ফাঁকা মাঠ চষে বেড়াচ্ছে আ.লীগের হিরা বাচ্চু, ফোনেও নেই জাপা প্রার্থী আনসার

মইদুল ইসলাম মধু
রাজশাহীর পুঠিয়ায় বইছে উপজেলা নির্বাচনের হাওয়া ভোটারদের মন জয় করতে গানের শুরে শুরে ভোট চাইছেন প্রার্থীরা। প্রতিক বরাদ্দের পর প্রতিকুল আবহাওয়াকে উপেক্ষা করে প্রার্থীরা ছুটছেন ভোটারদের দ্বারে দ্বারে।

নিজেদের প্রতিকে ভোট চেয়ে ভোটাদের দিয়ে যাচ্ছেন বিভিন্ন প্রতিশ্রুতি। এবার বিএনপি নির্বাচনে অংশ না নেয়ায় শরিকদল জাতীয় পার্টির সঙ্গে প্রতিদ্বন্দীতা করছে আ.লীগ। তবে আ.লীগের প্রার্থী নির্বাচনী মাঠ চষে বেড়ালেও নির্বাচনী মাঠে নেই প্রতিদ্বন্দী জাপা প্রার্থী।নির্বাচনী এলাকার কোথাও নেই প্রার্থীর পোষ্টার, নেই কোন রকম প্রচার সামগ্রি এমনকি ফোনে পর্যন্ত পাওয়া যায়না জাতীয় পার্টি মনোনিত চেয়ারম্যান প্রার্থী আনসার আলীকে।

গত ২০ ফেব্রুয়ারী প্রতিক বরাদ্দের দিন থেকে ৬ মার্চ পর্যন্ত বিভিন্ন সময়ে তাকে ফোন করে পাওয়া যায়নি। গত ১ মার্চ তার ব্যক্তিগত মোবাইল নাম্বারে এসএমএস করা হলে তিনি তাতেও সাড়া দেননি। ফলে নির্বাচনী মাঠে ভোটারদের মুখে মুখে নৌকার বিজয় নিশ্চিত বলে গুজব রটেছে।

তবে আ.লীগের প্রার্থী জি এম হিরা বাচ্চু বলেন, মাঠে প্রতিদ্বন্দী প্রার্থী না থাকলেও তারা প্রচার প্রচারনায় কোন ঘাটতি রাখেননি। এদিকে ভোটাররা বলছেন চেয়ারম্যান পদে নির্বাচনী মাঠে তেমন উত্তাপ না ছড়ালেও ভাইস-চেয়ারম্যান ও মহিলা ভাইস-চেয়ারম্যান পদের প্রার্থীরা ভোটের মাঠে কিছুটা উত্তাপ ছড়াচ্ছে।

উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তার কার্যালয় সুত্রে জানা গেছে, প্রথম ধাপে উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে আগামী ১০ মার্চ ভোট গ্রহন অনুষ্ঠিত হবে। চেয়ারম্যান পদে আ.লীগের (নৌকা প্রতিকে) জি এম হিরা বাচ্চু ও জাতীয় পার্টির (লাঙ্গল প্রতিকে) আনসার আলী প্রতিদ্বন্দীতা করছেন। ভাইস-চেয়ারম্যান পদে আবদুল মতিন মুকুল (চশমা প্রতিকে) ও জামাল উদ্দিন (তালা প্রতিকে) এবং মহিলা ভাইস-চেয়ারম্যান পদে মতিয়া হক (সেলাই মেশিন) আকলিমা খাতুন (কলস) পরিজান বেগম (ফুটবল) ও মৌসুমি রহমান (বৈদুতিক পাখা) মার্কা নিয়ে প্রতিদ্বন্দীতা করছেন।

সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে, পুঠিয়ার ৬ টি ইউনিয়ন ও একটি পৌরসভা জুড়ে নৌকা মার্কা, তালা মার্কা, চশমা মার্কা, কলস মার্কা, বৈদুতিক পাখা মার্কা ও ফুটবল মার্কার পোস্টার সাটানো রয়েছে। গত কয়েকদিনের প্রতিকুল আবহওয়ায় প্রার্থীদের পোষ্টার ছিড়ে মাটিতে পড়ে গেছে। তবে নির্বাচনী এলাকার কোথাও জাতীয় পার্টির লাঙ্গল প্রতিক ও মহিলা ভাইস-চেয়ারম্যান প্রার্থী বিএনপি নেত্রী মতিয়া হকের সেলাই মেশিন প্রতিকের পোষ্টার দেখা যায়নি। অন্যন্য প্রার্থীদের পক্ষে মাইকিং করে ভোট চাওয়া হলেও তাদের কোন প্রচার সামগ্রী চোখে পড়েনি। পোষ্টার মাইকিং তো দুরের কথা প্রার্থীদেরও দেখা নেই প্রচার প্রচারনায়। ভোটারদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, মতিয়া হককে মাঝে মাঝে উপজেলা সদরে আসতে দেখা গেলেও আনসার আলীকে ভোটাররা চোখের দেখাও দেখতে পাচ্ছেন না। ফলে নির্বাচনী মাঠে চেয়ারম্যান পদে ভোটের উত্তাপ নেই বললেই চলে। তবে কিছুটা হলেও উত্তাপ ছড়াচ্ছেন ভাইস-চেয়ারম্যান ও মহিলা ভাইস-চেয়ারম্যান প্রার্থীরা। তারা নিয়মিত বিভিন্ন স্থানে গিয়ে নিজেদের প্রতিকে ভোট চেয়ে গণসংযোগ করছেন। ইউনিয়নে ইউনিয়নে অনুষ্ঠিত বিভিন্ন ধর্মীও অনুষ্ঠানে উপস্থিত হয়ে দোয়া চেয়ে ভোটারদের কাছে পরিচিত হচ্ছেন চেয়ারম্যান ও ভাইস-চেয়ারম্যান প্রার্থীরা। পিছিয়ে নেই মহিলা ভাইস-চেয়ারম্যান প্রার্থীরা গণসংযোগ করে নিজেদের প্রতিকে ভোট চাইছেন আকলিমা খাতুন, পরিজান বেগম ও মৌসুমি রহমানও।

ভালুকগাছি ইউনিয়ন এলাকার বাসিন্দা মজের আলী জানান, তিনি দেশ স্বাধীনের পর উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে কয়েকবার ভোট দিয়েছেন কিন্তু এবারের মত নিরুত্তাপ ভোট তিনি একবারও দেখেননি। শিলমাড়িয়া ইউনিয়নের বাসিন্দা আশরাফ আলী জানান, জাতীয় নির্বাচনের চেয়েও বেশি উৎসবমুখোর হয় উপজেলা পরিষদ নির্বাচন। কারন হিসেবে তিনি জানান, এ নির্বাচনে তিন পদে একাধিক প্রার্থী থাকে ফলে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দীতা হয় প্রার্থীরাও ভোটারদের গুরুত্ব দেয়। কিন্তু এবারের নির্বাচন বোঝাই যাচ্ছে না প্রার্থীদেরও আনাগোনা কম।

নির্বাচনী মাঠে পোষ্টার ও প্রচার প্রচারনা না থাকার ব্যপারে জানতে বুধবার দুপুরে জাপা প্রার্থী আনসার আলীকে ফের ফোন করা হলে তিনি বলেন, প্রচার টা আমি সেই ভাবে করতে পারিনি, পোষ্টার টোষ্টার সব কিছুই ছিলো তবে বিভিন্ন কারনে প্রচারে নামা হয়নি।

কেন হয়নি জানতে চাইলে তিনি বলেন, কিছু পারিপার্শিক অবস্থার কারনে এমনটি হয়ে আছে। কোথায় পোষ্টার ছিলো জানতে চাইলে তিনি বলতে পারেননি। প্রচার প্রচারনার শেষ সময়ে তিনি নির্বাচনী মাঠে নামবেন কি না বা শেষ পর্যন্ত তিনি নির্বাচনে আছেন কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমি এ ব্যপারে আগামী কাল জানাবো। বিজয়ীর ব্যপারে তিনি কতটুকু আশাবাদী জানতে চাইলে তিনি এর উত্তর দেননি। তবে নির্বাচন সুষ্ঠ হওয়া না হওয়ার ব্যপারে তিনি ও তার কর্মী সমর্থকরা আশঙ্কা প্রকাশ করছেন বলেও জানান তিনি।

আ.লীগ মনোনিত চেয়ারম্যান প্রার্থী জি এম হিরা বাচ্চু বলেন, প্রতিদ্বন্দী প্রার্থী মাঠে না থাকলেও আমাদের প্রচার প্রচারনায় কোন রকম ঘাটতি নেই। প্রতিকুল আবহাওয়াকে উপেক্ষা করে আমরা প্রতিদিন রাতদিন এককরে ভোটারদের দ্বারে দ্বারে ছুটছি এর ধারাবাহিকতা এখনও অব্যহত রয়েছে। তিনি বলেন, আমি নির্বাচিত হলে সন্ত্রাস মুক্ত মাদক মুক্ত পুঠিয়া উপজেলা গড়ে তুলবো, সকল শ্রেনী পেশার মানুষের বাস যোগ্য পুঠিয়া উপহার দেব। তিনি বলেন, আমি নির্বাচিত হলে চেয়ারম্যানের চেয়ারটি কোন অন্যায় কারীর পক্ষে এবং নিরঅপরাধ মানুষের বিপক্ষে ব্যবহার হবে না।

উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা জয়নুল আবেদিন জানান, উপজেলায় মোট ভোটার রয়েছেন ১ লক্ষ ৬০ হাজার ৭২৪ জন। ভোট গ্রহনের ব্যবপারে সকল প্রস্তুতি সম্পূর্ন হয়েছে। আগামী ১০ মার্চ পুঠিয়া উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে শতভাগ অবাধ সুষ্ঠ ও নিরপেক্ষ নির্বাচন উপহার দিতে পারবো বলে আশা করছি। নির্বাচন সুষ্ঠ হওয়া না হওয়া নিয়ে প্রতিদ্বন্দী জাপা

প্রার্থীর আশঙ্কার ব্যপারে তিনি বলেন, উনাকে তো দেখাই যায় না নির্বাচনী মাঠে তার কোন প্রচার নেই। ঘরে বসে থেকে আশঙ্কার কথা বললে তো হবে না কোন সমস্যা থাকলে তিনি আমাদের কাছে অভিযোগ করুক আমরা ব্যবস্থা না নিলে তার পর (আশঙ্কার) বলতে পারে।

স/অ