বদলে যাওয়া বাংলাদেশের রূপকার শেখ হাসিনা

সিল্কসিটিনিউজ ডেস্কঃ

রাজধানী ঢাকার নাগরিকদের যাতায়াত সহজ করার জন্য মেট্রোরেলের মতো মেগা প্রজেক্ট বাস্তবায়নের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল। সেই মেগা প্রজেক্টের সিংহভাগ কাজ হয়ে গেছে, এ বছর ডিসেম্বরে মেট্রোরেলের উদ্বোধন হবে বলে সড়ক ও সেতুমন্ত্রী মহোদয় জানিয়েছেন।

চট্টগ্রামের দোহাজারী থেকে কক্সবাজারের রামু হয়ে মিয়ানমারের সীমানায় ঘুমধুম পর্যন্ত প্রায় ১৮৮ কিলোমিটার রেললাইন নির্মাণ কাজও প্রায় শেষের দিকে। ট্রান্স এশিয়ান রেলওয়ে করিডোরের সঙ্গে সংযোগ স্থাপন ও পর্যটন শহর কক্সবাজারকে রেল যোগাযোগের আওতায় আনার লক্ষ্য বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকার এ উদ্যোগ গ্রহণ করে। প্রকল্পের অধীনে কক্সবাজারে আইকনিক স্টেশনসহ ৯টি স্টেশনের অবকাঠামো নির্মাণসহ ৩৯টি ব্রিজ, ১৪৫টি কালভার্ট, বিভিন্ন শ্রেণির ৯৬টি লেভেল ক্রসিং নির্মাণ অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। পর্যটন শিল্পের বিকাশের পাশাপাশি এখানকার এলাকাভিত্তিক অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড আরও সচল হবে। সহজে ও কম খরচে মাছ, লবণ, রাবারসহ কাঁচামাল এবং বনজ ও কৃষি পণ্য পরিবহনের পাশাপাশি কক্সবাজাররে যোগাযোগ ব্যবস্থায় নতুন দিক সংযোজন হবে বলে এখানকার অধিবাসীরা মনে করছেন।

রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র হচ্ছে ২.৪ গিগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন একটি পরিকল্পিত পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র, যা বাংলাদেশের পাবনা জেলার ঈশ্বরদী উপজেলার রূপপুর নামক স্থানে নির্মিত হচ্ছে। এই বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণে প্রাথমিকভাবে ১ লক্ষ ১৩ হাজার কোটি টাকারও বেশি খরচ ধরা হয়েছে। বাংলাদেশে একক প্রকল্প হিসেবে এটি সবচেয়ে বড় কোনো অবকাঠামো প্রকল্প। এই পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের প্রথম ইউনিট ২০২৩ সালে বিদ্যুৎ উৎপাদন কার্যক্রম শুরু করবে। বিদ্যুৎ যেকোনো অর্থনীতির মূল চালিকাশক্তি। দেশের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহ অপরিহার্য। এ কেন্দ্রটি চালু হলে দেশের ক্রমবর্ধমান বিদ্যুতের চাহিদা মেটাতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। ফলে কলকারখানা এবং অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড গতিশীল হবে। মানুষের জীবনমানের উন্নয়ন ঘটবে এবং দারিদ্র বিমোচনে সহায়ক হবে। এতে জিডিপি’র প্রবৃদ্ধি বাড়বে।

 

জাপানের আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সহযোগিতা সংস্থা জাইকার অর্থায়নে মাতারবাড়ির এই বিদ্যুৎকেন্দ্র হবে বাংলাদেশের অন্যতম বড় প্রকল্প। বিদ্যুৎ নিয়ে সরকারের মহাপরিকল্পনায় মাতারবাড়িকে ‘বিদ্যুৎ হাব’ হিসেবে গড়ে তোলার ঘোষণা রয়েছে। পাশাপাশি বিদ্যুৎকেন্দ্র প্রকল্পের আওতায় যে বন্দর নির্মাণ করা হবে, পরে তাকে গভীর সমুদ্র বন্দরে রূপান্তরিত করা হবে। বিদ্যুৎ কেন্দ্র ও দেশের প্রথম গভীর সমুদ্রবন্দর নির্মাণ হলে মাতারবাড়ি একটি গুরুত্বপূর্ণ অর্থনৈতিক অঞ্চল হিসেবে গড়ে উঠবে। মাতারবাড়ি ও ঢালঘাটা ইউনিয়নের ১৪১৪ একর জমিতে এই বিদ্যুৎ প্রকল্পের অবস্থান। চুক্তি অনুযায়ী, ২০২৩ সালের ডিসেম্বরের মধ্যে এ বিদ্যুৎকেন্দ্রের নির্মাণকাজ শেষ হওয়ার কথা রয়েছে। এখানে বিপুল অঙ্কের বৈদেশিক বিনিয়োগ হবে, সারা দেশের ব্যবসা-বাণিজ্যে নতুন গতি ফিরে আসবে। ভূ-অবস্থানগত সুবিধা এবং গভীর সমুদ্র বন্দরের সক্ষমতা থাকায় বন্দরটি দক্ষিণ এশিয়ার ব্যবসা-বাণিজ্যের অন্যতম প্রধান কেন্দ্রে পরিণত হবে। এ বন্দর ব্যবহারের মাধ্যমে বাংলাদেশ অর্থনৈতিকভাবে লাভবান হবে। বন্দরকে কেন্দ্র করে নিকটবর্তী এলাকায় শিল্পপ্রতিষ্ঠান ও ব্যবসা-বাণিজ্যের প্রসার ঘটবে, উন্নয়ন হবে অবকাঠামো ও যোগাযোগ ব্যবস্থায়। ফলে কর্মস্থান বিপুলভাবে বাড়বে। আমদানি-রপ্তানি বৃদ্ধি পেলে রাজস্ব আয় বাড়বে উল্লেখযোগ্য পরিমাণে। দেশের ব্লু ইকোনমি তথা তেল-গ্যাস ও অন্যান্য সমুদ্রসম্পদ আহরণ ও ব্যবহারের সুযোগ সম্প্রসারিত হবে। মাতারবাড়িতে গভীর সমুদ্র বন্দরের উন্নয়নের পাশাপাশি আধুনিক কন্টেইনারবাহী জাহাজ, খোলাপণ্যবাহী জাহাজ ও তেলবাহী ট্যাঙ্কারকে জেটিতে ভেড়ার সুযোগ সৃষ্টি করা হবে। নিঃসন্দেহে বলা যায়, এটি দেশের সার্বিক অর্থনীতিতে বৈপ্লবিক পরিবর্তন আনবে। স্বল্পোন্নত (এলডিসি) দেশ থেকে উন্নয়নশীল দেশে উন্নীত হওয়ার পথে মাইলফলক হবে নতুন এই সমুদ্র বন্দর।

গ্যাস সঙ্কট নিরসন ও জ্বালানি নিরাপত্তা তৈরিতে এলএনজি নির্ভরতার কোনো বিকল্প নেই। তরলীকৃত প্রাকৃতিক এই গ্যাস আমদানির জন্য একটি ভাসমান টার্মিনাল এবং তিনটি স্থল টার্মিনাল নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এলএনজি টার্মিনাল নির্মাণ প্রকল্পের এলএনজি (তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস ইংরেজি: liquefied natural gas বা এলএনজি হচ্ছে প্রাকৃতিক গ্যাস যাকে সংরক্ষণ ও পরিবহনের সুবিধার্থে অস্থায়ীভাবে তরলে রূপান্তর করা হয়েছে) টার্মিনালের ধারণ ক্ষমতা হবে এক লাখ ৩৮ হাজার ঘনমিটার তরল গ্যাস। এই টার্মিনাল থেকে দিনে ৫০ কোটি ঘনফুট গ্যাস সরবরাহ করা যাবে। এজন্য মহেশখালী থেকে চট্টগ্রাম পর্যন্ত প্রায় ৯০ কিলোমিটার পাইপলাইন তৈরিও প্রকল্পের অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। এই প্রকল্পের সফল বাস্তবায়নের ফলে সামগ্রিকভাবে একটি শক্তিশালী জ্বালানি নিরাপত্তাবলয় গড়ে উঠবে বলে জ্বালানি বিশেষজ্ঞরা আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন।

রামপাল বিদ্যুৎ প্রকল্প বাংলাদেশের বাগেরহাট জেলার রামপালে অবস্থিত কয়লাভিত্তিক তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র। রামপালে ভারতের ন্যাশনাল থারমাল পাওয়ার কোম্পানির সঙ্গে যৌথভাবে বাংলাদেশের রাষ্ট্রীয় সংস্থা বাংলাদেশ পাওয়ার ডেভেলপমেন্ট বোর্ড। ১৩২০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়েছে।

বাস্তবায়নাধীন এই মেগা প্রকল্প বদলে দেবে বাংলাদেশের দৃশ্যপট ও গতিধারাকে। অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী অর্জন, আধুনিক অবকাঠামো নির্মাণ ও বিজ্ঞানভিত্তিক সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়তে ২০০৯ সালে সরকার গঠনের পর থেকে মহাপরিকল্পনা নিয়ে কাজ শুরু করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তার হাত ধরেই বাংলাদেশ প্রবেশ করেছে পারমাণবিক বিশ্বে, জায়গা করে নিয়েছে মহাকাশেও। ইতোমধ্যে মহাকাশে উৎক্ষেপণ করা হয়েছে কৃত্রিম উপগ্রহ বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট ১। বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট ২ উৎক্ষেপণের প্রস্তুতি চলছে। আজ প্রত্যন্ত গ্রামে পৌঁছে গেছে ইন্টারনেট, কম্পিউটার। সবার হাতে হাতে এখন স্মার্ট ফোন। ইন্টারনেটের জগতে বাংলাদেশ এখন পঞ্চম জেনারেশন বা ফাইভ জি’তে প্রবেশ করেছে। দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নকে দ্রুত এগিয়ে নিয়ে যেতে কৃষি ও শিল্প উৎপাদনের পাশাপাশি যোগাযোগ অবকাঠাম, যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়নের উপর জোর দিয়েছেন তিনি। ব্যবসা-বাণিজ্যের দিক থেকে গুরুত্বপূর্ণ অঞ্চলগুলোকে চিহ্নিত করে আধুনিক যোগাযোগ ব্যবস্থা ও অবকাঠামো গড়ে তোলা হয়েছে এবং ভবিষ্যতেও হবে। নির্মাণাধীন মেগা প্রকল্পগুলোর দিকে লক্ষ্য করলেই এ কথার সত্যতা মিলে।

সাবেক মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী হেনরি কিসিঞ্জার আমাদের ‘তলাবিহীন ঝুড়ি’ বলে আখ্যা দিয়েছিলেন। সেই তলাবিহীন ঝুড়ি এখন বিশ্বের বুকে ‘উন্নয়নের রোল মডেল’ বলে অভিহিত হচ্ছে। হেনরি কিসিঞ্জার তার জীবদ্দশায় দেখতে পাচ্ছেন তার সেই আখ্যা ভুল প্রমাণিত হয়েছে। আর এটি সম্ভব হয়েছে বঙ্গবন্ধুকন্যা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার জন্য। সততা, দৃঢ়তা, একাগ্রতা, উদ্যোম, সাহস ও প্রচেষ্টা থাকলে যে সব প্রতিবন্ধকতা অতিক্রম করা যায়, তা তিনি দেখিয়ে যাচ্ছেন। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান আমাদের স্বাধীন বাংলাদেশ দিয়েছিলেন, তাঁর সুযোগ্য কন্যা আমাদের দিয়েছেন সম্মান ও মাথা উঁচু করে দাঁড়াবার প্রত্যয়। বদলে যাওয়া বাংলাদেশের প্রতিটি কোণায় লিখা আছে শেখ হাসিনার নাম। কারণ তিনি আজকের এই বাংলাদেশের নির্মাতা বা রূপকার।

লেখক : বিসিএস তথ্য, সংযুক্তিতে-প্রেস উইং, প্রধানমন্ত্রী’র কার্যালয়।

 

সুত্রঃ বাংলাদেশ প্রতিদিন