বন্যপ্রাণী আবাস ধ্বংসের ঝুঁকিতে বিশ্বের এক-পঞ্চমাংশ দেশে

বিশ্বের মোট দেশগুলোর পাঁচ ভাগের এক ভাগ দেশে বন্যপ্রাণীর আবাস ভেঙে পড়ার ঝুঁকি তৈরি হয়েছে। শিগগিরই এসব দেশের জীববৈচিত্র্য ও বাস্তুতন্ত্র ভেঙে পড়তে পারে।

 

সোমবার প্রকাশিত এক গবেষণা প্রতিবেদনে এই হুশিয়ারি দিয়েছে সুইজারল্যান্ডের বীমা জায়ান্ট সুইস রে। বন্যপ্রাণী ও তাদের বাসস্থান ধ্বংসের কারণে এই হুমকি তৈরি হয়েছে।

মানুষের কর্মকাণ্ডের কারণে খাদ্য, বিশুদ্ধ পানি ও বাতাস এবং বন্যা সুরক্ষার মতো জরুরি সেবাগুলো এরই মধ্যে ক্ষতির শিকার।

সুইস রে’র গবেষণা প্রতিবেদনটিতে বলা হয়, বিশ্বের মোট প্রবৃদ্ধির ৪২ ট্রিলিয়ন ডলার নির্ভর করে উচ্চস্তরের জীববৈচিত্র্যবিষয়ক কর্মকাণ্ডের ওপর। তার পরও এগুলো ধ্বংসের কর্মকাণ্ড চলমান। জীববৈচিত্র্য ধ্বংসের সঙ্গে জলবায়ু পরিবর্তনেরও উল্লেখযোগ্য সংযোগ রয়েছে।

জাতিসংঘের দুর্যোগ ঝুঁকি হ্রাস অফিস জানিয়েছে, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে গত ২০ বছরের দুর্যোগের ঘটনা অন্তত দ্বিগুণ হয়েছে। ২০০০ থেকে ২০১৯ সালের মধ্যে বড় ধরনের দুর্যোগের ঘটনা ঘটেছে সাত হাজার ৩৪৮টি। এতে বহু মানুষের প্রাণহানির পাশাপাশি ৪০২ কোটি মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন।

বিশ্ব অর্থনীতির ক্ষতি হয়েছে প্রায় তিন ট্রিলিয়ন ডলার। এর আগের ২০ বছরে তথা ১৯৮০ থেকে ১৯৯৯ সাল পর্যন্ত সময়ে বড় ধরনের দুর্যোগের ঘটনা ঘটেছে চার হাজার ২১২টি। ‘দ্য হিউম্যান কস্ট অব ডিজাস্টার্স ২০০০-২০১৯’ শিরোনামে প্রতিবেদনটি প্রকাশ করে জাতিসংঘের দুর্যোগ ঝুঁকি হ্রাস সংস্থাটি।

সুইস রে’র জীববৈচিত্র্য ধ্বংসের ঝুঁকিতে থাকা এক-পঞ্চমাংশ দেশের তালিকার শীর্ষে রয়েছে অস্ট্রেলিয়া, ইসরাইল ও দক্ষিণ আফ্রিকা।

তার পরই আছে ভারত, স্পেন ও বেলজিয়ামের নাম। এছাড়া বন্যপ্রাণীর আবাস ধ্বংস ও বড় কৃষিক্ষেত্র হারানোর ঝুঁকি- উভয় সংকটের মধ্যে থাকা দেশের তালিকায় আছে পাকিস্তান ও নাইজেরিয়ার নাম। ব্রাজিল ও ইন্দোনেশিয়ার মতো দেশে বন্যপ্রাণীর আবাস ও জীববৈচিত্র্যের জন্য বড় জায়গা এখনও অক্ষত রয়েছে।

কিন্তু এই দেশগুলোর প্রাকৃতিক সম্পদের ওপর বড় ধরনের নির্ভরশীলতাও রয়েছে। বিশ্বের গাছপালা ও উদ্ভিদ প্রজাতির ৪০ শতাংশ ধ্বংসের ঝুঁকিতে রয়েছে।

সুইস রে’র গবেষণার অন্যতম প্রধান গবেষক অলিভার স্কেলস্কে বলেন, বিশ্বের দেশগুলোর পাঁচ ভাগের এক ভাগ দেশের বন্যপ্রাণীর আবাসস্থল ধ্বংসের ঝুঁকিতে রয়েছে জীববৈচিত্র্য কমে যাওয়া সংশ্লিষ্ট উপকারী সেবা নেয়ার কারণে।

জীববৈচিত্র্য কমতে থাকলে পরিস্থিতি আরও খারাপের দিকে যেতে থাকবে। সুইস রে’র প্রধান গবেষণা কর্মকর্তা জেফেরি বন বলেছেন, আমাদের জানা মতে, জীববৈচিত্র্য ও বাস্তুতন্ত্রকে একসঙ্গে নিয়ে বিশ্বজুড়ে আড়াআড়ি তুলনা করে গবেষণা ও সূচক প্রকাশ এবং তাকে স্থান অনুযায়ী অর্থনীতির সঙ্গে সংশ্লিষ্ট করার ঘটনা এই প্রথম।’

 

সূত্রঃ যুগান্তর