বগমারায় সরকারী খালে ইউপি সদস্যের অবৈধ বাঁধ

বাগমারা প্রতিনিধি:
রাজশাহীর বাগমারায় সরকারী খালে অবৈধ ভাবে পাকা বাঁধ দিয়ে অবাধে পানি প্রবাহ বন্ধ করে দিয়েছে নরদাশ ইউনিয়নের এক প্রভাবশালী ইউপি সদস্য রফিকুল ইসলাম। সরকারী খালে অবৈধভাবে পাকা বাঁধ দিয়ে মাছ চাষের চেষ্টা করে চলেছেন রফিকুল ইসলামসহ তার সহযোগীরা।

এর আগে বিষয়টি নিয়ে নরদাশ ইউনিয়নের আরেক ইউপি সদস্য সেকেন্দার আলী লিখিত অভিযোগ করে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার দপ্তরে। অভিযোগের ভিত্তিতে স্থানীয় পত্রিকাসহ অনলাইনে নিউজ প্রকাশিত হওয়ার পর ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) আব্দুল্লাহ আল মামুন।

বাঁধটি ভেঙ্গে ফেলার জন্য ইউপি সদস্য রফিকুল ইসলামকে আদেশ দেন সহকারী কমিশনার( ভূমি)। প্রশাসনের কাছে বাঁধটি ভেঙ্গে ফেলার মুচলেকা প্রদান করেলেও সেটা অমান্য করে সেই খালে বাঁধটি নির্মান করে তারা। এমন সংবাদ প্রত্রিকায় পুনরায় প্রকাশ হওয়ার পর নড়েচড়ে প্রশাসন। সংবাদ প্রকাশের পর ঘটনা স্থলে গিয়ে সরকারী খালে নির্মিত সেই বাঁধটি ভেঙ্গে ফেলতে উচ্ছেদ অভিযান পরিচারনা করেন প্রশাসন। খালে পানি অতিরিক্ত পানি থাকার ফলে সঠিক ভাবে উচ্ছেদ অভিযান সফল হয়নি।

উচ্ছেদ অভিযান শেষে প্রশাসন ফিরে এলে প্রায় ১৫ দিন পর অবৈধ ভাবে খালের উপরে নির্মিত বাঁধের জায়গায় শুরু করেছে বালি ভরাটের কাজ। একের পর এক প্রশাসনের অভিযানকে তোয়াক্কা না করে দিব্যি কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন সেই প্রভাবশালী ইউপি সদস্য রফিকুল ইসলাম সহ তার সহযোগীরা।

প্রভাবশালী ইউপি সদস্য রফিকুল ইসলাম কিসের জোরে প্রশাসনকে অমান্য করে কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন এমন প্রশ্ন দেখা দিয়েছে এলাকাবাসীর মনে। ওই খালে বাঁধটি নির্মান করায় বন্যার আগেই সামান্য বৃষ্টির পানিতে বিপাকে পড়েছে এলাকার লোকজন। প্রশাসনের আদেশ অমান্য করে সেই স্থানে বর্তমানে বালি দিয়ে ভরাট অব্যাহত রয়েছে।

জানাগেছে, দীর্ঘদিন থেকে নরদাশ ইউনিয়নের হাতিয়ার বিল এবং কোলার বিলে চারপাশের লোকজন যৌথভাবে শেয়ারের ভিত্তিতে কৃষি জমিতে ধান চাষের পাশাপাশি মাছ চাষ করে আসছে। বিলটিতে বন্যার সময় বন্যা আসলেও তাতে কৃষকের তেমন কোন ক্ষতি হয় না। কারণ ওই দুটি বিল সহ পাশের গোবিন্দপাড়া ইউনিয়নের কইচা বিল, দাইমা বিল এবং হড়ংবিলের পানি কোলার বিলের মাঝখান থেকে চন্ডিপুর গ্রামের ব্রীজের নিচ দিয়ে ২০-২৫ ফিট প্রশস্থ একটি হাতিনার দাঁড়া (পানি নামার জায়গা) আছে যা সরকারী খাস। দাঁড়াটি বিলের মাঝ দিয়ে হাট-মাধনগর ব্রীজের কাছে কম্পো নদীর সাথে মিলিত হয়েছে। এতে করে বিল দুটিতে পানির সমন্বয় রক্ষা হয়। সেই সাথে ওই খাঁল দিয়েই কয়েকটি বিলের অতিরিক্ত পানি নিষ্কাশন হয়ে থাকে। ফলে বিনা ঝামেলায় কৃষকরা ধান সহ অন্যান্য ফসলের আবাদ করতে পারছে।

নরদাশ ইউনিয়নের চন্ডিপুর ব্রীজের কাছে হাতিনার দাঁড়ার উপরে পাকাপোক্ত ভাবে এই আরসিসি বাঁধ নির্মাণ কাজ শেষ করেছে।

বালি দিয়ে খাল ভরাট করার ফলে নরদাশ এবং গোবিন্দপাড়া ইউনিয়নের ৪-৫ টি বিলের ধান চাষ হুমকির মুখে পড়বে এমন আশঙ্কা এলাকাবাসীর। বালি দিয়ে ভরাটের ফলে কোন ভাবেই পানি অবাধে চলাচল করতে পারবেনা। ফলে অপুরণীয় ক্ষতির মুখে পড়বে কোলার বিল সহ কয়েকটি বিলের হাজার হাজার কৃষক।

বালি ভরাটের ঘটনাকে কেন্দ্র করে যে কোন সময় কৃষকের সাথে প্রভাবশালী ইউপি সদস্য রফিকুল ইসলামের লোকজনের মধ্যে রক্তক্ষয়ি সংঘর্ষের সৃষ্টি হতে পারে।

বালি ভরাটের ঘটনায় ইউপি সদস্য রফিকুল ইসলামের সাথে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে বালি ভরাটের বিষয়টি অস্বীকার করে বলেন এটা আশেপাশের বাড়ির মালিকরা করতে পারে।

এ ব্যাপারে সহকারী কমিশনার (ভূমি) আব্দুল্লাহ আল মামুনের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, বাঁধটি ভেঙ্গে ফেলার জন্য উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনা করেছি। তিনি আরো বলেন ঘটনাস্থল পরিদর্শনে হাট-মাধনগর ইউনিয়ন ভূমি অফিসের তহসিলদারকে পাঠানো হয়েছে। প্রশাসনকে না জানিয়ে গোপনে কেন সেই স্থানে বালি ভরাট করা হচ্ছে সে বিষয়ে প্রশাসনের পক্ষ থেকে দ্রুত আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।

স/অ