ফুলবাড়ীয়ায় পুলিশের গুলিতে চোখ হারানো মেহেদী চাইলেন বিচার

সিল্কসিটিনিউজ ডেস্ক:

‘আমার সামনে লম্বা জীবন। কিন্তু একটি চোখ পুলিশের গুলিতে নষ্ট হয়ে গেছে। দুই চোখের বদলে এখন এক চোখেই দেখতে হবে পৃথিবীর আলো। আমি রাজমিস্ত্রি। আমাদের টাকা-পয়সা নাই। কীভাবে চিকিৎসা করব? আমি বিচার চাই দোষী পুলিশের।’

 

কথাগুলো বলছিলেন ২২ বছরের টগবগে তরুণ ময়মনসিংহের ফুলবাড়ীয়া উপজেলার রাজমিস্ত্রি মেহেদী। ফুলবাড়ীয়া কলেজ সরকারীকরণ আন্দোলনকারীদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষের সময় পুলিশের বুলেটে তাঁর ডান চোখ নষ্ট হয়ে গেছে।

 

আজ সোমবার দুপুরে ফুলবাড়ীয়ার পল্লীতে নিজ বাড়িতে এনটিভি অনলাইনকে একান্ত আলাপচারিতায় কথাগুলো বলেন মেহেদী।

 

ফুলবাড়ীয়া কলেজ সরকারীকরণ আন্দোলনকারীদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষ হয়েছে গত ২৭ নভেম্বর। এ সময় কলেজের এক শিক্ষকসহ দুজন নিহত হন। আহত হন আরো ২০ জন। তাঁদেরই একজন ফুলবাড়ীয়া জোড়বাড়িয়া গ্রামের রাজমিস্ত্রি মেহেদী। কাজ শেষে বাড়ি ফেরার পথেই সংঘর্ষের মধ্যে পরে যান তিনি। পাশেই এক স্বজনের বাসায় আশ্রয় নিতে যান মেহেদী। যাওয়ার পথে পালানোর সময় হঠাৎ পুলিশের মুখোমুখি হন তিনি। আন্দোলনকারী মনে করে পুলিশ তাঁর দিকে গুলি ছোড়ে। পুলিশের নিক্ষেপ করা বেশ কিছু বুলেট তাঁর শরীর, মাথা ও ডান চোখে বিদ্ধ হয়। খবর পেয়ে বাবা আজগর আলী রক্তাক্ত অবস্থায় মেহেদীকে নিয়ে ছুটে যান পল্লী চিকিৎসক ফারুক হোসেনের চেম্বারে। প্রাথমিক চিকিৎসা শেষে তাঁকে সরকারি হাসপাতালে যেতে পরামর্শ দেন ফারুক হোসেন।

 

ফারুক হোসেন বলেন, ‘চোখে রাবার বুলেট বিদ্ধ হয়ে রক্তাক্ত অবস্থায় চেম্বারে আসেন মেহেদী। আমার চিকিৎসা করার সক্ষমতা না থাকায় রক্ত পরিষ্কার করে ব্যথার ওষুধ দিয়ে তাঁকে সরকারি হাসপাতালে যাওয়ার পরামর্শ দেই।’

 

মেহেদী জানান, এরপর ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বহির্বিভাগ, বেসরকারি পারমিতা চক্ষু হাসপাতাল হয়ে ঢাকায় জাতীয় চক্ষু বিজ্ঞান ইনস্টিটিউটে যান তিনি। সেখানে তিনদিন চিকিৎসা শেষে ২ নভেম্বর তাঁকে ছাড়পত্র দেওয়া হয়।

 

ছাড়পত্রে সহকারী রেজিস্ট্রার (অজ্ঞাত) বলেছেন, মেহেদীর চোখ নষ্ট হয়ে গেছে। তিনি ওই চোখে আর পৃথিবীর আলো দেখতে পারবেন না। আগামী শনিবার ফের অস্ত্রোপচারের জন্য তাঁকে যেতে বলা হয়েছে। কিন্তু বাবা রাজমিস্ত্রি আজগর আলীর টাকা নেই্। ছেলের চিকিৎসায় এরই মধ্যে তাঁর ৭৫ হাজার টাকা খরচ হয়েছে। আরো লাগবে। তাই তিনি বিত্তবান ও সরকারের কাছে সাহায্য চেয়েছেন।

আজগর আলী বলেন, ‘দশম শ্রেণিতে পড়ুয়া ছেলেকে সংসার চালাতে নিজের পেশায় নিয়োজিত করেছিলাম। সে আর আগের মতো আমাকে সহায়তা করতে পারবে না। এটাই বড় দুঃখ।’

 

মেহেদী বলেন, ‘আমি গরিব। আমাকে কাজকাম করে খেতে হবে। আমার কী অপরাধ। বিনা দোষে পুলিশের গুলিতে আমার চোখ নষ্ট হয়ে গেল। আমি এর বিচার চাই।’

সূত্র: এনটিভি