বদির বিরুদ্ধে তথ্যের আরও প্রমাণ দরকার: স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী

সিল্কসিটিনিউজ ডেস্ক:

কক্সবাজারের সরকারদলীয় সংসদ সদস্য আবদুর রহমান বদির বিরুদ্ধে মাদকের তথ্যপ্রমাণ চেয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেছেন- সংসদ সদস্যই হোক, সরকারি কর্মকর্তা, নিরাপত্তা বাহিনীর কর্মকর্তা বা সাংবাদিক যেই হোক মাদক ইস্যুতে কাউকে ছাড় দেব না। চলমান মাদকবিরোধী অভিযানে বন্দুকযুদ্ধে বেশ কয়েকজনের মৃত্যুর পর মঙ্গলবার সচিবালয়ে নিজ দফতরে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী এসব কথা বলেন। এ সময় মাদকের বিষয়ে জিরো টলারেন্স নীতি ঘোষণা করেন মন্ত্রী।

সরকারি দলের লোকদের ব্যাপারে কী ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে- জানতে চাইলে মন্ত্রী বলেন, ‘আমরা কাউকে ছাড় দিচ্ছি না। আমাদের একজন সংসদ সদস্য আজকে কয় বছর থেকে জেলে আছে, জামিনও পায়নি। কাজেই আইন সবার জন্য সমান। আমরা আইনের বাইরে কাউকে আশ্রয়-প্রশ্রয় দেই না, আপনারা নিশ্চিত থাকুন। আপনারা যার নাম উচ্চারণ করেছেন তার সম্পর্কে জানার চেষ্টা করছি, জানছি, আপনারাও তথ্য দিন, কেউ আইনের ঊর্ধ্বে নয়।’

টেকনাফ-উখিয়ার সংসদ সদস্য বদির বিষয়ে প্রশ্ন করলে মন্ত্রী বলেন, আমরা কাউকেই ছাড় দিচ্ছি না। সে বদি হোক আর যেই হোক। সঠিক প্রমাণাদি আমরা যার বিরুদ্ধে পাচ্ছি আমরা তাকেই গ্রেফতার করছি। আমি আপনাকে নিশ্চয়তা দিতে পারি, সে সংসদ সদস্য হোক আর যেই হোক। তথ্য যেসব আসছে আমরা প্রমাণাদি জোগাড় না করে নক করছি না। আপনাদের কাছে যদি প্রমাণ থাকে পাঠিয়ে দিন। শুধু তার নয়, যে কারো বিরুদ্ধে যদি প্রমাণ থাকে আপনারা আমাদের কাছে পাঠান। আমাদের কাছে যাদের তথ্যপ্রমাণ আছে তাদের আমরা ব্যবস্থা নিচ্ছি।

সংসদীয় কমিটির তালিকায় বদির নাম থাকা প্রসঙ্গে মন্ত্রী বলেন, আপনারা শুনে শুনে কথা বলছেন, অনুমানভিত্তিক কথা বলছেন। আর আমরা তথ্য-প্রমাণভিত্তিক দেখছি। আমি আপনাদের নিশ্চয়তা দিতে পারি, আমরা তথ্যপ্রমাণভিত্তিক কাজ করছি।

এক সাংবাদিকের প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী বলেন, কাউকে ছাড় দেয়া হবে না। ম্যাসেজ ইজ ভেরি ক্লিয়ার। আমাদের প্রধানমন্ত্রী পরিষ্কার নির্দেশনা যে এই ব্যাপারে জিরো টলারেন্স। সংসদ সদস্য হোক, সরকারি কর্মকর্তা হোক, আমাদের নিরাপত্তা বাহিনীর কর্মকর্তা হোক, ইভেন সাংবাদিক; কাউকে ছাড় দেব না। আমাদের কাছে যে তথ্য আছে সেই তথ্য অনুযায়ী অপারেশন চলছে, সে বদি হোক কিংবা যেই হোক। আমি ক্লিয়ার করে বলেছি, এরপর আর কোনো প্রশ্ন থাকতে পারে না।’

মাদকে জড়িত পুলিশের বিরুদ্ধে কী ব্যবস্থা- এমন প্রশ্নে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, এগুলো বিভাগীয় ব্যবস্থা হবে। কারণ সে যখন বাহিনীতে প্রবেশ করে তখন ওয়াদা করেছে। পুলিশপ্রধান এটা ব্যবস্থা নেবেন, যদি তিনি মনে করেন আইনের আশ্রয় নেয়া উচিত, আর যদি মনে করেন বিভাগীয় ব্যবস্থা তবে তাই হবে।

দেশব্যাপী চলমান মাদকবিরোধী অভিযানে যারা মারা যাচ্ছেন তাদের ক্রসফায়ার বলতে নারাজ স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল। তার ভাষায়- এসব অপরাধীকে ধরতে গেলে তারা পুলিশের উপর চড়াও হয়ে আগ্নেয়াস্ত্র ব্যবহার করছে, তখন আইশৃঙ্খলা বাহিনী আত্মরক্ষার্থে বাধ্য হয়েই তাদের মেরেছে। গোয়েন্দা তথ্য অনুযায়ী হাইপ্রোফাইলের যারা মাদকের ব্যবসা করেন তাদের যখনই ধরতে গিয়েছি হয় তারা পালিয়েছে, নয়তো তারা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সঙ্গে যুদ্ধে লিপ্ত হয়েছে। তখন আইনশৃঙ্খলা বাহিনী আত্মরক্ষার্থে যা করার তারা তাই করছে। গত কয়েক দিনে বেশকিছু মাদক ব্যবসায়ী মারা যাওয়ার ঘটনা ঘটেছে। আর এসব মাদক ব্যবসায়ীর কাছে আধুনিক সব ধরনের আগ্নেয়াস্ত্র থাকে। এসব অস্ত্র পুলিশের বিরুদ্ধে ব্যবহারের চেষ্টা করেছে। ফলে এ ধরনের মৃত্যুর ঘটনা ঘটছে। আমরা পরিষ্কার বলছি, আমরা কারও বিরুদ্ধে বন্দুকযুদ্ধে যাচ্ছি না। যারা ফায়ার ওপেন করে তাদের বিরুদ্ধে নিরাপত্তা বাহিনী অ্যাকশন নিচ্ছে। গত সাত বা আট দিনে শুধুমাত্র মৃত্যুর ঘটনা নয়, প্রায় ২ হাজারেও অধিক গ্রেফতার হয়েছে।

শুধুমাত্র মাদক বাহকদের হত্যা করা হচ্ছে কি না এমন প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী বলেন, আমরা গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে শুধুমাত্র বাহক নয় বরং প্রকৃত মাদক ব্যবসায়ীদের ধরার চেষ্টা করছি। এক্ষেত্রে আমাদের মোবাইল কোর্টও চলছে। সেখানে বিভিন্ন মেয়াদে শাস্তিও হচ্ছে। আমরা কাউকে ছাড় দিচ্ছি না।