ধরে রাখতে আমদানিতে লাগাম টানায় অর্থনীতি সংকুচিত হয়েছে; জ্বালানিসংকটের মুখে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে উৎপাদন। পাশাপাশি জলবায়ু পরিবর্তনের মতো দীর্ঘমেয়াদি ঝুঁকিও বাংলাদেশের সামনে রয়েছে।
এমন পরিস্থিতিতে গত জুলাই মাসে আইএমএফের কাছে ঋণ চায় বাংলাদেশ। আইএমএফের এশিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের প্রধান রাহুল আনন্দের নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধিদল গত ২৬ অক্টোবর ঢাকায় আসে। দুই সপ্তাহ সরকারে বিভিন্ন দপ্তর, নিয়ন্ত্রক সংস্থা এবং অংশীজনদের সঙ্গে ধারাবাহিক বৈঠকের পর ঋণের বিষয়ে প্রাথমিক সমঝোতার কথা জানানো হয় সরকারের তরফ থেকে।
অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল গত ৯ নভেম্বর এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, আইএমএফ সাড়ে চার বিলিয়ন ডলার ঋণ দিতে রাজি। এই অর্থ বাংলাদেশ পাবে সাত কিস্তিতে। সব ঠিক থাকলে ফেব্রুয়ারিতেই প্রথম কিস্তির ৩৫২.৩৫ মিলিয়ন ডলার তারা ছাড়তে পারে।
বাংলাদেশ যে এবারই প্রথম আইএমএফ থেকে ঋণ নিচ্ছে তা নয়। ছোট-বড় আকার মিলিয়ে সংস্থাটি থেকে মোট ১০ বার ঋণ নিয়েছে আগে। প্রথমবার নেয় ১৯৭৪ সালে। এরপর ১৯৮০-৯০ সময়ে ঋণ নেওয়া হয় পাঁচবার। ১৯৯০ সালে নেওয়া ঋণের বিপরীতে আইএমএফের শর্তের মধ্যে অন্যতম ছিল মূল্য সংযোজন কর (ভ্যাট) চালু করা। তৎকালীন অর্থমন্ত্রী এম সাইফুর রহমান তা সফলভাবেই কার্যকর করেছিলেন। বাণিজ্য উদারীকরণসহ ব্যাংক খাতের সংস্কারের শর্তও ছিল তখন। এর ফলে আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য বাড়তে থাকে এবং আসতে থাকে বিদেশি বিনিয়োগ। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে জনশক্তি রপ্তানিও বাড়তে থাকে।
আইএমএফের ঋণ পাওয়ার অপেক্ষায় আছে সংকটে থাকা দক্ষিণ এশিয়ার আরো দুই দেশ শ্রীলঙ্কা ও পাকিস্তান। বৈশ্বিক সংস্থাটির ঋণ পেতে দেশ দুটি সব শর্ত মেনে নেওয়ারও প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। শ্রীলঙ্কাকে দেওয়া আইএমএফের প্রস্তাবিত ঋণ প্যাকেজের পরিমাণ ২৯০ কোটি মার্কিন ডলার। পরিমাণে এটি ভারতের দেওয়া সহায়তার চেয়ে অনেক কম। তবে আইএমএফের এই ঋণ পাওয়া শ্রীলঙ্কার জন্য প্রতীকীভাবে বেশ গুরুত্বপূর্ণ। কারণ আইএমএফ যদি শ্রীলঙ্কাকে ঋণ দেয়, তাহলে সারা বিশ্বের কাছে বার্তা যাবে যে আইএমএফের ঋণ পাওয়ার যোগ্যতা শ্রীলঙ্কার আছে। তখন বিশ্ব শ্রীলঙ্কার পাশে আরো জোরালোভাবে দাঁড়ানোর এবং সহযোগিতা করার সাহস পাবে।
ডন আরো জানিয়েছে, আইএমএফের চাহিদা অনুযায়ী সরকার বিদ্যুতের ভর্তুকি বন্ধ করে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এ ছাড়া রপ্তানিজাত কাঁচামালের ওপর কর, বিদ্যুতের মূল্যবৃদ্ধি এবং গ্যাসের ওপর শুল্ক আরোপের চিন্তাভাবনাও করা হচ্ছে। আইএমএফের একটি প্রতিনিধিদল আজ মঙ্গলবার পাকিস্তানে আসার কথা। প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফ শর্ত মেনে সেগুলো বাস্তবায়ন করার নিশ্চয়তা দেওয়ার পরই প্রতিনিধি পাঠানোর সিদ্ধান্ত নেয় সংস্থাটি।