বর্তমান পৈশাচিকতা দেখলে শরীরের রক্ত শীতল হয়ে যায় : রিজভী

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এখন নিজের ছায়া দেখলে ভয় পাচ্ছেন বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম-মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভী। তিনি বলেন, আপনি বলেছেন সামরিক অভিধান থেকে মার্শাল ল উঠিয়ে দেওয়া উচিত। প্রধানমন্ত্রী আপনার আইন কি? দেশে কোন আইন চলছে? এটাতো ভয়ঙ্কর আইন। এটা তো মার্শাল ল আইনের থেকেও ভয়ঙ্কর, মানুষের কাছে জবাবদিহি করতে হয় না। স্বামীকে বেঁধে রেখে যখন স্ত্রীকে নির্যাতন করা হয় তখন বঙ্গভবনে আপনার জন্মদিন পালন করা হয়। এই হচ্ছে আপনার পরিণতি, এই হচ্ছে আপনার সরকার।

আজ সোমবার দুপুরে জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে সাবেক রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের বিরুদ্ধে ইতিহাস বিকৃত করে নাটক নির্মাণের প্রতিবাদে এক মানববন্ধনে তিনি এসব কথা বলেন।

রিজভী বলেন, আমরা তো ইতিহাসে দেখেছি, প্রতিটি সামরিক আইনের সাথে আওয়ামী লীগের সম্পৃক্ততা। শুধু স্বাধীনতার আগে নয়, স্বাধীনতার পরেও প্রথম মার্শাল ল যিনি জারি করেছিলেন তিনি একজন আওয়ামী লীগ নেতা। মর্মান্তিক ১৫ আগস্টের আগ পর্যন্ত তিনি বাকশালের মন্ত্রী ছিলেন। আমরা খবরের কাগজে দেখেছি, সেই রাতে খন্দকার মোশতাক শেখ সাহেবকে কবুতরের মাংস দিয়েছিলেন। এত মিল ছিল তাদের মধ্যে, সেই লোকটাই এই মর্মান্তিক হত্যাকাণ্ড ঘটিয়ে রাষ্ট্রপতি হয়েছিলেন।

তিনি বলেন, তখন বাকশালের অধিকাংশ মন্ত্রী মোশতাকের মন্ত্রিসভায় যোগ দিয়েছিলেন। খন্দকার মোশতাক প্রথম মার্শালের অধিনায়ক। তারপরে এরশাদ আসলো, তখন ‘আই এম নট আনহ্যাপি’ কে বলেছেন? শেখ হাসিনা বলেছেন। তারপরে মঈনউদ্দিন-ফখরুদ্দিন ‘আমাদের আন্দোলনের ফসল’ কে বলেছেন, আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন। তাহলে এই ভূখণ্ডে সামরিক শাসনের সাথে কারা জড়িত, আওয়ামী লীগ জড়িত।

তিনি আরো বলেন, দেশের পরিস্থিতি যেদিকে সেটা এমনভাবে ভাবিয়ে তুলেছে প্রতিটি মুহূর্ত উদ্বেগ-উৎকণ্ঠার মধ্যে থাকতে হচ্ছে। এখানে শুধু বক্তৃতা করে প্রতিবাদ করার কিছু নেই। আমরা তো এমসি কলেজের পৈশাচিকতা দেখেছি, তার দু’দিন পরে আবারও সিলেটে নারীর ওপর পৈশাচিকতা দেখলাম। ওদিকে পাহাড়ি নারীর ওপর পৈশাচিকতা দেখেছি। এগুলোতো প্রতিদিন হচ্ছে। শরীরের রক্ত এবং হাড় শীতল হয়ে যায় এসব কাহিনি শুনলে।

তিনি বলেছেন, ‘নোয়াখালীর জেলা প্রশাসক বলেছেন, ‘তিনি জানেন না’। এরপরে নাকি দুজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। মানবতার বিরুদ্ধে এত বড় অপরাধ যেটা বেগমগঞ্জে ঘটেছে এর সাথে জড়িত সবাই আওয়ামী লীগের, আমরা সেটুকু জানতে পেরেছি। এত বড় ঘটনা পুলিশ প্রশাসন জানেনা সিভিল অ্যাডমিনিস্ট্রেশন জানেনা- এটা কি বিশ্বাসযোগ্য? প্রখ্যাত রাষ্ট্রবিজ্ঞানী হ্যারল্ড লাস্কির একটা কথা আছে- ‘একটা সরকার বা রাষ্ট্রকে বোঝা যায় তার কর্মকর্তাদের দিয়ে’। আজকে নোয়াখালীর এসপি, ডিসি তারা ১ মাস পর বলছেন এ ঘটনার সত্যতা। এত বড় উৎপীড়নের ঘটনা এত বড় সম্ভ্রমহানির ঘটনা এত বড় শ্লীলতাহানির ঘটনা কী বীভৎস কী মর্মান্তিক, যা ভাষায় বর্ণনা করা যায় না।

ছাত্রদলের সাবেক এ সভাপতি বলেন, আমরা একটি আতঙ্ক ও ভীতিকর পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে যাচ্ছি। আজ শুধু কথার মধ্যে শেষ নয়। আরও যে কত আর্তনাদ ও বিপদ শুনতে হবে তার কোনও ঠিক নেই। এজন্য বলেছি, পাড়া-মহল্লায় যারা গণতন্ত্রকামী মানুষ তাদের সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। কুৎসিত, দানব, নারীর সম্ভ্রম হরণকারী যুবলীগ ও ছাত্রলীগের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ কমিটি গঠন করতে হবে।

ইতিহাস বিকৃত করে ‘ইনডেমেনিটি’ নাটক বানানোর প্রতিবাদ জানিয়ে রুহুল কবির রিজভী বলেন, ‘নাটকের কথা বারবার বলছি। ওরা তো করবেই। এখানে শামীমের এত টাকা, সম্রাটের ক্যাসিনোর এত টাকা! যিনি স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়েছেন গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার করেছেন সেই নেতার বিরুদ্ধে ‘কিছু করলে কিছু একটা পাওয়া যাবে’। সাংস্কৃতিক মন্ত্রী হওয়া যাবে অথবা সম্রাটের মতো টাকাওয়ালা হওয়া যাবে। শেখ হাসিনার কাছে নীতি কোনো ব্যাপার না। যারা মহান স্বাধীনতার ঘোষক জিয়াউর রহমানকে গালি দেবে, তাকে নিয়ে বিদ্বেষ পোষণ করবে, এই সরকারের কৃপাদৃষ্টিতে তারা উপকৃত হবে। যারা দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার প্রতি বাজে কথা বলবে কুরুচিপূর্ণ কথা বলবে তারাও পুরস্কৃত হবে।

মানববন্ধনে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, যুগ্ম মহাসচিব হাবিব-উন-নবী খান সোহেল, সাংগঠনিক সম্পাদক ফজলুল হক মিলন, সংগঠনের সহ-সভাপতি গোলাম সরোয়ার ও সহ-দফতর সম্পাদক নাজমুল হাসান প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

 

সূত্রঃ কালের কণ্ঠ