ফসল হারিয়ে নিঃস্ব কৃষক

সিল্কসিটিনিউজ ডেস্ক:

কয়েক দিন আগেও যে সবুজ শ্যামল ফসলি জমির মাঠ ভরা ছিল, আজ আর নেই। পানিতে দীর্ঘ সময় ডুবে তা নষ্ট হয়ে গেছে। চলতি আমন মৌসুমের ধানের চারা ও মূলধন হারিয়ে সময় মতো চারা সরবরাহ না পাওয়া গেলে আমন চাষ বিঘ্নিত হওয়ার আশঙ্কা করছেন কৃষকরা। একমাত্র উপার্জনের মাধ্যম জমির ফসল হারিয়ে অনেকের পথে বসার উপক্রম হয়েছে।

এদিকে সরকারিভাবে আমন বীজ সরবরাহ করলে নতুন করে রোপণ করতে পারবে– এমন আশা সংশ্লিষ্টদের। তাই ক্ষতিগ্রস্ত অঞ্চলে বিনামূল্যে বীজ সরবরাহ করার দাবি কৃষকদের।

উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে তিস্তা, যমুনা, ব্রহ্মপুত্র, ঘাঘট, করতোয়া নদীর পানি এখনও বিপদসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হওয়ায় গোবিন্দগঞ্জে ১০টি, গাইবান্ধা সদরে ১২টি, পলাশবাড়ীর ৩টি, ফুলছড়ির ৭টি, সাঘাটার ৯টি, সুন্দরগঞ্জের ৮টি, সাদুল্লাপুরের দুটি ইউনিয়নের ফসল পানির নিচে ডুবে রয়েছে।

গাইবান্ধার সাতটি উপজেলায় বন্যার পানি থৈথৈ করছে। সদর, সাঘাটা ও ফুলছড়ি উপজেলায় বন্যার পানিতে ডুবে আছে আউশ ধান, আমন ধানের বীজতলা, পাট, পানের বরজ ও বিভিন্ন সবজি ক্ষেত। পানিতে ডুবে ফসল হারিয়ে হতাশায় পড়েছেন এসব অঞ্চলের কৃষকরা।

ফুলছড়ি উপজেলার কঞ্চিপাড়া গ্রামের আবদুল সালাম বলেন, ‘বন্যায় আমার সব শেষ হয়ে গেছে। আমনের বীজতলা ১০ দিন ধরে পানির নিচে আছে। কীভাবে আমন লাগাব, কোথায় পাব বীজ। আমার ২০ শতক জমির পাট সব নদীতে।’

সদর উপজেলার আসমতপুর গ্রামের সালাম বলেন, ‘বাড়িতে পানি, তাই রাস্তায় এসে খোলা আকাশের নিচে আছি। আউশ (বর্ষালি) ধান লাগিয়েছিলাম, বন্যার পানিতে তা নষ্ট হয়ে গেল। বন্যা আমাদের নিঃস্ব করে দিলো।’

ফুলছড়ি উপজেলার গলনাচর গ্রামের আবদুল হান্নান বালেন, ‘বন্যার পানিতে চলতি মৌসুমে আমনের বীজতলা নষ্ট হয়েছে। সে সঙ্গে নষ্ট হয়েছে আউশ ধানও।’

সদর উপজেলার বল্লমঝাড় গ্রামের কৃষক আবদুস ছামাদ বলেন, বানের পানিতে তলিয়ে আছে ধানের ক্ষেত। দীর্ঘ সময় ধান পানিতে থাকায় নষ্ট হয়ে গেছে।

সরকারি হিসাব অনুযায়ী চলমান বন্যায় এ পর্যন্ত জেলায় ৫ লাখ ১৪ হাজার ৮৯৭ জন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। সাত উপজেলায় ৫১টি ইউনিয়নে মোট ১৪ হাজার ২২ হেক্টর জমির ফসল পানিতে নিমজ্জিত রয়েছে। এসব ইউনিয়নের চলতি মৌসুমে আমন ধানের বীজতলা ২ হাজার ৮৮১ হেক্টর, আউশ ধান ৩ হাজার ১৯০ হেক্টর, শাক-সবজি ১ হাজার ১৭৭ হেক্টর, পাট ৬ হাজার ৬১৯ হেক্টর এবং অন্যান্য ১ হাজার ৪৫৪ হেক্টর ফসলি জমি নিমজ্জিত রয়েছে।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক এস এম ফেরদৌস জানান, এবারের বন্যায় কৃষকদের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। বিশেষ করে আমন ধানের বীজতলা নষ্ট হয়েছে। তবে চলতি মৌসুমে আমন চাষ নির্বিঘ্ন করতে কৃষকদের চারাসহ বিভিন্ন ধরনের সহযোগিতা ও পরামর্শ দেওয়া হবে বলে জানান তিনি।