বাংলাদেশের জিএসপি সুবিধা নিয়ে ভাবছে যুক্তরাষ্ট্র

সিল্কসিটি নিউজ ডেস্ক :
একই সঙ্গে মেধাস্বত্ত সম্পর্কিত যে আইন রয়েছে সেগুলো বিশ্বমানের করাসহ দ্রুত শ্রম আইন সংশোধন করে বাস্তবায়নের কথা বলেছেন। এছাড়া বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার (ডব্লিউটিও) স্বল্পোন্নত দেশগুলো (এলডিসি) যে সাবমিশন দিয়েছে সেটায় যাতে যুক্তরাষ্ট্র সমর্থন দেয় সে বিষয়ে অনুরোধ জানানো হয়েছে বলেও জানান তিনি।

বুধবার (২০ সেপ্টেম্বর) রাজধানীর একটি হোটেল বাংলাদেশ-যুক্তরাষ্ট্র বাণিজ্য ও বিনিয়োগ সহযোগিতা ফোরাম চুক্তি (টিকফা) সপ্তম কাউন্সিলের বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে এসব কথা বলেন বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের জ্যেষ্ঠ সচিব।

টিকফা বৈঠকে বাংলাদেশের পক্ষে নেতৃত্বও দেন তপন কান্তি ঘোষ। যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য প্রতিনিধির কার্যালয়ের (ইউএসটিআর) দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়াবিষয়ক সহকারী ইউএসটিআর ক্রিস্টোফার উইলসের নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধি দল এতে অংশ নেয়।

জ্যেষ্ঠ সচিব তপন কান্তি ঘোষ বলেন, আজকে আমাদের বাংলাদেশ ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে সপ্তম টিকফা বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে। এখানে অনেকগুলো এজেন্ডা নিয়ে আলোচনা হয়। বিশেষ করে বাংলাদেশ সাইড থেকে আমরা আমেরিকার বাজারে বাংলাদেশি পণ্য যাতে শুল্কমুক্ত সুবিধা পায় সে বিষয়টা জোরালোভাবে তুলে ধরেছি। বিশেষ করে আমরা বলেছি, আমরা আমেরিকা থেকে ১৪ শতাংশ তুলা আনি। এই কটন দিয়ে যে পোশাক তৈরি হবে এবং সেই পোশাক যখন আমেরিকায় রপ্তানি হবে তখন শুল্কমুক্ত প্রবেশাধিকার দিতে হবে। এ বিষয়টি তারা নোট করেছে এবং আমাদের যুক্তিগুলো মনোযোগ সহকারে শুনেছেন। তারা বলেছে এ বিষয়ে কোনো সুবিধা দেয়া যায় কিনা সে বিষয়ে চিন্তা করবেন। উচ্চ পর্যায়ে আলাপ করবেন।

তিনি বলেন, শুল্কমুক্ত যে সুবিধা যুক্তরাষ্ট্রের সে বিষয়ে আমরা বলেছি- পৃথিবীর সব উন্নত ও অধিকাংশ উন্নয়নশীল দেশ বাংলাদেশকে শুল্কমুক্ত সুবিধা দেয়। আমেরিকাই শুধু দিচ্ছে না। আমরা বলেছি গত ১০ বছরে আমরা অনেক উন্নতি করেছি তাদের যে কনসার্ন ছিল লেবার রাইটসসহ অন্যান্য ইস্যুতে। সুতরাং ডব্লিউটিতে যে আলোচনা হচ্ছে সেখানে আমরা আমেরিকার সমর্থন কামনা করছি। তারা বলেছেন জেনেভায় তাদের ও আমাদের যে মিশন আছে সেখানে একসাথে কাজ করছেন। তারা বিষয়টি দেখবেন।

বৈঠকে আমেরিকার সাইড থেকে কি বলা হয়েছে এমন প্রশ্নের জবাবে তপন বলেন, তারা লেবার রাইটস প্রশ্নে আলোচনা করেছেন। যেটা অন্যান্য সময়ও আলোচনা করে থাকেন। আমাদের যে লেবার ইউনিয়ন, ইনস্টিটিউশন প্রসেস সম্পর্কে তারা সন্তুষ্ট। যেটা আগের চেয়ে অনেক উন্নতি করেছে। এর বাইরে মেধাস্বত্ত নিয়ে আলোচনা হয়েছে। যেহেতু বাংলাদেশ উন্নয়নশীল দেশ হয়ে যাচ্ছে। তাই মেধাস্বত্ত সম্পর্কিত যে আইন রয়েছে সেগুলো বিশ্বমানের হতে হবে।

আমরা বলেছি, বাংলাদেশ ইতোমধ্যে অনেকগুলো আইন সংশোধন করেছে। তবে তারা আইনের বাস্তবায়নের ওপর জোর দিয়েছেন। আমরা বলেছি, আইন বাস্তবায়ন একটি চলমান প্রক্রিয়া। আমরা সব সময় চেষ্টা করছি আরও উন্নতি করার। ভবিষ্যতে তাদের টেকনিক্যাল সহযোগিতা প্রয়োজন হতে পারে। সেখানে তারা সম্মত হয়েছেন।

এর বাইরে গ্লোবাল ফাইনালন্সিয়াল কর্পোরেশন (জিএফসি) নামে একটি ফান্ড আছে। যেটা গতবছর ৭ দশমিক ৪ বিলিয়ন ইউএস ডলারের। সেখান থেকে স্বল্প উন্নত ও উন্নয়নশীল দেশগুলোয় সাপোর্ট আকারে দেওয়া হয়। সেই ফান্ডে যাতে বাংলাদেশের নাম অন্তর্ভুক্ত করা হয় সে বিষয়ে আলোচনা করেছি। তারা বলেছে, এখানে যে শর্ত মানতে হয় সেটা আর জিএসপির শর্ত একই। এজন্য তারা আমাদেরকে দ্রুত শ্রম আইন সংশোধনের কথা বলেছে। এসব বিষয়ে উন্নতি করতে পারলে তারা আমাদেরকে জিএফসি ফান্ডের সঙ্গে অন্তর্ভুক্ত করবে।

জিএসপি ইস্যুতে কোনো কিছু আলোচনা হয়েছে কিনা জানতে চাইলে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের জ্যেষ্ঠ সচিব সচিব বলেন, জিএসপি ইস্যুতে কারা রিভাইভ করার চিন্তা করেছেন এবং সেখানে বাংলাদেশকে নেওয়া যায় কিনা সেটা তারা চিন্তা করছেন। এমনও হতে পারে কোন কোন তৈরি পোশাক যেটা আমেরিকায় সেনসিটিভ নেই সে সব বিষয় নিয়ে নতুন একটি উপায় বের করবেন। যাতে নতুন যে জিএসপি রেজুলেশন হবে সেখানে বাংলাদেশকে অন্তর্ভুক্ত করা যায়। এ ধরনের কথা তারা বলেছেন।

তারা কোনো আশ্বাস দিয়েছে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, আশ্বাস বলতে এটাই তারা একটা উপায় বের করছেন। এখন তো জিএসপি নাই। যখন জিএসপি আসবে তখন যে রেজুলেশন করতে চাইবে সেখানে বাংলাদেশকে কীভাবে অন্তর্ভুক্ত করা যায়। এখানে কয়েকটি অপশন রয়েছে। তারা চিন্তা করছে কোন অপশন দিয়ে বাংলাদেশকে তার মধ্যে রাখা যায়।

জিএসপি বিষয়ে কোন কোন জায়গায় জোর দিতে বলেছেন এমন প্রশ্নের জবাবে বাণিজ্য সচিব বলেন, তারা জিএসপি ইস্যুতে আগে যে শর্তগুলো দিয়েছিল সেগুলো আরও উন্নতি করতে একসাথে কাজ করতে চায়। সেটা শ্রম আইন হোক বা কালখানাগুলোয় নিরাপত্তার বিষয় হোক। আমরা অবস্থার উন্নতি ঘটাতে চাই।

শ্রম আইনের কোন কোন জায়গায় তারা সংশোধন দেখতে চায় জাতে চাইলে তপন কান্তি ঘোষ বলেন, শ্রম আইনের সংশোধন বিষয়টি চলমান। এখানে অনেকগুলো কমিটি রয়েছে। এই কমিটিগুলো অনেক কাজ করেছে। একটি জায়গায় প্রায় ঐক্যমত্যে পৌঁছে গেছে। সেখানে তারা সন্তুষ্ট।

টিকফা সইয়ের ১০ বছর পূর্তি হচ্ছে। সেখান থেকে বাংলাদেশের প্রাপ্তি কী জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমরা পেয়েছি অনেক কিছুই। টিকফার উদ্দেশ্যই হচ্ছে দুই দেশের বাণিজ্য বাড়ানো এবং যে বাঁধাগুলো আছে সেগুলো দূর করা। তবে বাণিজ্য তো অবশ্যই বেড়েছে। ৮/৯ বছর আগে আমাদের ৫ বিলিয়ন ডলার রপ্তানি ছিল; এখন ১০ বিলিয়নের বেশি। রপ্তানির পরিমাণ দেখলে বাংলাদেশ অনেক বেশি লাভবান হয়েছে। তবে অনেক ক্ষেত্রে যেমন সব উন্নত দেশে শুল্কমুক্ত সুবিধা পাইনি। সেটা পেলে রপ্তানি ১০ বিলিয়নের জায়গায় ১৬ বিলিয়ন হতো। সেটা আমরা দূর করার চেষ্টা করছি। আরও কিছু কিছু টেকনিক্যাল সমস্যা সমাধান করতে পেরেছি এই টিকফা প্লাটফর্মের মাধ্যমে।

এলডিসি গ্রাজুয়েশনের পর চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় তাদের কাছ থেকে কি সহযোগিতা পাওয়া যেতে পারে এ ব্যাপারে জানতে চাইলে তপন বলেন, এক্ষেত্রে মার্কেট এক্সেসে ও বাংলাদেশ যখন এলডিসিতে উন্নিত হবে তখন বাংলাদেশ যে সুযোগ সুবিধাগুলো এখন পেয়ে আসছে সেটা যাতে আরও কয়েক বছর থাকে সেজন্য ডাব্লিউটিওতে এলডিসিভুক্ত দেশগুলো যে সাবমিশন দিয়েছে সেটাতে যাতে আমেরিকা সাপোর্ট করে সেটা চেয়েছি। এর বাইরেও কিছু ক্ষেত্র যেমন কৃষিখাতে টেকনোলজি বিস্তার নতুন নতুন পণ্যে উৎপাদন করা সেক্ষেত্রে ইউএসডিএ যাতে সহযোগিতা করে।

বিনিয়োগ নিয়ে কোনো আলোচনা হয়েছে কিনা জানতে চাইলে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের এ জ্যেষ্ঠ সচিব বলেন, আমরা তাদেরকে বিনিয়োগের আহ্বান করেছি। আমাদের ম্যানুফ্যাকচারিং খাতে আরও বেশি বিনিয়োগ চেয়েছি। ফার্মাসিটিক্যাল বিষয়ে বলেছি এখানে রেজিস্ট্রেশন নিতে অনেক বেশি ফি দিতে হয়, সেটা কমিয়ে আনা যায় কিনা। সেসব বিষয়ে আলোচনা হয়েছে।