বগুড়ায় প্লাস্টিকের খালি বোতলে ভাসছে স্বপ্নের বীজতলা

সিল্কসিটিনিউজ ডেস্ক: বন্যা মৌসুমে কৃষকের জন্য আশির্বাদ হয়ে এসেছে ‘ভাসমান মাচা পদ্ধতিতে বীজতলা’।

বন্যাকবলিত এলাকার কৃষকেরা এ পদ্ধতিকে ঘিরে নতুন করে স্বপ্ন দেখতে শুরু করেছেন। কারণ সপ্তাহ খানেকের মধ্যে বন্যার পানি নেমে যাওয়ার সাথে সাথে আউশ ধানের চারা রোপন করতে পারবেন তারা।

ভাসমান মাচায় বীজতলা তৈরিতে স্বল্প খরচ এবং চারা উৎপাদনে ঝুঁকিও কম। ফলে বন্যায় বগুড়ার ক্ষতিগ্রস্থ কৃষক ভাসমান পদ্ধতিতে এই বীজতলার প্রতি আগ্রহী হয়ে উঠেছেন।

সরেজমিনে শুক্রবার বিকেলে বগুড়ার শাজাহানপুর উপজেলার আমরুল ইউনিয়নের বান্যাকবলিত এলাকা পলিপলাশ গ্রামে অ-থৈ পানিতে ভাসতে দেখা যায় ‘ভাসমান মাচা পদ্ধতিতে ধানের বীজতলা’।

এ নিয়ে কথা হয় ওই গ্রামের কৃষক জুলফিকার আলী সাথে। তিনি বলেন, ‘এলাকায় বন্যার পানি ঢুকবে তা কখনও চিন্তা করিনি। দুই সপ্তাহ পূর্বে লাগানো সাড়ে তিন বিঘা জমির পুরোটাই ২য় দফা বন্যার পানির নিচে নিমজ্জিত। তবে পানি কমে যাওয়ার পরপরই জমি গুলোতে ধানের চারা লাগাতে সবাই চেষ্টা করবে। কিন্তু ক্ষতিগ্রস্থ কৃষকদের অসময়ে বিভিন্ন জেলা থেকে এই চারা সংগ্রহ করতে হবে দ্বি-গুণ দামে।  এ কারণেই বন্যাকবলিত এলাকার অনেক কৃষক এবছর আউশ ধান লাগানো নিয়ে উদ্বিগ্ন ছিলেন। তবে ‘ভাসমান মাচা পদ্ধতিতে বীজতলা’ ধান চাষে আমাদের নতুন করে স্বপ্ন দেখাতে শুরু করেছে।’

পার্শ্ববর্তী বন্যাকবিলত গোবিন্দপুর গ্রামের কৃষক লালমিয়া বলেন, ‘কয়েকটি ৫ লিটারের প্লাস্টিকের খালি বোতল আর দুইটি বাঁশ দিয়ে বীজতলা নির্মাণ করা হয়েছে। পানি যতই বৃদ্ধি পাবে না কেন? এই বীজতলা কখনও ডুববেনা। ফলে পানি নেমে যাওয়ার সাথে সাথে চারার আর সংকট হবেনা। এছাড়া এই বীজতলায় রাসায়নিক সার প্রয়োগ করতে হবে না। ফলে স্বল্প শ্রম এবং স্বল্প ব্যয়ে ধানের চারা লাগানো সম্ভব হবে।’

বন্যাকবলিত শাজাহানপুর উপজেলার আমরুল ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আসাদুজ্জামান আটল বলেন, ‘এই ইউনিয়নের ৯টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। ১২৭ হেক্টর ফসলি জমির আবাদ এখনও নিমজ্জিত। স্থানীয় সাংসদ রেজাউল করিম বাবলুর নিজস্ব এবং সরকারি যৌথ অর্থায়নে আগাম জাতের ধানের বীজতলা নির্মাণ কার্যক্রম শুরু হয়েছে। এতে কৃষকদের কিছুটা হলেও উপকারে আসবে।’

বগুড়া-৭ (শাজাহানপুর-গাবতলী) আসনের সংসদ সদস্য মো: রেজাউল করিম বাবলু বলেন, ‘বন্যায় ক্ষতিগ্রস্থ কৃষকদের কথা ভেবেই এবং তাদের ক্ষতি পুষিয়ে উঠতে সরকারের উদ্যোগে ‘ভাসমান মাচা পদ্ধতিতে বীজতলা’ তৈরি করে দেয়া হয়েছে। এতে করে প্রায় ৫শ’ হেক্টর জমির ধানের চারা উৎপাদন হবে। ফলে এই অঞ্চলের সকল কৃষকই পানি নেমে যাওয়ার সাথে সাথে আবারও নতুন করে ধানের চারা লাগাতে পারবেন।’

বগুড়া কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের আঞ্চলিক অফিস সূত্রে জানা গেছে, বাঙালি নদীর পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় জেলার উত্তর পূর্ব অঞ্চলের সাত উপজেলার ১৯ হাজার ৩৬৬ হেক্টর জমির ফসল পানিতে নিমজ্জিত হয়েছে। ফলে এই বীজতলা কৃষকের সুফল বয়ে আনবে।