রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়

বর্ধিত সভার ব্যানারে এএইচএম কামারুজ্জামানের ছবি না থাকায় ছাত্রলীগের একাংশের ক্ষোভ

রাবি প্রতিনিধি:

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় (রাবি) ছাত্রলীগের হল সম্মেলন উপলক্ষে আয়োজিত বিশেষ বর্ধিত সভার ব্যানারে জাতীয় চার নেতার অন্যতম এএইচএম কামারুজ্জামানের ছবি না থাকায় ক্ষোভ জানিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের একাংশ। বৃহস্পতিবার (০৩ মার্চ) রাতে কেন্দ্রীয় ক্যাফেটেরিয়ায় এক সংবাদ সম্মেলন করে এ ঘটনায় রাবি শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদককে জাতির উদ্দেশে ক্ষমা চাওয়ার তারা দাবি জানান।

সংগঠন সূত্রে জানা যায়, আগামী ১৪ মার্চ রাবি ছাত্রলীগের হল সম্মেলন উপলক্ষে বৃহস্পতিবার বিকেল চারটায় বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ সুখরঞ্জন সমাদ্দার ছাত্র-শিক্ষক সাংস্কৃতিক কেন্দ্রে বিশেষ বর্ধিত সভার আয়োজন করা হয়। এতে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন আওয়ামী লীগের বন ও পরিবেশ বিষয়ক উপ-কমিটির সদস্য আনিকা ফারিহা জামান। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-সভাপতি খালিদ হাসান, সহ-সম্পাদক শরিফুল ইসলাম। এসময় আরও উপস্থিত ছিলেন রাবি ছাত্রলীগের দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতা- ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-সম্পাদক আহসান হাবীব ও মুক্তিযুদ্ধ ও গবেষণা বিষয়ক সম্পাদক মেহেদী হাসান। এতে রাবি ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক ফয়সাল আহমেদের সঞ্চালনায় সভাপতি গোলাম কিবরিয়া সভাপতিত্ব করেন।

সভায় যোগ দেওয়ার পর ছাত্রলীগের একাংশ সভা বন্ধের দাবিতে স্লোগান দেয়। এতে সেখানে উত্তেজনার সৃষ্টি হয়। একপর্যায়ে প্রধান অতিথি আনিকা ফারিহা জামান সভা থেকে চলে যান। তবে এরপরও বাকি অতিথি ও নেতাকর্মীরা রাত নয়টা পর্যন্ত সভা চালিয়ে নেন।

এ ঘটনায় রাত ১০টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় ক্যাফেটেরিয়ায় ছাত্রলীগের একাংশের নেতাকর্মীরা সংবাদ সম্মেলন করেন। সংবাদ সম্মেলনে সহ-সভাপতি মেজবাহুল ইসলাম, কাজী আমিনুল ইসলাম (কাজী লিংকন), যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক শাহীনুল ইসলাম (সরকার ডন), সাংগঠনিক সম্পাদক এনায়েত হক (রাজু), প্রশিক্ষণ বিষয়ক সম্পাদক আসাদুল্লা-হিল-গালিব, উপ-ধর্ম বিষয়ক সম্পাদক তাওহীদুর রহমান (দূর্জয়), উপ-গণযোগাযোগ ও উন্নয়ন বিষয়ক সম্পাদক মিজানুর রহমান (বিপ্লব), সহ-সম্পাদক সাদিক, সদস্য মিরাজ হোসেনসহ প্রায় অর্ধশত কর্মী উপস্থিত ছিলেন।

এ সময় লিখিত বক্তব্যে সহ-সভাপতি মেজবাহুল ইসলাম বলেন, ‘আমরা গভীর উদ্বেগের সঙ্গে লক্ষ্য করেছি যে, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়েল ছাত্রলীগের কার্যক্রম একদমই নাজুক অবস্থায় বিরাজ করছিলো। এর পরিপ্রেক্ষিতে আমরা গত অক্টোবর থেকে সাংগঠনিক কার্যক্রম গতিশীল করার জন্য দাবি জানিয়ে আসছিলাম। তারই ধারাবাহিকতায় বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক, রাবি ছাত্রলীগের অভিভাবক আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য এএইচএম খায়রুজ্জামান, কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সভাপতি আল নাহিয়ান খান জয় ও সাধারণ সম্পাদক লেখক ভট্টাচার্য এবং রাবি ছাত্রলীগের আরেক দিকপাল আমাদের অভিভাবক ডা. আনিকা ফারিহা জামানের সম্মতিতে আগামী ১৪ মার্চ হল সম্মেলনের তারিখ নির্ধারণ করা হয়েছে। সেই উপলক্ষে আজ বিশেষ বর্ধিত সভার জন্য নেতাকর্মীরা ক্যাম্পাসে প্রদক্ষিণ করে সভায় যোগদান করি। এরপর আমরা গভীর উদ্বেগের সঙ্গে লক্ষ করি ও মর্মাহত হই যে, আজকের এই বিশেষ সভায় জাতীয় চার নেতার অন্যতম এএইচএম কামারুজ্জামান এবং রাবি ছাত্রলীগের অভিভাবক এএইচএম খায়রুজ্জামানের ছবি সংযোজিত করা হয়নি।’

সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘হল সম্মেলন উপলক্ষে অনেকেই ব্যানার-ফেস্টুন টাঙাচ্ছেন। সেখানে সবকিছু সঠিকভাবে হচ্ছে। অতীতেও আমরা বিশ^বিদ্যালয়ে এ ধরনের কোনো অভিযোগ পাইনি। অফসেট প্রিন্টিংয়ে ছাত্রলীগের ব্যানারগুলোর ফরম্যাট সবসময় তৈরিই থাকে। আমরা গেলে শুধু নাম, স্থান, তারিখগুলো পরিবর্তন হয়। ছবিগুলো সাধারণত একই থাকে। আমরা বলবো এই ভুল ইচ্ছাকৃত। অফসেট প্রিন্টিংয়ে ব্যানার এভাবে চাওয়া হয়েছে বলেই এমন হয়েছে। আমরা বিশ^াস করি এ ধরনের ভুল হতে পারে না।’

লিখিত বক্তব্যে সহ-সভাপতি মেজবাহুল ইসলাম আরও বলেন, ‘এই দায়িত্বজ্ঞানহীন কাজের জন্য রাবি ছাত্রলীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক সম্পূর্ণভাবে দায়ী। এই ধৃষ্টতাপূর্ণ কাজের জন্য তাদের দুইজনকে জাতির উদ্দেশে ক্ষমা চাইতে হবে। তারা ক্ষমা না চাইলে আমরা রাবি ছাত্রলীগের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাকর্মীরা পরবর্তীতে একসঙ্গে বসে সিদ্ধান্ত নেব।’

এ বিষয়ে সাধারণ সম্পাদক ফয়সাল আহমেদ মুঠোফোনে প্রথম আলোকে বলেন, ‘কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ থেকে রাবি ছাত্রলীগের দায়িত্বপ্রাপ্ত দুইজন নেতা এসেছিলেন। তারা যে ফরম্যাট বলেছিলেন সেভাবেই ব্যানার বানানো হয়েছিল। তারপরও পরে আমরা ব্যানার পরিবর্তন করে সভা করেছি। বাংলাদেশ ছাত্রলীগ একটি সুশৃঙ্খল সংগঠন। তাদের কারও কোনো অভিযোগ থাকলে তা কেন্দ্রীয় সভাপতি-সম্পাদককে জানাতে পারতেন।’

জি/আর