রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়

বসন্ত-ভালোবাসায় মুখরিত রাবি

গোলাম রববিল, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়:

বসন্তের ফুল দিয়ে মাথায় ফুলের ক্রাউন, হলুদ-লাল রংয়ের শাড়ি পড়েছে প্রেমিকা। প্রেমিক পড়েছে হলুদ পাঞ্জাবী ও সাদা পায়জামা। একে অপরের হাত ধরে পায়ে পা মিলিয়ে হাঁটছে ক্যাম্পাসে। বাবা তার শিশু সন্তানদের নিয়ে ঘুরছেন। ঘোরাঘুরি শেষে তাদের নিয়ে গাছতলায় বসে ফুচকা খাচ্ছে। স্ত্রী তার স্বামীকে নিয়ে আসছেন ফুল কিনতে। স্ত্রীর পছন্দের ফুল গোলাপ কিনে দিচ্ছেন তার স্বামী। কেউবা বন্ধু-বান্ধব নিয়ে আড্ডা দিচ্ছেন। আবার অনেক বন্ধু ‍মিলে ফুল দিয়ে নিজ হাতে বানাচ্ছে ফুলের ক্রাউন, মালা। পরে তা বিক্রি করছে দোকানে। কেউ আবার ভালোবাসার মানুষটিকে না পাওয়ায় আক্ষেপে করছেন বিক্ষোভ মিছিল।

বলছি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের কথা। প্রতিবছর ১৪ ফেব্রুয়ারি ভালোবাসা দিবস আসলে এরকম অনেক দৃশ্যের দেখা মেলে উত্তরবঙ্গের এই বিদ্যাপীঠে। এই বছর পহেলা ফাল্গুন ও ভালোবাসা দিবস এক সাথে হওয়ায় ক্যাম্পাসে ভিড় জমেছে। তবে বসন্ত উৎসব উপলক্ষে এবার ক্যাম্পাসে তেমন কোনো ভিন্ন আয়োজন করা হয়নি।

সরেজমিনে দেখা যায়, বিশ্ববিদ্যালয়ের প্যারিস রোড, বুুুদ্ধিজীবী চত্বর, কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার, ইবলিশ চত্বরে উপচে পড়া ভিড়। কেউ আসছেন তার প্রিয় মানুষটাকে নিয়ে, আবার কেউ আসছেন তার পরিবারকে নিয়ে সময় কাটাতে। এই দিনে বিশ্ববিদ্যালয়ের অনেককে তার প্রিয় মানুষটিকে শুভেচ্ছাসূচক কার্ড, ফুল, চকোলেট বা উপহারসামগ্রী দিতে দেখা যায়।‘প্রতিবছর এই দিনটা আমাদের জন্য বিশেষ একটা দিন। এই দিনে আমি লাল শাড়ি ও বসন্তের নতুন ফুল দিয়ে সাজতে পছন্দ করি। আর ওকে লাল পাঞ্জাবী ও সাদা পায়জামা বেশ মানায়। এজন্য এই বিশেষ দিনটিকে আমরা দুইজনে একটু ভিন্নরুপে সেজে ক্যাম্পাসে ঘুরে বেড়াই। অনেক ভালো লাগা কাজ করে আমাদের মধ্যে। একে অপর বুঝতে পারি,’ বলছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নরত এক যুগল।

ক্যাম্পাসের প্যারিস রোডে ফুল কিনতে আসছেন এক নব দম্পতি। তারা দ‘জনই এমবিবিএস ডাক্তার। ফুল কেনা শেষে দুজনে একসাথে ছবি তুলছেন। তারা উচ্ছাস প্রকাশ করে বলেন, ‘এর আগেও বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসে আসছি কিন্তু আজকের এতো ভালো লাগছে বলে বোঝাতে পারবো না। দুইজন মিলে পুরো ক্যাম্পাস ঘুরে দেখবো। এখানে এসেছিলাম ফুল কিনতে। ও আবার খুব গোলাপ ফুল পছন্দ করে। জীবনে এই প্রথম কাউকে ফুল দিলাম। অনেক ভালো লাগছে প্রিয়জনকে দেখতে। ফুল দিয়ে সাজাতে আজকে তাকে সবচেয়ে সুন্দর লাগছে।যে ভালোবাসার জন্য যুগে যুগে অনেক রাজা-বাদশা যুদ্ধ করছেন, ধ্বংশ হয়েছে ট্রয় নগরী। সেই ভালোবাসার জন্য আন্দোলন, বিক্ষোভ মিছিল, প্রতিবাদী সমাবেশ হওয়াটাও স্বাভাবিক। তেমনি এক বিক্ষোভ মিছিল ও প্রতিবাদী সমাবেশ করেছে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রেম বঞ্চিত শিক্ষার্থীদের সংগঠন ‘বাংলাদেশ প্রেম বঞ্চিত সংঘ’ রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় শাখা। বিক্ষোভ মিছিলটি বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ করার সময় ‘প্রেমের নামে প্রহসন চলবে না, চলবে না’, ‘কেউ পাবে, কেউ পাবেনা, তা হবে না, তা হবে না’, ‘দেহ দিয়ে প্রেম নয়, মন দিয়ে প্রেম হয়’, ‘প্রেমের নামে নষ্টামি, চলবে না, চলবে না স্লোগান দেন প্রেম বঞ্চিতরা। পরে সংগঠনটির উদ্যোগে বিশ্ববিদ্যালয়ে নিহত মাহমুদ হাবিব হিমেলের স্বরণে রক্তদান কর্মসূচির আয়োজন করা হয়। এতো গেলো প্রেমিক-প্রেমিকা ও প্রেম বঞ্চিতদের কথা। এছাড়াও বিশ্ববিদ্যালয়ের বাইরে থেকেও অনেকে ক্যাম্পাসে এসেছেন বন্ধু-বান্ধব নিয়ে ঘুরতে। বন্ধু-বান্ধব আসতে দেরি হওয়ায় ক্যাম্পাসের প্যারিস রোডের  এক পাশে বসে আছেন রাজশাহী কলেজের এক শিক্ষার্থী। পাশে বসে রয়েছে তার ছোট বোন। তারা উচ্ছ্বাস প্রকাশ করে বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ের যেকোনো উৎসবে আমরা আসি। আজকে আমরা পহেলা বসন্ত ও ভালোবাসা দিবস উপলক্ষে ক্যাম্পাসে আসছি। ক্যাম্পাসে আমার আরো অনেক বন্ধু আসবে। তাদের অপেক্ষায় বসে রয়েছি। সবাই মিলে একসাথে ক্যাম্পাস ঘুরে দেখবো, আনন্দ করবো।’তিনটি ফুটফুটে শিশু নিয়ে ক্যাম্পাসে ঘুরতে এসেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের সাবেক শিক্ষার্থী জুয়েল কিবরিয়া। তিনি বলেন, ‘আজ বসন্তের প্রথম দিন। আবার বিশ্ব ভালোবাসা দিবস। এজন্য ছেলেমেয়েদের নিয়ে ক্যাম্পাসে ঘুরতে আসছি। আমার মা অসুস্থ হওয়ায় স্ত্রীকে নিয়ে আসতে পারেনি। ক্যাম্পাসে এসে অতীতের কথাগুলো খুব মনে পড়ছে। আমাদের সময় ভালোবাসা দিবস এভাবে পালিত না হলেও বসন্ত উৎসবে আমরা বন্ধু-বান্ধব সবাই মিলে ঘোরাঘুরি করতাম।’এদিকে ভালোবাসা ‍দিবসকে কেন্দ্র করে সাধারণ শিক্ষার্থীদের কেউ কেউ বেছে নিয়েছেন ফুলের ব্যবসা। কেউ আবার প্রেমিক যুগলদের ছবি তুলে অর্থ আয় করছেন।  তেমনি বিশ্ববিদ্যালয়ের গণিত বিভাগের কিছু শিক্ষার্থী মিলে নিজ হাতে তৈরি করছেন ফুলের ক্রাইন, ফুলের মালা। ফুলের ব্যবসা প্রসঙ্গ তারা বলেন,  ছয়হাজার টাকা  পুঁজি নিয়ে ৮ বন্ধু ‍মিলে মজা করে ফুলের দোকান দিয়েছে। এর মধ্যে আনুমানিক তিন হাজার টাকার ফুল বিক্রি হয়ে গেছে আমাদের। আজ পহেলা ফাল্গুন ও ভালোবাসা দিবস একই দিনে হওয়ায় ফুল বিক্রি হচ্ছে ভালো।ক্যাম্পাস ঘুরে দেখা যায়, বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন জায়গায় অনেকগুলো ফুলের দোকান বসেছে। প্যারিস রোডে পাঁচটি, মমতাজউদ্দীন কলা ভবনের সামনে একটি, সৈয়দ ইসমাইল হোসেন সিরাজী একাডেমিক ভবনের সামনে দু‘টি, কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে একটি দোকান রয়েছে। দোকানগুলোতে বেশিরভাগ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরাই ফুল বিক্রি করছেন। এসময় বাংলা বিভাগের সদ্য মাস্টার্স শেষ করা মো. সজল স্মৃতিচারণা করে বলেন, ‘প্রথম বর্ষে থাকতে বিনা টাকায় বিশ্ববিদ্যালয়ের হল থেকে ফুল তুলে একহাজার টাকা আয় করেছিলাম। আজকে খুব সেই দিনগুলোর কথা মনে পড়ছে।’

ক্যাম্পাসে ফুল বিক্রি করছেন রাজশাহী কলেজের শিক্ষার্থী রিস্তা। কিছুটা হতাশা প্রকাশ করে তিনি বলেন, ভাই, তেমন ফুল বিক্রি হচ্ছে না আমার। আসলে মেয়েরা অনেক হিসাবী, কৃপণ হয়। বয়ফ্রেন্ড ফুল নিতে চাই। কিন্তু প্রেমিকা ফুল নিতে দেয় না।

জি/আর