বদলে যাচ্ছে ঢাকা-মাওয়া-ভাঙ্গা মহাসড়ক

সিল্কসিটিনিউজ ডেস্ক :

বদলে যাচ্ছে ঢাকা-মাওয়া-ভাঙ্গা মহাসড়ক। বিদ্যমান দুই লেনের মহাসড়ককে আন্তর্জাতিক মানের চার লেনে উন্নীতকরণের ব্যাপক প্রস্তুতি চলছে। এ জন্য মহাসড়কের দু’ধারে থাকা গাছপালা কেটে পরিষ্কার করে ফেলা হচ্ছে। চলছে জমি অধিগ্রহণ কার্যক্রম। অবকাঠামো নির্মাণের প্রক্রিয়াও শুরু হয়েছে।

 

পরিকল্পনা অনুযায়ী ২০১৯ সালের মধ্যে এ কাজ শেষ হলে বিনা বাধায় ঢাকা থেকে পদ্মা সেতু হয়ে ফরিদপুরের ভাঙ্গা উপজেলা পর্যন্ত ৫৫ কিলোমিটার পথ ভ্রমণ করা যাবে। এটি হবে দেশের প্রথম এক্সপ্রেসওয়ে এবং এশিয়ান হাইওয়ের করিডোর-১ এর অংশ।

 

সরেজমিনে ঘুরে দেখা গেছে, গাছপালায় ভরা ঢাকা-মাওয়া মহাসড়কের এখন ভিন্ন চেহারা। মহাসড়কের দু’পাশে থাকা যেসব গাছপালা দীর্ঘদিন ছায়া দিতো, সেগুলোর বেশির ভাগ নেই।

কেরানীগঞ্জের তেঘরিয়া, রাজেন্দ্রপুর ও আবদুল্লাহপুরসহ মাওয়া পর্যন্ত বিভিন্ন স্থানের গাছ কেটে ফেলা হচ্ছে। যাত্রাবাড়ী চৌরাস্তা থেকে দোলাইরপাড়, জুরাইন হয়ে পোস্তগোলা ব্রিজ পর্যন্ত সড়কের দু’পাশে জরিপ কার্যক্রম চলছে।

জানা গেছে, মহাসড়ক উন্নয়নে বাংলাদেশ সরকারের নিজস্ব অর্থায়নে সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ের অধীনে একটি প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে। প্রকল্পের নাম ‘ঢাকা-খুলনা (এন-৮) মহাসড়কের যাত্রাবাড়ী ইন্টারসেকশন থেকে (ইকুরিয়া-বাবুবাজার লিংক সড়কসহ) মাওয়া পর্যন্ত এবং পাচ্চর ভাঙ্গা পর্যন্ত অংশ ধীরগতির যানবাহনের জন্য পৃথক লেনসহ চার লেনে উন্নয়ন প্রকল্প’। প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করছে সড়ক ও জনপথ (সওজ) অধিদফতর এবং বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর স্পেশাল ওয়ার্কস অর্গানাইজেশন-এসডাব্লিউও (পশ্চিম)। প্রকল্প ব্যয় ধরা হয়েছে ৬ হাজার ২৫২ কোটি ২৯ লাখ টাকা।

মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, প্রকল্পের অধীনে যাত্রাবাড়ী থেকে মাওয়া পর্যন্ত ৩১.৭ কিলোমিটার, ইকুরিয়া থেকে বাবুবাজার পর্যন্ত লিংক রোড ৩.৩০ কিলোমিটার এবং পদ্মার ওপারে শরীয়তপুরের পাচ্চর থেকে ভাঙ্গা পর্যন্ত ২০ কিলোমিটার মিলিয়ে সর্বমোট ৫৫ কিলোমিটার জাতীয় মহাসড়কের উন্নয়ন করা হবে।

বর্তমানের দুই লেনের মহাসড়ক হবে চার লেনের। এর দু’পাশে ধীরগতির যানবাহনের জন্য সাড়ে ৫ মিটার প্রশস্ত পৃথক সার্ভিস লেন এবং মহাসড়কের মাঝ বরাবর থাকবে ৫ মিটার প্রস্থের মিডিয়ান। ভবিষ্যতে এ মিডিয়ান ব্যবহার করে মেট্রোরেল নির্মাণের পরিকল্পনা রয়েছে। প্রকল্পের জন্য জমি অধিগ্রহণ করা হচ্ছে ২৪.৮৮ হেক্টর।

মহাসড়কটিতে সেতু থাকবে ৩১টি। এগুলোর মধ্যে পিসি গার্ডারের ২০টি ও আরসিসির ১১টি। বড় সেতুর মধ্যে থাকবে ধলেশ্বরী-১ (২৫৮.০৫ মিটার), ধলেশ্বরী-২ (৩৮২.০৫ মিটার) এবং আড়িয়াল খাঁ (৪৫০.০৫ মিটার) সেতু। ৪৫টি কালভার্ট, ৬টি ফ্লাইওভার, ৪টি রেলওয়ে ওভারপাস, গ্রেট সেপারেটর হিসেবে ১৫টি আন্ডারপাস ও ৩টি ইন্টারচেঞ্চ নির্মাণ করা হবে। মহাসড়কে টোলপ্লাজা হবে দু’টি।

আবদুল্লাহপুর, হাঁসারা, শ্রীনগর, কদমতলী, পুলিয়া বাজার ও সদরপুরে ফ্লাইওভার হবে ছয়টি। জুরাইন, কুচিয়ামোড়া, শ্রীনগর ও আতাদিতে রেলওয়ে ওভারপাস হবে চারটি। তিনটি ইন্টারচেঞ্জ থাকবে যাত্রাবাড়ী, দক্ষিণ কেরানীগঞ্জের তেঘরিয়া এবং ভাঙ্গায়। আন্ডারপাস থাকবে ১৫টি।

প্রকল্পের কাজ দু’টি প্যাকেজে ভাগ করা হয়েছে। প্রথম প্যাকেজটি যাত্রাবাড়ী ইন্টারসেকশন থেকে মাওয়া পর্যন্ত ৩৫ কিলোমিটার এবং দ্বিতীয় প্যাকেজটি পাচ্চর থেকে ভাঙ্গা পর্যন্ত ২০ কিলোমিটার মহাসড়ক।

গত ১৭ নভেম্বর সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের ঢাকা-মাওয়া-ভাঙ্গা মহাসড়ক উন্নয়ন কাজের উদ্বোধন করেন। এ সময় মন্ত্রী বলেন, ‘পদ্মা সেতু এবং এক্সপ্রেসওয়েটির নির্মাণ কাজ একই সময়ে শেষ হবে। মহাসড়কে কোনও ট্রাফিক সিগন্যাল থাকবে না। ফলে যানবাহন নিরবচ্ছিন্নভাবে দ্রুত চলাচল করতে পারবে।’

মন্ত্রণালয়ের সচিব (সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগ) এমএএন সিদ্দিক সোমবার রাতে বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘পদ্মা সেতু চালু হওয়ার দিন থেকেই মহাসড়কটি ব্যবহার করা যাবে। এটি হবে দেশের প্রথম এক্সপ্রেসওয়ে। আশা করি, নির্ধারিত সময়ের মধ্যে প্রকল্পের কাজ শেষ হবে।’

মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, প্রকল্পের মহাসড়ক অংশ দিয়ে চলবে দ্রুত গতির গাড়ি। ধীর গতি বা লোকাল যানবাহনের জন্য থাকবে আলাদা লেন। লোকাল যানবাহন নির্দিষ্ট স্থান ছাড়া এ মহাসড়কে উঠতে পারবে না। প্রকল্পটি বাস্তবায়ন হলে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের বিশেষ করে ফরিদপুর, বরিশাল, বাগেরহাট, গোপালগঞ্জ ও খুলনা জেলাসহ দেশের অন্যান্য অঞ্চলের সঙ্গে রাজধানীর সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নতি হবে।’

মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, যাত্রাবাড়ী-মাওয়া এবং পাচ্চর-ভাঙ্গা জাতীয় মহাসড়ক চার লেনে উন্নয়ন প্রকল্পটি গত ৩ মে একনেক সভায় অনুমোদিত হয়।

সূত্র : বাংলাট্রিবিউন