বাংলাদেশের রপ্তানি বহুমুখী করতে হবে : আইএফসি

সিল্কসিটিনিউজ ডেস্ক:

বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নতি ও টেকসই প্রবৃদ্ধির জন্য রপ্তানি পণ্যকে বহুমুখী করতে হবে। এটি করা সম্ভব হলে একদিকে এক পণ্যের ওপর নির্ভরতা কমবে, অন্যদিকে মোট রপ্তানি আয় বাড়বে। বাড়বে কর্মসংস্থান। উপকৃত হবে নারীরাও। তবে এ জন্য সরকারের সহায়তা প্রয়োজন বলে জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা। বিশেষ করে নতুন কারখানা স্থাপনে দীর্ঘমেয়াদী তহবিল, কর ছাড়, প্রণোদনাসহ অন্যান্য সহায়তা দিতে হবে। এছাড়া বাজেটে আলাদা করে ১০০ কোটি ডলার রাখার দাবি করেছেন ব্যবসায়ীরা।

বিশ্ব ব্যাংকের সহযোগী সংস্থা ইন্টারন্যাশনাল ফাইন্যান্স করপোরেশন (আইএফসি) ‘বিল্ডিং কম্পিটিটিভনেস সেক্টর ফর এক্সপোর্ট ডাইভারসিফিকেশন : অপরচুনিটিস অ্যান্ড প্রাইরোটিস ফর বাংলাদেশ’ নামের এই প্রতিবেদনটি গতকাল রবিবার ঢাকায় এক অনুষ্ঠানে প্রকাশ করা হয়। পণ্যের বহুমুখীকরণ নিয়ে বিশ্বব্যাংকের সহযোগী সংস্থা আইএফসির গবেষণার ফলাফল উঠে এসেছে প্রতিবেদনে।

পিআরআইয়ের চেয়ারম্যান জায়েদী সাত্তারের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে অন্যদের মধ্যে বক্তব্য দেন প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা ড. মসিউর রহমান, বাণিজ্যসচিব জাফর উদ্দিন, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব ওবায়দুল আজম, বাংলাদেশ প্লাস্টিক গুডস ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি জসিম উদ্দিনসহ অন্যরা।

নতুন যেকোনো ব্যবসা শুরু করতে চাইলে ব্যবসায়ীদের যে দীর্ঘ সময় পথ পাড়ি দিতে হয়, সেই সময় কমিয়ে আনার তাগিদ দিয়েছেন আলোচকরা। পোশাক খাতকে সরকার দিনের পর দিন যেভাবে প্রণোদনা দিয়ে আসছে; রপ্তানিতে সম্ভাবনাময় অন্যান্য খাতকেও সমানভাবে প্রণোদনা দেওয়ার দাবি করেছেন ব্যবসায়ীরা।

সংস্থাটির বেসরকারি খাত বিশেষজ্ঞ হোসনা ফেরদৌস সুমি ও জ্যেষ্ঠ অর্থনীতিবিদ মাসরুর রিয়াজ যৌথভাবে প্রতিবেদনটি তৈরি করেন।

বাংলাদেশ থেকে ১৬০০ ধরনের পণ্য বিশ্বের বিভিন্ন বাজারে রপ্তানি হয় জানিয়ে প্রতিবেদনে বলা হয়, তৈরি পোশাকের ২৯২ ধরনের পণ্য থেকেই মোট রপ্তানি আয়ের ৮৫ ভাগ আসে। বাকি ১৩ শতাধিক পণ্য থেকে আসে মাত্র ১৫ শতাংশ আয়। কিন্তু এই এক হাজার ৩০০ পণ্যের মধ্যে প্রচুর পণ্য রয়েছে, যেগুলোর বাজার অনেক বড় এবং প্রতিনিয়ত চাহিদা বাড়ছে। বিশেষ করে চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য, প্লাস্টিক পণ্য, হালকা প্রকৌশল পণ্য ও ওষুধের বাজার বড় হচ্ছে। এসব খাতে বাংলাদেশের সক্ষমতা অনেক দেশের তুলনায় বেশি। ফলে সরকারের যথাযথ নীতি সহায়তা পেলে এসব খাত থেকে রপ্তানি আয় বাড়ানোর ব্যাপক সম্ভাবনা রয়েছে।

বাংলাদেশের অর্থনীতি গত দুই বছরে ৭ দশমিক ৩ থেকে ৭ দশমিক ৯ শতাংশ পর্যন্ত প্রবৃদ্ধি অর্জন করেছে। এ সময়ে ২০ লাখেরও বেশি মানুষ শ্রমশক্তিতে যোগ হয়েছে বলে জানিয়েছে বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো। তবে অর্থবছরের (২০১৯-২০) প্রথম পাঁচ মাসে রপ্তানি আয় ১৫ দশমিক ৭৭ বিলিয়ন ডলারে আটকে আছে, যা লক্ষ্যমাত্রার তুলনায় ১২ দশমিক ৫৯ ভাগ কম। এটি গত বছরের রপ্তানির তুলনায় ৭ দশমিক ৬ শতাংশ কম বলে জানিয়েছে আইএফসি।

অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা ড. মসিউর রহমান বলেছেন, বাংলাদেশের অর্থনীতি বর্তমানে একটি স্থিতিশীল গতিতে সামনে এগিয়ে যাচ্ছে। সরকার রপ্তানিপণ্য বহুমুখী করতে কার্যকর পদক্ষেপ নিয়েছে। আমরা বিশ্বাস করি এ প্রকাশনা নীতিনির্ধারকদের টেকসই রপ্তানিমুখী প্রবৃদ্ধি অর্জনে তথ্য দিয়ে সহায়তা করবে।

তিনি বলেন, রপ্তানি খাতে করহার, কর আদায় পদ্ধতি ও বিভিন্ন ধরনের প্রণোদনা নিয়ে ব্যাপক পর্যালোচনা হওয়া উচিত। কারণ অনেক ক্ষেত্রে অপ্রয়োজনীয় উদ্যোগ রয়েছে। আবার গবেষণায়ও জোর দিতে হবে, যাতে নতুন পণ্য উদ্ভাবন করা যায়।

পিআরআই চেয়ারম্যান জাইদি সাত্তার বলেন, একটি পণ্যের ওপর নির্ভর করে এগোনো যাবে না। রপ্তানির অন্যান্য খাতকে এগিয়ে নিতে সরকারের নীতিতে পরিবর্তন আনতে হবে। বাণিজ্য সচিব ড, জাফর উদ্দীন বলেন, পণ্য বহুমুখীকরণ জরুরি। তবে বহুমুখীকরণের ধরন পাল্টাতে হবে।

লেদার অ্যান্ড ফুটওয়ার ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি সাইফুল ইসলাম বলেন, ভিয়েতনামের নিজস্ব চামড়া নেই। আবার জনসংখ্যাও কম। কিন্তু ভিয়েতনাম বছরে প্রায় ৩০ বিলিয়ন ডলারের চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য রপ্তানি করে। কিন্তু বাংলাদেশের নিজস্ব চামড়া ও পর্যাপ্ত জনবল থাকা সত্ত্বেও রপ্তানি হচ্ছে এক বিলিয়ন ডলার। প্লাস্টিক দ্রব্য প্রস্তুত ও রপ্তানিকারক সমিতির সভাপতি মো. জসিমউদ্দিন বলেন, প্লাস্টিকের চাহিদা বিশ্বব্যাপী বাড়ছে। এ শিল্পের সম্ভাবনা অনেক। এখানে সরকারের নীতি সহায়তা বাড়াতে হবে। আইএফসির কান্ট্রি ম্যানেজার ওয়েন্ডি ওয়ার্নার বলেন, চামড়া ও পাদুকা, প্লাস্টিক ও হালকা প্রকৌশল শিল্প বাংলাদেশকে আন্তর্জাতিক বাজারে আরও অন্তর্ভুক্তির সুযোগ করে দিতে পারে। এ জন্য সরকারকে নীতিগত কিছু উদ্যোগ নিতে হবে।