ফোনে হুমকি পেয়ে সেদিন কেঁদে দেন খাসোগি

তুরস্কের সৌদি দূতাবাসে আলোচিত সাংবাদিক জামাল খাসোগিকে হত্যার আগে হুমকি দিয়েছিলেন এক কর্মকর্তা।  সেই হুমকির শুনে এক পর্যায়ে কেঁদে দেন তিনি।   

মঙ্গলবার তুরস্কের এক আদালতে এ তথ্য জানান জামাল খাসোগির এক ঘনিষ্ট বন্ধু। খবর এএফপির।

খাসোগিকে হুমকি দেয়া সেই কর্মকর্তা হলেন সৌদি যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমানের ঘনিষ্ট হিসেবে পরিচিত সাবেক গোয়েন্দা কর্মকর্তা কাহতানি আল সৌদ। 

নিহত সাংবাদিক খাসোগির ওই ঘনিষ্ট বন্ধু হলেন মিসরের আইমান নূর।  তিনি মিসরের একজন রাজনীতিবিদ, যার সঙ্গে জামাল খাসোগির ছিল দীর্ঘদিনের বন্ধুত্ব।

তুর্কি আদালতে দেয়া বক্তব্যে খাসোগির বন্ধু আইমান নূর বলেন, জামাল আমাকে বলেছিল, ২০১৬ সাল থেকে কাহতানি তাকে অব্যাহতভাবে হুমকি দিয়ে আসছে। 

তিনি বলেন, খাসোগি যখন ওয়াশিংটনে ছিলেন তখন তাকে যুবরাজের ঘনিষ্ট কর্মকর্তা কাহতানি ফোনে তাকে বলেছিল, তিনি ও তার সন্তানরা কোথায় থাকে তা তারা জানে। খাসোগি তখন কেঁদে দেন। যা ছিল অস্বাভাবিক। আর তিনি আমাকে বলেছিলেন, তিনি খুবই ভয় পেয়েছেন। 

৫৯ বছর বয়সী সাংবাদিক খাসোগিকে ইস্তান্বুলের সৌদি দূতাবাসে ২০১৮ সালের ২ অক্টোবর হত্যা করা হয়।  তিনি এক তুর্কি নারীকে বিয়ের প্রস্তুতি হিসেবে কাগজপত্র সংক্রান্ত বিষয়ে দূতাবাসে গিয়েছিলেন। 

যুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা সিআইএ বলছে, সৌদি প্রিন্স মোহাম্মদ বিন সালমান এই হত্যাকাণ্ডের নির্দেশ দেন বলে তাদের ধারণা। তবে সৌদি কর্মকর্তারা এই অভিযোগ অস্বীকার করেছেন।

খাসোগি হত্যা নিয়ে প্রথম থেকেই সরব ছিল তুরস্ক। দেশটি বরাবরই এটিকে হত্যাকাণ্ড বলে উল্লেখ করেছে।

গত ২০ অক্টোবর সৌদি আরবের যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমান ও অন্যান্য কর্মকর্তার বিরুদ্ধে মার্কিন আদালতে মামলা করেছেন নিহত সাংবাদিক জামাল খাশোগির বাগদত্তা খাদিজা সেনজিজ। 

এতে বছর দুয়েক আগে ইস্তানবুলের সৌদি কনস্যুলেটে নৃশংস হত্যাকাণ্ডের শিকার হওয়ার ঘটনায় ক্ষতিপূরণ দাবি করা হয়েছে।

যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক এ লেখককে হত্যার ঘটনায় যুবরাজ মোহাম্মদ ও আরও ২৮ ব্যক্তির কাছে ক্ষতিপূরণ দাবি করেছেন তুর্কি নাগরিক খাদিজা ও মানবাধিকার সংস্থা ডেমোক্র্যাসি ফর দ্য আরব ওয়ার্ল্ড নাউ (ডিএডব্লিউএন)।

সাংবাদিক খাসোগি বেশ কয়েক দশক ধরে সৌদি রাজ পরিবারের ঘনিষ্ঠ ছিলেন এবং দেশটির সরকারের উপদেষ্টা হিসেবেও কাজ করেছেন।

২০১৭ সাল থেকে তিনি আমেরিকায় স্বেচ্ছা নির্বাসনে যান। সেই সময় থেকেই তিনি ওয়াশিংটন পোস্টে যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমানের কার্যক্রম সমালোচনা করে প্রতি মাসে কলাম লিখতেন।

২০১৭ সালের সেপ্টেম্বরে তার প্রথম কলামে তিনি যুবরাজের বিরোধিতা করার জন্য গ্রেফতার হতে পারেন বলে আশঙ্কাও প্রকাশ করেছিলেন।

খাসোগি হত্যায় যে রায় দিল সৌদি আরব

ইস্তাম্বুলের সৌদি কনস্যুলেটে সাংবাদিক জামাল খাসোগি হত্যার ঘটনায় আটজনকে দোষী সাব্যস্ত করে বিভিন্ন মেয়াদে সাজা দিয়েছে সৌদি আরব। 

গত ৭ সেপ্টেম্বরে ওই রায় দেয়া হয়। সৌদি প্রেস এজেন্সির বিবৃতিতে বলা হয়, খাসোগি হত্যাকাণ্ডে দোষী সাব্যস্ত করে পাঁচজনের বিরুদ্ধে ২০ বছর করে কারাদণ্ড ঘোষণা করেছে দেশটির একটি আদালত। 

এছাড়া আরও তিন ব্যক্তিকে সাত থেকে দশ বছর পর্যন্ত বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ড দেয়া হয়েছে। সৌদি প্রসিকিউশন একে চূড়ান্ত রায় বলে উল্লেখ করেছে বলে আল জাজিরার খবরে বলা হয়েছে। 

গত বছরের ডিসেম্বরে খাসোগি হত্যার ঘটনায় সৌদি আদালত পাঁচজনকে মৃত্যুদণ্ডাদেশ দেন ও তিনজনকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন।

পরে খাসোগির পরিবার বলেছে, তারা হত্যাকারীদের ক্ষমা করেছে। সৌদি আইন অনুসারে আনুষ্ঠানিকভাবে তাদের মুক্তির অনুমোদন দিয়েছে। সোমবার যাদের বিরুদ্ধে সাজা ঘোষণা করা হয়েছে তাদের মধ্যে পাঁচজনকে এর আগে মৃত্যুদণ্ড দেয়া হয়েছিল।

সৌদি রাজ পরিবারের সমালোচক ছিলেন সাংবাদিক জামাল খাসোগি। একারণেই তিনি দেশটি থেকে নির্বাসিত ছিলেন। খাসোগি যুক্তরাষ্ট্রের প্রভাবশালী সংবাদ মাধ্যম ওয়াশিংটন পোস্টে নিয়মিত কলাম লিখতেন। 
সূত্রঃ যুগান্তর