বন্ধ হলো যেসব প্রযুক্তি সেবা

সিল্কসিটিনিউজ ডেস্ক:

প্রযুক্তি খাতের পরিবর্তন খুব দ্রুত ঘটে থাকে। এখানে টিকে থাকতে হলে পণ্য বা সেবায় নতুনত্ব যোগ করতে হয়, নয়তো হারিয়ে যাওয়াটাই নিয়ম।

প্রতিযোগিতামূলক এই খাতে প্রায় প্রতিদিনই নতুন পণ্য বা সেবা আসে। যে সব পণ্য বা সেবায় এই নতুনত্ব যোগ করা হয় না সেগুলো প্রযুক্তিপ্রেমীদের মনও জয় করতে পারে না। ফলে বাজার থেকে সেগুলো হারিয়ে যায়।

চলতি বছর বন্ধ হয়ে যাওয়া প্রযুক্তি সেবাগুলো নিয়েই সাজানো হয়েছে সালতামামির এ প্রতিবেদন।

গুগল ইউআরএল শর্টেনার

ওয়েবসাইটের ঠিকানার আকার ছোট করে সহজে শেয়ার করার তুমুল জনপ্রিয় সেবা গুগল ইউআরএল শর্টেনার বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। চলতি বছর ঘোষণা আসলেও সেবাটি বন্ধ হবে আগামী বছরের ৩০ মার্চ।

গুগলের দাবি, ব্যবহারকারীরা আজকাল আর ওয়েবসাইটে নয়, কনটেন্ট দেখছেন আইওএস, অ্যান্ড্রয়েড অথবা ওয়েব অ্যাপের মাধ্যমে। ওয়েবসাইটগুলো আর আগের মতো পেইজে বিভক্ত নয়, বরং প্রতিটি সাইটই ব্রাউজারে চলা একেকটি অ্যাপের মতো। সেবাটি ব্যবহারে গ্রাহকের খুব বেশি উপকার হবে না বলে জানিয়েছে গুগল। এরই জের ধরে সেবাটি বন্ধ করা হচ্ছে।

সামাজিক যোগাযোগ মাধ‍্যম পাথ

চলতি বছরের ১৮ অক্টোবর বন্ধ হয়েছে ব্যক্তিগত সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের ওয়েবসাইট পাথ। ওয়েবসাইটটি যাত্রা করেছিলো ২০১০ সালে। এই প্লাটফর্মে সর্বোচ্চ ৫০ বন্ধু অ্যাড করা যেতো। পরবর্তীতে ৫০০ বন্ধু রাখার সুযোগ করে দেওয়া হয়।

বন্ধুরা যেন পরস্পরের সঙ্গে যুক্ত থাকতে পারে সেই লক্ষ্যে ডেভ মরিন পাথ তৈরি করেছিলেন। ভেনেজুয়েলা, কলোম্বিয়া, মেক্সিকো, ক্যারিবীয় অঞ্চল, পুয়ের্তো রিকো, ডোমিনিকান প্রজাতন্ত্র ও মধ্য যুক্তরাষ্ট্রের স্প্যানিশ ভাষাভাষী জনগোষ্ঠীর মধ্যে অ্যাপটি বেশ জনপ্রিয় হয়েছিল। তবে কেনো সেবাটি বন্ধ করে দেয়া হচ্ছে সে সম্পর্কে প্রতিষ্ঠানটির পক্ষ থেকে বিস্তারিত কিছু জানানো হয়নি। তবে ধারণা করা হচ্ছে, ফেইসবুক বা টুইটারের মতো সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে পেরে উঠছিলো না প্লাটফর্মটি। তাই সেবাটি বন্ধ করে দেয়া হয়েছে।

ইয়াহু ম‍্যাসেঞ্জার

সাধারণ মানুষের যোগাযোগের মাধ্যমে বদল এনেছিল ইয়াহু ম্যাসেঞ্জার। দু’দশকের যাত্রা শেষে চলতি বছরের ১৭ জুলাই সেবাটি বন্ধ করা হয়। জেরি ইয়াং ও ডেভিড ফিলোর যৌথ প্রয়াসে ১৯৯৮ সালে ইয়াহু পেজার আত্মপ্রকাশ করে। ১৯৯৯ সালে সেবাটির নাম পরিবর্তন করে রাখা হয় ইয়াহু ম্যাসেঞ্জার। বিনামূল্যে কথা বলার সুবিধা থাকায় এটি ব্যবসায়ীদের কাছে জনপ্রিয়ও হয়। কিন্তু ফেইসবুক বা হোয়াটসঅ‍্যাপের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে ধীরে ধীরে বাজার হারাতে থাকলে সেবাটি বন্ধ করে দেয় ইয়াহু।

গুগল প্লাস

গুগলের ডেভেলপার প্লাটফর্মে গুগল প্লাসের নিরাপত্তা ত্রুটির কারণে ৫ লাখ ব্যবহারকারীর নাম, ইমেইল ঠিকানা, পেশা, লিঙ্গ ও বয়সের তথ্য উন্মুক্ত হয়ে পড়ে। এর জের ধরে গুগলের সোশ্যাল নেটওয়ার্ক প্ল্যাটফর্ম গুগল প্লাস বন্ধের ঘোষণা দেওয়া হয়। আগামী বছরের এপ্রিল মাসে সেবাটি বন্ধ হয়ে যাবে।

ফেইসবুককে টেক্কা দিতে গুগল প্লাস উন্মোচন করা হয় ২০১১ সালে। কিন্তু খুব কম সংখ্যক ব্যবহারকারীই গুগল প্লাস ব্যবহার করতেন। গুগল জানিয়েছে, ৯০ শতাংশ ব্যবহারকারী সোশ্যাল নেটওয়ার্কটিতে ৫ সেকেন্ডেরও কম সময় ধরে অবস্থান করতেন।

গুগল অ‍্যালো

বন্ধ হওয়ার তালিকায় রয়েছে গুগলের আরেকটি ম‍্যাসেজিং অ‍্যাপ গুগল ‘অ‍্যালো’। আগামী মার্চ পর্যন্ত ব্যবহারকারীরা অ্যালোতে থাকা চ্যাট হিস্ট্রি সংরক্ষণে রাখার সময় পাবেন। এরপরেই অ্যাপটির কার্যক্রম পুরোপুরি বন্ধ হয়ে যাবে।
২০১৬ সালে অ‍্যাপটি উন্মোচন করা হয়েছিল। অন্যান্য ম্যাসেজিং অ্যাপগুলোর সঙ্গে প্রতিযোগিতা করতে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার ব্যবহার করা হয়েছিল গুগল অ্যালোতে। কিন্তু প্রথম দিকে কিছুটা জনপ্রিয় হয়ে উঠলেও সময়ের ব্যবধানে এটি আড়ালে পরে যায়। সেই সঙ্গে জনপ্রিয়তাও হারাতে থাকে।

ক্লাউড

ক্লাউড একটি সোশ্যাল মিডিয়া টুলস। এটি ২০০৮ সালে চালু হয়েছিল। ওয়েব ও মোবাইল অ্যাপের মাধ্যমে এটি সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহারের পরিসংখ্যান দেখাতে পারতো। কিন্তু জনপ্রিয়তা হারানোর কারণে চলতি বছর ২৫ মে সেবাটি বন্ধ করে দেওয়া হয়।

স্টাম্বলআপন

অনলাইনে ব্যবহারকারীদের পছন্দ ও আগ্রহের ভিত্তিতে নতুন কনটেন্ট দেখার প্লাটফর্ম ছিল স্টাম্বলআপন। ১৬ বছর ধরে সেবা দিলেও সম্প্রতি সময়ে ফেইসবুকের কারণে জনপ্রিয়তা হারাতে থাকে এটি। তাই চলতি বছর ওয়েবসাইটটি বন্ধের ঘোষণা দেন স্টাম্বলআপনের প্রধান নিবার্হী গ‍্যারেট ক‍্যাম্প।

গুগল ইনবক্স

আরও সহজে ফোনের মেইল আদান প্রদানের জন্য ৪ বছর আগে ইনবক্স নামের একটি অ‍্যাপ বাজারে এনেছিল গুগল।
আধুনিক ইমেইল সেবা প্রদান করাই ছিল তাদের উদ্দেশ্য। চলতি বছর আনুষ্ঠানিকভাবে অ‍্যাপটি বন্ধের ঘোষণা দেয় গুগল। আগামী ২০১৯ সালের মার্চে অ্যাপটি বন্ধ হয়ে যাবে। ইনবক্স অ্যাপে ম্যাসেজ থ্রেডিং, প্রয়োজনীয় মেইল আলাদা করা, মেইলের উত্তর দেয়া বা সোয়াইপ জেসচারের মাধ্যমে ট্র্যাশ করা, একাধিক ইমেইল এক ইনবক্সে দেখার মতো ফিচারগুলো এতে দেয়া হয়েছিল। পরে ধীরে ধীরে সেগুলো জিমেইল অ্যাপে যুক্ত করা হয়।