ফারাক্কার গেট খোলার প্রভাবে লালপুরে কৃষিতে কোটি টাকার ক্ষতি

নিজস্ব প্রতিবেদক,নাটোর
ফারাক্কার গেট খুলে দেওয়ার প্রভাবে সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হয়েছে কৃষিতে। পানি বৃদ্ধির কারনে নাটোরের লালপুরের পদ্মার চরে চাষ করা শাখ-সবজি,পাট, আখ, আউশ ধান সহ ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে বিভিন্ন ফসলের। তাছাড়া ফলের বাগানে পানি ঢুকে পড়ায় ক্ষতি হয়েছে লাখ লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে থাই পেয়ারা ও লেবু বাগানে। তবে কোটি পটাকার ক্ষতির পরিমান নির্ধারণ করে ক্ষতিগ্রস্থ কৃষকদের তালিকা করছে কৃষি বিভাগ।

 
এদিকে লালপুর উপজেলার নর্থবেঙ্গল সুগার মিলে আখের বেশির ভাগ যোগান আসে পদ্মার আখ থেকে। কিন্তু এবার চরের বেশির ভাগ আখ ডুবে যাওয়ায় আগামী মৌসুমে মিলটি আখ সংকটে পড়তে পারে বলে ধারনা করছেন কৃষক ও সংশ্লিষ্টরা।

 
লালপুর উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর জানায়, লালপুর উপজেলার পদ্মার চরে মোট ৩হাজার ২৪০হেক্টর আবাদি জমি রয়েছে। কিন্তু  ফারাক্কার গেট খুলে দেওয়ার কারণে হঠাৎ করেই চরের শাখ-সবজি, আউশ ধান, পাট, কুমড়ার ক্ষেত তলিয়ে নষ্ট হয়ে যায়। ক্ষতি গ্রস্থের মধ্যে তলিয়ে গেছে সবজি ৭০হেক্টর, আউশ ধান ৩৫হেক্টর এবং পাট ২০হেক্টর। তবে চরে আখ বেশি চাষ হলেও এর কোন পরিসংখ্যান নেই কৃষি বিভাগের কাছে।

 
এদিকে, পদ্মার চরে এবং নদীর পাড়ে গড়ে উঠা থাই পেয়ারা এবং লেবু বাগান প্লাবিত হয়ে পড়েছে। তবে প্লাবিত ফল বাগানের পরিসংখ্যানও নেই কৃষি বিভাগের কাছে। কৃষি বিভাগ বলছে, ফল বাগানে পানি ঢুকলেও গাছ নষ্ট হবেনা। পানি নেমে যাওয়ার পর বাগানগুলো আবারো গড়ে উঠবে।

 
নাটোরের লালপুর উপজেলার বিলমাড়িয়া ইউনিয়নের নওসাড়াপুর গ্রামের আব্দুল কুদ্দুস। পেশায় একজন সরকারী চাকুরিজীবি হলেও চড়ে ২০বিঘা জমির ওপর এই প্রথম থাই পেয়ারা এবং লেবু বাগান করেছিলেন তিনি। কিন্তু ফারাক্কার গেট খুলে দেওয়ায় হঠাৎ করেই পানিতে তার বাগান দুটি প্লাবিত হয়েছে পড়েছে। কিছু দিন আগেও পাইকারী ব্যবসায়ীরা তার গাছের পেয়ারার ভালো দাম বলেলেও এখন আর কেউ নিতে যাচ্ছে না।

 
ক্ষতিগ্রস্থ’ থাই পেয়ারা চাষী আব্দুল কুদ্দুস বলেন, ১৯৮৮সালের পর থেকে চরের কোন বন্যার পানি উঠেনি। কিন্তু এবার হঠাৎ করেই পানি বৃদ্ধির কারনে সব তলিয়ে গেছে। পেয়ারা সহ গাছে মরে যাচ্ছে, আকষ্মিক এই বণ্যায় প্রায় ৮লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে। তবে সরকারের কাছে আবেদন কিছু আর্থিক সহায়ত করলা এই বিপর্যয় কাটিয়ে উঠা সম্ভব হবে।

 
শুধু আব্দুল কুদ্দুস নয়, ফারাক্কার গেট খুলে দেওয়ার প্রভাবে কুমড়ার ক্ষেত, পাট, আখ, আউশ ধান সহ বিভিন্ন ফসলের ব্যাপক ক্ষতির স্বীকার হয়েছে চরের অন্যান্য কৃষকরা। ১৯৮৮সালের পর এবারের বণ্যায় ফসলের ক্ষতি হওয়ায় দিশেহারা হয়ে পড়েছেন কৃষকরা।

 
নওসাড়া চরের কৃষক হেলাল মোল্লা বলেন, চরে যা ছিল সব ধুয়ে-মুছে চলে গেছে। যে টুকু ফসলের আশা করেছিলাম সবটুকু পানিতে ভেসে গেছে। কোন ফসল পাওয়ার আর আশা নেই। এখন ছেলে-মেয়েদেরকে কি খাওয়াবো কি করব বুঝতে পারছিনা।
একই চরের আরেক কৃষক বেলাল হোসেন বলেন, এই মৌসুমে কুমড়ার চাষ হয় ব্যাপক। কিন্তু পানির কারণে সব তলিয়ে নষ্ট হয়ে গেছে। হাজার হাজার টাকা খরচ করে এখন এক টাকাও পাওয়া যাবে না আর। এ অবস্থায় সরকারী সহায়তার দাবী জানাচ্ছি।

 
লালপুর উপজেলার কৃষি কর্মকর্তা হাবিবুল ইসলাম খান সিল্কসিটি নিউজকে বলেন, পুরো চর সরেজমিনে পরির্দশন করেছি। উঠতি ফসলের মধ্যে আউশ ধান, পাট কাটার কারনে কম পরিমানে ডুবেছে। তাছাড়া সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হয়েছে সবজি ক্ষেতগুলোর। প্রাথমিক ভাবে কৃষি বিভাগ এক কোটি টাকার ক্ষতি নিরুপন করেছে।

 
কৃষি কর্মকর্তা আরো বলেন, বন্যার পানি নেমে যাওয়ার সাথে সাথে কৃষকরা আগাম সবজি চাষের পাশাপাশি অন্যান্য ফসল উৎপাদন করে এই ক্ষতি পুষিয়ে নিতে পারবে।

 
নাটোরের জেলা প্রশাসক খলিলুর রহমান সিল্কসিটি নিউজকে বলেন, বন্যায় ক্ষতিগ্রস্থ কৃষকদের ক্ষতি নিরুপনের জন্য স্থানীয় কৃষি বিভাগকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্থ’ কৃষকদের তালিকা করে পুর্নবাসনের জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
স/শ