বগুড়ায় পৌনে দুই লক্ষাধিক চামড়ার হদিস মিলছে না

সিল্কসিটিনিউজ ডেস্ক:

বগুড়ায় এ বছর পবিত্র ঈদুল আজহায় সোয়া তিন লাখের বেশি গবাদি পশু কোরবানি করা হয়েছে। তবে রোববার পর্যন্ত ব্যবসায়ীরা দেড় লক্ষাধিক চামড়া কিনেছেন।

বাকি পৌনে দুই লক্ষাধিক চামড়ার হদিস মিলছে না। তবে বিভিন্ন সূত্র দাবি করছে, বগুড়ায় মূল্য না পাওয়ায় অনেকে চামড়াগুলো পাশের নাটোর, গাইবান্ধা ও সিরাজগঞ্জ জেলায় বিক্রি করেছেন।

বগুড়া জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. রফিকুল ইসলাম তালুকদার জানান, এবারের ঈদের আগে জেলায় তিন লাখ ৮৮ হাজার গরু, মহিষ, ছাগল ও ভেড়া কোরবানির উপযোগী ছিল। কোরবানি করা হয়েছে তিন লাখ ২৬ হাজার ৬৮৯টি পশু। এর মধ্যে গরু এক লাখ ৯৫ হাজার, ছাগল এক লাখ নয় হাজার, ভেড়া ২২ হাজার ৪২১ ও মহিষ ২৬৮টি। তিনি আরও বলেন, চামড়ার হিসাব তাদের কাছে নেই, এটি বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন।

বগুড়ায় এবার কোরবানির পশুর চামড়া পানির দরে বিক্রি হয়েছে। গরুর চামড়া ১০০ থেকে সর্বোচ্চ ৫০০ টাকা এবং ছাগল-ভেড়ার চামড়া বিক্রি হয়েছে ৫ থেকে ২০ টাকা দরে। এরপরও মৌসুমি ব্যবসায়ীদের নিজের পুঁজি দিয়ে চামড়া কিনে তা বিক্রি করতে হিমশিম খেতে হয়। দীর্ঘদিন পর চামড়ার এ দরপতনকে ব্যবসায়ীদের কারসাজিতে ‘গরিবের হক লুট’ বলে আখ্যায়িত করা হয়েছে। চামড়ার মূল্য না থাকায় কোরবানিদাতারা এলাকার গরিবদের আর্থিক সহযোগিতা করতে পারেননি।

বগুড়ার শেরপুরের চামড়া ব্যবসায়ী আবদুল জোব্বার ভাট জানান, এ উপজেলায় চামড়া সংরক্ষণের ছয়টি গুদাম রয়েছে। এর মধ্যে আবদুল লতিফ লাল মিয়া ১৫ হাজার পিস ও অন্যরা সব মিলিয়ে আরও ১৫ হাজার পিস চামড়া কিনে লবণ দিয়ে সংরক্ষণ করেছেন। এছাড়া সদর বাদে অন্য ১০ উপজেলায় আরও ৩০-৪০ হাজার পিস চামড়া সংরক্ষণ করা হতে পারে।

বগুড়া শহরের চকসূত্রাপুর এলাকার চামড়া ব্যবসায়ী জহুরুল ইসলাম জানান, তিনি এবার ঈদে ২৭৫ পিস চামড়া কিনেছেন। প্রতি পিস ৩০০ থেকে ৭০০ টাকায় কেনেন। প্রতি পিস ১০০ থেকে দেড়শ’ টাকা লাভে আড়তদারের কাছে বাকিতে বিক্রি করেছেন। আবুল সরকার নামে এক ব্যবসায়ী জানান, পুঁজির অভাবে তিনি এবার চামড়া কিনতে পারেননি।

বগুড়া জেলা চামড়া ব্যবসায়ী মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক আবদুল মতিন সরকার জানান, পুরো জেলায় তাদের ৩৮৭ সদস্য রয়েছেন। এদের মধ্যে তিনিসহ ২০-২৫ জন ঢাকার ট্যানারি মালিকদের কাছে গত তিন বছরের বিল কমপক্ষে ৩৫ কোটি টাকা পাবেন। চামড়ার দরপতন প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ট্যানারি মালিকরা টাকা না দেয়ায় তারা এবার ঠিকমতো চামড়া কিনতে পারেননি। ফলে চামড়ার দাম পড়ে যায়। তারা প্রতি পিস গরুর চামড়া ৬০০ থেকে হাজার টাকায় কিনেছেন। এছাড়া খাসি ৩০ থেকে ৫০ টাকায় কেনেন।

তবে মৌসুমি ব্যবসায়ীরা আরও কম দামে চামড়া কিনেছেন। ফলে কোরবানিদাতারা চামড়ার প্রকৃত মূল্য পাননি। প্রতি পিস চামড়ায় তাদের শ্রমিক ও লবণ খরচ পড়েছে ২৫০ থেকে ৩০০ টাকা। তিনি আরও জানান, জেলার সব ব্যবসায়ী রোববার পর্যন্ত দেড় লক্ষাধিক চামড়া কিনেছেন। এখনও অনেক ব্যবসায়ী লবণ দিয়ে চামড়া সংরক্ষণ করেছেন। তারা পরে বিক্রি করবেন। পৌনে দুই লক্ষাধিক চামড়ার হদিস নেই প্রসঙ্গে তিনি বলেন, অনেক ব্যবসায়ী চামড়া পার্শ্ববর্তী নাটোর, গাইবান্ধা ও নওগাঁ জেলায় বিক্রি করেছেন। পরবর্তীতে এসব চামড়া বগুড়ায় আসবে।