বগুড়ার ‘পোড়াদহ’ মেলায় লক্ষাধিক টাকার বাঘাইড়!

সিল্কসিটিনিউজ ডেস্ক:

বগুড়ার গাবলীতে উৎসবমুখর ও শান্তিপূর্ণ পরিবেশে ঐতিহ্যবাহী ‘পোড়াদহ’ মেলা শুরু হয়েছে। প্রতি বছর মাঘ মাসের শেষ বা ফাল্গুনের প্রথম বুধবার এ মেলা গত ১৫২ বছর ধরে মেলা অনুষ্ঠিত হচ্ছে।

প্রথা অনুযায়ী আজও একদিনের এ ঐতিহ্যবাহী ‘পোড়াদহ মেলা বসে। মেলায় সকাল থেকে লাখো মানুষের ঢল নামে।

সকাল থেকেই জমে উঠে মেলা। মেলার প্রধান আকর্ষণ ছিল লক্ষাধিক টাকা মূল্যের ৭০ কেজি ওজনের বাঘাইড় মাছ।

এলাকার প্রবীণরা জানান, গাবতলী উপজেলার মহিষাবান ইউনিয়নের গোলাবাড়ি বন্দর এলাকায় গাড়িদহ নদী তীরে সন্ন্যাসী পূজা উপলক্ষে একদিনের ‘পোড়াদহ’ মেলা বসে। প্রায় ১৫২ বছর ধরে ব্যক্তি মালিকানাধীন জমিতে স্থানীয়রা এ মেলার আয়োজন করেন।

এবারের মেলায় ৭০ কেজি ওজনের বাঘাইড় মাছ তোলা হয়েছিল। মাছের মালিক গাবতলী উপজেলার গোলাবাড়ি মধ্যপাড়া গ্রামের মো. বিপুল। এককভাবে এ মাছ কেনা সম্ভব ছিল না। তাই ক্রেতারা কেজি দরে মাছ কিনতে রাজি হন। মাছের মালিক প্রথমে প্রতি কেজি এক হাজার ৭০০ টাকা দাবি করেন। পরে চাহিদা কমে যাওয়ায় প্রতি কেজি দেড় হাজার টাকায় ধার্য হয়। ওই হিসাবে এ মাছের দাম এক লাখ পাঁচ হাজার টাকা।

মাছ ব্যবসায়ী বিপুল জানান, প্রতি বছর তিনি বড় মাছ আমদানির চেষ্টা করে থাকেন। এ মাছটি তিনি যমুনা নদীর মাঝিদের কাছে কেনার দাবি করলেও স্থানীয়রা বলছেন, বাঘাইর মাছটি বগুড়ার চাষী বাজার থেকে সংগ্রহ করেছেন। মেলায় এ মাছের ক্রেতার চেয়ে দর্শক বেশি ছিল। অনেকে মোবাইল ফোনে ছবি সংগ্রহ ছাড়াও সেলফি তুলেছেন।

এদিকে আগামী বৃহস্পতিবার সকালে শুধু নারীদের কেনাকাটার জন্য বসবে ‘বউমেলা’। এ মেলাকে সামনে রেখে আশপাশের প্রতিটি বাড়ি মেয়ে, জামাই, নাতি-নাতনি ও আত্মীয়-স্বজনে ভরে যায়। ঈদ বা অন্য কোনও উৎসবে দাওয়াত না দিলেও পোড়াদহ মেলায় দাওয়াত দেয়া রেওয়াজে পরিণত হয়েছে।

বগুড়া সদরের নিশিন্দারা গ্রামের ব্যবসায়ী আবদুর রহমান জানান, পরিবারের সদস্যরা বড় মাছ খেতে পছন্দ করেন। তাই তিনি প্রতি বছর পোড়াদহ মেলায় আসেন। কিন্তু এত বড় মাছ এককভাবে কেনা সম্ভব নয়; তাই তিনি ৩ কেজি কাটা মাছ কিনেছেন।

গাবতলী উপজেলার মহিষাবান গ্রামের কৃষক রশিদুল ইসলাম জানান, তিনি ২ কেজি মাছ কিনেছেন। এছাড়াও মেলায় ৪৯ কেজি ওজনের বাঘাইর, ১০ কেজি ওজনের বোয়াল, ১৫ কেজি ওজনের চিতল, ২০ কেজি ওজনের কাৎলা ছাড়াও বিভিন্ন প্রজাতির মাছ উঠেছিল।

মেলার পরিচালক মহিষাবান ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আমিনুল ইসলাম জানান, শান্তিপূর্ণ পরিবেশে পোড়াদহ মেলা অনুষ্ঠিত হচ্ছে। বৃহস্পতিবার সকালে শুধু নারীদের কেনাকাটার জন্য ‘বউমেলা’ অনুষ্ঠিত হবে।

গাবতলী থানার ওসি সেলিম হোসেন জানান, শান্তিপূর্ণ ও সুশৃংখল পরিবেশে ঐতিহ্যবাহী পোড়াদহ মেলা অনুষ্ঠিত হয়। কোথাও কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি।

এছাড়া মেলায় হরেক রকম মিষ্টি বিক্রি হয়। প্রতি কেজি মিষ্টি ২০০ থেকে ৩০০ টাকায় বিক্রি হয়। ৮ কেজি ওজনের একটি মাছ আকৃতি মিষ্টি বিক্রি হয় ৫ হাজার টাকায়।

এ ছাড়া মেলায় কাঠ ও স্টিলের আসবাবপত্র, কুল, নানা ধরনের আচার, গরু, মহিষ ও খাসির গোশত, পিঁয়াজ, মরিচসহ সব ধরনের নিত্য প্রয়োজনীয় সামগ্রী তোলা হয়েছিল।

বিনোদনের জন্য মেলায় ছিল মোটরসাইকেল খেলা, সার্কাস, যাদু ও নাগরদোলা।

এদিকে আগামী বৃহস্পতিবার সকালে শুধু নারীদের কেনাকাটার জন্য বসবে ‘বউমেলা’। এ মেলাকে সামনে রেখে আশপাশের প্রতিটি বাড়ি মেয়ে, জামাই, নাতি-নাতনি ও আত্মীয়-স্বজনে ভরে যায়। ঈদ বা অন্য কোনও উৎসবে দাওয়াত না দিলেও পোড়াদহ মেলায় দাওয়াত দেয়া রেওয়াজে পরিণত হয়েছে।

প্রশাসনের কঠোরতায় মেলায় কোনো জুয়া বা অশ্লীল নৃত্য হয়নি। তবে, মেলায় ইচ্ছামতো টোল আদায় ও অব্যবস্থাপনা ছিল বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।