বঙ্গবন্ধুর চিন্তা-চেতনা, আদর্শ ও সততার খণ্ডচিত্র

সিল্কসিটিনিউজ ডেস্ক:

এক নেতাকে একবার এক সাংবাদিক জিজ্ঞেস করেছিলেন, ‘আচ্ছা আপনি মুজিব কোট কেন পরেন?’ সেই নেতা আসলে নিজেও এর কারণ জানতেন না। তাই গতানুগতিক জবাব দিয়েছিলেন, ‘এটা বঙ্গবন্ধু পরতেন বলে পরি, এটা আদর্শ।’

আসলে বঙ্গবন্ধু পরতেন বলে এটি আদর্শ নয়, আদর্শ ছিলো এই কোট পরার পেছনের চিন্তাধারায়।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের এক ছাত্র একবার বাংলাদেশের প্রথম প্রধানমন্ত্রী ও স্বাধীনতা সংগ্রামের অন্যতম নেতা তাজউদ্দিন আহমদের সাথে শেখ মুজিবের বাসায় দেখা করতে গেলেন। ছেলেটা অনেকক্ষণ খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে বঙ্গবন্ধুকে দেখলেন। হুট করে সে বঙ্গবন্ধুকে প্রশ্ন করলো, ‘আপনার কোটের বোতাম ছয়টা কেনো? এ ধরনের কোটে বোতাম আরো বেশি থাকার কথা।’

প্রশ্ন শুনে বঙ্গবন্ধু আপ্লুত হয়ে ছেলেটিকে বুকে জড়িয়ে ধরলেন। বললেন, ‘এমন প্রশ্ন আমাকে আগে কেউ করে নাই, তুই প্রথম। এই ছয়টি বোতাম হলো আমার ঘোষিত ছয় ৬ দফার প্রতীক।’

এই হচ্ছে বঙ্গবন্ধুর চিন্তা চেতনা, যিনি একটা কোটের মধ্যেও ধারণ করেন বিশ্বাস, দাবি, ন্যায্যতা।

১৯৭৩ সালে একবার বঙ্গবন্ধু ভীষণরকম অসুস্থ হয়ে পড়লেন। ডাক্তার বললেন, অপারেশন ছাড়া গতি নেই। পেটে পাথর হয়েছে। সবাই বঙ্গবন্ধুকে পরামর্শ দিচ্ছেন বিদেশে গিয়ে চিকিৎসা করতে। বঙ্গবন্ধু রাজি হলেন না। তিনি বললেন, ‘দেশের অর্থ খরচ করে আমি বিদেশে গিয়ে চিকিৎসা করাবো না। চিকিৎসা করতে হলে দেশেই করতে হবে। এজন্য যদি আমাকে মরতেও হয় তবুও আমি মরতে রাজি আছি। তবুও রাষ্ট্রের অর্থ খরচ করে আমি বিদেশে গিয়ে চিকিৎসা করতে চাই না। এটিই বঙ্গবন্ধুর আদর্শ’।

বঙ্গবন্ধুর আদর্শ ও সততার আরেকটি ঘটনা-

মাওলানা আব্দুল হামিদ খান ভাসানী যখন আওয়ামী লীগের সভাপতি, বঙ্গবন্ধু ছিলেন তখনকার সাধারণ সম্পাদক। ভাসানী সাহেব বঙ্গবন্ধুকে একটি কাজে নারায়ণগঞ্জে পাঠান। সাথে দিয়েছিলেন আট আনা পয়সা। বঙ্গবন্ধু কাজ শেষ করে বিকেলে এসে মাওলানা ভাসানীর হাতে আট আনা পয়সাই ফেরত দেন। ভাসানী সাহেব খুবই অবাক হলেন। জিজ্ঞেস করলেন, ‘ঘটনা কি মুজিব, তুমি নারায়ণগঞ্জ কিভাবে গেলে?’ বঙ্গবন্ধু উত্তর দিলেন, ‘সাইকেল করে গিয়েছি, টাকাটা বেঁচে গেছ’।

এমন সততা ও আদর্শের গল্প রয়েছে অজস্র! এদেশে মানুষের মুখে মুখে থাকার কথার ছিল বঙ্গবন্ধুর গল্প। তামাম দুনিয়া তাদের জাতি গঠনের নায়ককে দল, মত নির্বিশেষে সম্মান দেয়। আর আমাদের দেশে! মানুষটাকে স্বাভাবিক মৃত্যুর অধিকার থেকেও বঞ্চিত করা হয়েছে। তার নাম নিশানা মুছে দেয়ার কী চেষ্টায় না করেছে ঘাতকরা। কিন্তু পারেনি। বঙ্গবন্ধু বেঁচে আছেন বাংলায়।