বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইটের নিয়ন্ত্রণ নিবে প্রাইমারি গ্রাউন্ড স্টেশন

সিল্কসিটিনিউজ ডেস্ক:

বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইটের নিয়ন্ত্রণ নিবে বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট প্রাইমারি গ্রাউন্ড স্টেশন। গাজীপুর সিটি কর্পোরেশনের তেলীপাড়ায় টেলিযোগাযোগ স্টাফ কলেজ সংলগ্ন এলাকায় স্টেশনটি স্থাপন করা হয়েছে।

উৎক্ষেপনের পর থেকে প্রাইমারি গ্রাউন্ড স্টেশনে এর নিয়ন্ত্রণ থাকবে। গাজীপুরের জেলা প্রশাসক (ডিসি) ড. দেওয়ান মুহাম্মদ হুমায়ূন কবীর এ তথ্য জানিয়েছেন।

রাঙ্গামাটির বেতবুনিয়ায় এ ধরনের আরেকটি গ্রাউন্ড স্টেশন স্থাপন করা হয়েছে। কিন্তু সেটি হচ্ছে গাজীপুরে স্থাপন করা গ্রাউন্ড স্টেশনের বিকল্প। মূল নিয়ন্ত্রণ কেন্দ্র হবে গাজীপুরের গ্রাউন্ড স্টেশন থেকেই। শিগগিরই প্রাইমারি গ্রাউন্ড স্টেশনটি আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধন করা হবে।

ইতোমধ্যে গাজীপুর জেলা সদরসহ ৪টি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তারা (ইউএনও) উৎক্ষেপণের দৃশ্যটি সরাসরি প্রদর্শন ও ব্যাপক প্রচারণা চালাতে ক্যাবল অপারেটরদের নির্দেশ দিয়েছেন।

স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণের দৃশ্যটি দেখার জন্য গাজীপুরে নেয়া হয়েছে ব্যাপক প্রস্তুতি। টিভিতে সরাসরি প্রচারিত এ বিরল দৃশ্যটি দেখতে অনেকে বিভিন্ন স্থানে বড় পর্দা সাঁটানো হয়েছে। অনেক উৎসুক দর্শক রাত জেগে বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১ উৎক্ষেপণের দৃশ্যটি দেখবেন।

বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১ প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা জানান, স্যাটেলাইটটি সম্পূর্ণ চালু হওয়ার পর এর নিয়ন্ত্রণ বাংলাদেশের গ্রাউন্ড স্টেশনে হস্তান্তর করা হবে। স্যাটেলাইটটি পূর্ণ নিয়ন্ত্রণে আনতে প্রায় ২০ দিন সময় লাগবে।

এদিকে, আগ্রহীদের উৎক্ষেপণ স্থানের তিন থেকে চার কিলোমিটার দূরে অবস্থান করে স্যাটেলাইটের উৎক্ষেপণ দেখতে হবে। ছয় থেকে সাত মিনিটের মধ্যে এটি দেখা যাবে। তার পরপরই উচ্চগতির রকেট চলে যাবে দৃষ্টিসীমার বাইরে। এর দুটি অংশ থাকবে। একটি নির্দিষ্ট সময়ের পর রকেটের স্টেজ-১ খুলে নিচের দিকে নামতে থাকবে। এরপর চালু হবে স্টেজ-২। পুনরায় ব্যবহারযোগ্য স্টেজ-১ পৃথিবীতে এলেও স্টেজ-২ একটি নির্দিষ্ট দূরত্ব পর্যন্ত স্যাটেলাইটকে নিয়ে গিয়ে মহাকাশেই অবস্থান করবে।

দুই ধাপে এ উৎক্ষেপণ প্রক্রিয়ার প্রথম ধাপটি হলো লঞ্চ অ্যান্ড আরলি অরবিট ফেইজ (এলইওপি) এবং দ্বিতীয় ধাপ হচ্ছে স্যাটেলাইট ইন অরবিট। এলইওপি ধাপে ১০ দিন এবং পরের ধাপে ২০ দিন সময় লাগবে।

উৎক্ষেপণ স্থান থেকে ৩৬ হাজার কিলোমিটার দূরে যাবে এই স্যাটেলাইট। ৩৫ হাজার ৭০০ কিলোমিটার যাওয়ার পর রকেটের স্টেজ-২ খুলে যাবে। স্যাটেলাইট উন্মুক্ত হওয়ার পরপর এর নিয়ন্ত্রণ যুক্তরাষ্ট্র, ইতালি এবং কোরিয়ার তিনটি গ্রাউন্ড স্টেশনে চলে যাবে।

ওই তিন স্টেশন থেকে স্যাটেলাইটটিকে নিয়ন্ত্রণ করে এর নিজস্ব কক্ষপথে (১১৯.১ পূর্ব দ্রাঘিমাংশে অরবিটাল স্পট) স্থাপন করা হবে। বাংলাদেশের স্যাটেলাইটটিতে লেখা থাকবে বিবি এবং থাকবে একটি সরকারি লোগো।

বঙ্গবন্ধু-১ স্যাটেলাইট থেকে যেসব সুবিধা পাওয়া যাবে

যোগাযোগ এবং সম্প্রচার কাজেই মূলত বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১ ব্যবহার করা হবে বলে জানিয়েছেন প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা। বাংলাদেশের প্রথম স্যাটেলাইট বঙ্গবন্ধু-১। ৪০টি ট্রান্সপন্ডার থাকছে এ স্যাটেলাইটে। প্রায় ৩৬ মেগাহার্টজ বেতার তরঙ্গের সমপরিমাণ থাকবে প্রতিটি ট্রান্সপন্ডার।

অর্থাৎ প্রায় এক হাজার ৪৪০ মেগাহার্টজ পরিমাণ বেতার তরঙ্গপাওয়া যাবে ৪০টি ট্রান্সপন্ডার থেকে। এর মধ্যে বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ প্রয়োজনে ব্যবহার করবে ২০টি ট্রান্সপন্ডার। বিদেশি রাষ্ট্রের কাছে ভাড়া দেয়ার জন্য রাখা হবে ২০টি ট্রান্সপন্ডার।

৪০টি ট্রান্সপন্ডারের মধ্যে ১৪টি সি ব্যান্ডের এবং ২৬টি হচ্ছে কেইউ ব্যান্ডের। বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট নিয়ন্ত্রিত হবে গাজীপুর ও বেতবুনিয়ায় স্থাপিত দুটি ভূ-উপগ্রহ কেন্দ্র থেকে। এর মধ্যে গাজীপুর প্রধান কেন্দ্র হিসেবে এবং বেতবুনিয়া বিকল্প কেন্দ্র হিসেবে ব্যবহার হবে। এরই মধ্যে প্রস্তুত হয়ে গেছে দুটি ভূ-উপগ্রহ কেন্দ্র। এছাড়া বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইটের বাণিজ্যিক কার্যক্রম পরিচালনার জন্য গঠিত হয়েছে পৃথক একটি রাষ্ট্রায়ত্ত কোম্পানি।

বর্তমানে বাংলাদেশের বিভিন্ন স্যাটেলাইট টেলিভিশন চ্যানেল প্রতি বছর অন্যান্য দেশের স্যাটেলাইট পরিচালনাকারী প্রতিষ্ঠানকে প্রায় দেড় কোটি মার্কিন ডলার সমপরিমাণ অর্থ ভাড়া হিসেবে পরিশোধ করে।

বাংলাদেশের নিজস্ব স্যাটেলাইটের মাধ্যমে সম্প্রচার কার্যক্রম পরিচালিত হলে এ অর্থ বাংলাদেশেই থেকে যাবে। ফলে বড় অঙ্কের টাকার বৈদেশিক মুদ্রাও সাশ্রয় হবে। দেশের বেসরকারি টেলিভিশনগুলোর স্যাটেলাইট ভাড়াবাবদ ব্যয়ও কমে আসবে।

এছাড়া স্যাটেলাইট থেকে পাওয়া যাবে উচ্চগতির ইন্টারনেট ব্যান্ডউইথ। ফলে ব্যান্ডউইডথের বিকল্প উৎসও পাওয়া যাবে। এই ব্যান্ডউইডথ ব্যবহার করে দেশের দুর্গম দ্বীপ, নদী ও হাওর এবং পাহাড়ি অঞ্চলে স্যাটেলাইট প্রযুক্তিতে নিরবচ্ছিন্ন টেলিযোগাযোগ সেবা চালু সম্ভব হবে।

ফলে প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে স্বাভাবিক টেলিযোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হলেও উদ্ধারকর্মীরা স্যাটেলাইট ফোনে যোগাযোগ রেখে দুর্গত এলাকায় কাজ করতে সক্ষম হবেন। বাকি ২০টি ট্রান্সপন্ডার ভুটান, নেপাল ও এশিয়ার অন্য অংশে কিরগিস্তান, তাজিকিস্তানের মতো দেশেও ভাড়া দেয়া যাবে। সেক্ষেত্রে বাংলাদেশ বছরে প্রায় ৫০০ কোটি টাকা আয় করতে সামর্থ্য হবে।