বঙ্গবন্ধু’র ছবি ভাঙা মামলার আসামিদের পক্ষে লড়লেন আ.লীগের আইনজীবী

নিজস্ব প্রতিবেদক:
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ছবি ভাঙা মামলার আসামিদের পক্ষে আদালতে লড়লেন রাজশাহীর আওয়ামীপন্থী একজন আইনজীবী। বৃহস্পতিবার এই মামলার পলাতক পাঁচ আসামিকে আদালতে হাজির করে তিনি তাদের জামিনের আবেদন করেন। আদালত সবার জামিন মঞ্জুর করেন।

এই আইনজীবীর নাম একরামুল হক। তিনি রাজশাহী অ্যাডভোকেট বার সমিতির সাধারণ সম্পাদক এবং জেলা আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা। বার সমিতির আগের নির্বাচনেও তিনি একই পদে নির্বাচিত হয়েছিলেন। এর আগেরবারও তিনি আওয়ামীপন্থী প্যানেল থেকে নির্বাচিত হয়েছিলেন। বঙ্গবন্ধু-প্রধানমন্ত্রীর ছবি ভাঙচুরের মামলার আসামিদের পক্ষে তাঁর অবস্থান নেওয়ায় রাজশাহী বারের আইনজীবীদের মধ্যে সমালোচনা শুরু হয়েছে।

জামিন পাওয়া আসামিরা হলেন, জেলার গোদাগাড়ী উপজেলার হুজরাপুর গ্রামের বাসিন্দা আরমান আলী (৫৩), তার ছেলে মো. আশিক (২০), একই গ্রামের মো. আলাউদ্দিন (৬১), তার ভাই আবদুস সালাম আলী (৫১) এবং আসগর আলী (৩৩)।

গত ১ এপ্রিল মামলা দায়েরের পর থেকেই আসামিরা পলাতক ছিলেন। ইতিমধ্যে পুলিশ শৃঙ্খলা বিঘ্নকারী অপরাধ (দ্রুত বিচার) আইনের এ মামলাটির অভিযোগপত্র দাখিল করেছে।

মামলার নথিপত্র থেকে জানা গেছে, গোদাগাড়ীর হুজরাপুর গ্রামে হাজী হাজারী ওয়াকফ দাখিল মাদ্রাসা নামে একটি মাদ্রাসার সামনের কিছু জমি ইজারা নিয়ে চাষাবাদ করতেন আসামি আরমান আলী। শিক্ষার্থীদের খেলাধূলার অসুবিধার কথা ভেবে কয়েক মাস আগে মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষ আরমানের এই জমির ইজারা বাতিল করে তাকে অন্য কোনো স্থানে জমি দিতে চান। কিন্তু এতে রাজি হননি আরমান আলী। এ নিয়ে মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষের সঙ্গে তার দ্বন্দ্ব শুরু হয়।

এর জের ধরে গত ৩১ মার্চ আরমান আলী তার সহযোগীদের নিয়ে ওই মাদ্রাসায় হামলা চালান। এ সময় হামলাকারীরা মাদ্রাসার নাম লেখা সাইনবোর্ড, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ছবি ভাঙচুর করেন। এছাড়া মাদ্রাসার কার্যালয়ের কিছু আসবাবপত্রও ভাঙচুর করা হয়। এ ঘটনায় মাদ্রাসা তত্ত্বাবধায়ক নাজমুল হোসেন বাদী হয়ে পাঁচজনকে আসামি করে থানায় মামলা করেন।

আদালত সূত্রে জানা গেছে, মামলার নির্ধারিত দিনে বৃহস্পতিবার পলাতক এই আসামিদের রাজশাহীর জ্যেষ্ঠ বিচারিক হাকিম আদালত-১ এ হাজির করা হয়। আইনজীবী একরামুল হক তাদের জামিনের আবেদন করেন। আদালতের বিচারক মো. শরিফুল ইসলাম আসামিদের জামিন মঞ্জুর করেন। তবে আদালতের রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী আঞ্জু মনোয়ারা জামিনের বিরোধীতা করেছিলেন।

আঞ্জু মনোয়ারা বলেন, ‘আমি রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী, তাই জামিনের বিরোধীতা করেছি। কিন্তু বঙ্গবন্ধু-প্রধানমন্ত্রীর ছবি ভাঙচুর মামলার আসামিদের জামিন হয়ে যাওয়ায় খারাপ লাগছে।’

এই আদালতের আইনজীবী ও রাজশাহী মহানগর আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আসলাম সরকার সিল্কসিটি নিউজকে বলেন, ‘মামলাটির অভিযোগপত্র দাখিল হয়েছে মানে প্রাথমিকভাবে ঘটনার সত্যতা প্রমাণিত হয়েছে। আওয়ামী লীগের পদ-পদবীতে থেকে এই মামলার আসামিদের জামিন করানোটা অনৈতিক।’

জানতে চাইলে আইনজীবী একরামুল হক বলেন, ‘জুনিয়র আইনজীবীরা মামলাটি ফাইলিং করেছিলেন। পরে তাদের অনুরোধে আমাকে দাঁড়াতে হয়েছে।’

স/অ