বৃহস্পতিবার , ৭ এপ্রিল ২০২২ | ২০শে জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
  1. অন্যান্য
  2. অপরাধ ও দুর্নীতি
  3. অর্থ ও বাণিজ্য
  4. আইন আদালত
  5. আন্তর্জাতিক
  6. কৃষি
  7. খেলা
  8. চাকরীর খবর
  9. ছবিঘর
  10. জাতীয়
  11. তথ্যপ্রযুক্তি
  12. দুর্ঘটনা
  13. ধর্ম
  14. নারী
  15. নির্বাচিত খবর

ফসল রক্ষা বাঁধ ঝুঁকিতে বোরো নিয়ে আতঙ্ক

Paris
এপ্রিল ৭, ২০২২ ১০:৩৩ পূর্বাহ্ণ

সিল্কসিটিনিউজ ডেস্কঃ

বাঁধের কানায় কানায় পূর্ণ পানি মোকাবেলা করে অতীতে বহুবার হাওরে আবাদ করা নিজেদের ফসল রক্ষা করেছে হাওরবাসী। এ বছর নদীর পানি বাঁধ থেকে এখনো পাঁচ থেকে সাত ফুট নিচে আছে। তবু হাওরের বোরো ধান নিয়ে শঙ্কায় আছেন সুনামগঞ্জের তাহিরপুরের কৃষকরা। কারণ অল্প পানির চাপেই হাওরের ফসল রক্ষা বাঁধগুলো চরম ঝুঁকিতে পড়েছে।

কৃষক ও কৃষির সঙ্গে সম্পর্কিত লোকজন বলছেন, দুর্বল বাঁধ ও ক্লোজারে (খালে) যথাযথ নিয়মে কাজ না হওয়ার কারণেই হাওরে উৎপাদিত একমাত্র বোরো ধান এখন ঝুঁকিতে পড়েছে।

২০১৭ সালে হাওরের ফসলডুবির পর সুনামগঞ্জ হাওরের ফসল রক্ষা বাঁধ নির্মাণ ও সংস্কারে অর্থ বরাদ্দ বহুগুণ বেড়েছে। বেড়েছে বাঁধের দৈর্ঘ্য ও উচ্চতাও। কিন্তু ত্রুটিপূর্ণ নকশায় বাঁধ নির্মাণ ও তদারকিতে ঘাটতি থাকায় টেকসই হয়নি। এ কারণেই পাহাড়ি ঢলের পানিতে হাওরসংলগ্ন নদীগুলো ভরে উঠতেই আতঙ্কিত হয়ে পড়েছেন কৃষকরা। তাঁরা বলছেন, বিগত চার বছর পাহাড়ি ঢল হয়নি। পিআইসি ও পাউবোর মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তারা ভেবেছিলেন এ বছরও হবে না। এ কারণেও বাঁধের কাজের মান খারাপ হয়েছে।

কৃষকরা জানান, হাওরে বছরে একটিমাত্র ফসল বোরো ধান ফলানো হয়। বছরের বাকি সময় হাওরগুলোতে গভীর পানি থাকে। বর্ষায় ফসল রক্ষা বাঁধগুলো কয়েক ফুট পানির নিচে ডুবে থাকে। যদিও ২০১৮ সাল থেকে নির্মিত বাঁধগুলো অনেক উঁচু হওয়ায় সেগুলো বর্ষায়ও জেগে থাকে। এ বছরও স্বাভাবিক বর্ষা হলে বাঁধগুলো ডোবার কথা নয়। কিন্তু বাঁধ নির্মাণকাজে ত্রুটি থাকায় এবং বিশেষ করে ক্লোজার (খাল) বন্ধকরণ ঠিকভাবে না হওয়ায় এগুলো ঝুঁকির মুখে আছে। দেখা দিয়েছে ফসল বিপন্ন হওয়ার আশঙ্কা।

হাওরের ফসল রক্ষার জন্য নির্মিত সাবমার্সিবল বেড়িবাঁধকে স্থানীয় ভাষায় ডাকা হয় ‘আফর’ নামে। আর কেত্মাজারকে (খাল) বলা হয় ‘কুইড়্যা’।

বর্তমানে পানির চাপে ঝুঁকিতে আছে তাহিরপুর উপজেলার মাটিয়ান হাওরের আনন্দনগর বাঁধ, শনির হাওরের সাহেবনগর, নান্টুুখালী, জালখালী ও লালুরগোয়ালা বাঁধ।

তাহিরপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক একলাছুর রহমান ওরফে তারা মিয়া বলেন, ‘এই মুহূর্তে পানি থেকে ফসল রক্ষা বাঁধের উচ্চতা সাত ফুটের বেশি রয়েছে। কিন্তু নির্মাণকাজে নানা অনিয়ম হওয়ায় বাঁধ ঝুঁকিতে আছে। ’

তিনি জানান, পিআইসি (প্রকল্প বাস্তবায়ন কমিটি) এখন লাভজনক ব্যবসা হয়ে উঠেছে। লোকজন হাওরের ফসল রক্ষা বাঁধে পিআইসির দায়িত্ব নিতে নানা অসৎ উপায় অবলম্বন করে। এ ছাড়া গত চার বছর পাহাড়ি ঢল ছিল না। পিআইসি ও পানি উন্নয়ন বোর্ড ভেবেছিল এ বছরও এমনভাবেই পার পাবে। এ জন্য কাজও দুর্বল হয়েছে।

জানা যায়, ১৯৮০ সালের পর থেকে হাওরে অনেকবার ফসলডুবির ঘটনা ঘটেছে। ১৯৯৩ থেকে ১৯৯৫ পর্যন্ত টানা তিন বছর তাহিরপুর উপজেলার বৃহৎ মাটিয়ান হাওরসহ বেশ কয়েকটি হাওর ডুবে যায়। ২০১০ সালে সুনামগঞ্জ জেলাজুড়ে ফসলডুবির ঘঁনা ঘটে। তাহিরপুর উপজেলার ২৩টি হাওরের ফসলই পাহাড়ি ঢলে তলিয়ে যায়। সর্বশেষ ২০১৭ সালে জেলাজুড়ে ফসলডুবির ঘটনা ঘটে। এ ঘটনার পর সরকার হাওরের ফসল রক্ষায় বাঁধ নির্মাণে বিপুল অর্থ বরাদ্দ দেয়।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ২০১৭ সালে সুনামগঞ্জ জেলায় ফসল রক্ষা বাঁধ নির্মাণে হাওরে বরাদ্দ ছিল ১২ কোটি টাকা। ২০১৮ সালে বরাদ্দ হয় ১৫১ কোটি টাকা। চলতি বছর বরাদ্দ হয়েছে ১২০ কোটি টাকা। ২০১৭ সালে তাহিরপুর উপজেলায় ফসল রক্ষা বাঁধ সংস্কার ও নির্মাণে বরাদ্দ ছিল দুই কোটি টাকা। ২০১৮ সালে ২২ কোটি ৬০ লাখ টাকা। চলতি বছর বরাদ্দ রয়েছে ১২ কোটি ৮২ লাখ টাকা।

হাওরপারের পাঠাবুকা গ্রামের কৃষক রিপচান হাবীব বলেন, ২০১৮ সালের আগে ফসল রক্ষা বাঁধগুলো বর্তমানের চেয়ে চার থেকে ছয় ফুট নিচু ছিল। সাবমার্সিবল এই বাঁধগুলো এখন গ্রামের উচ্চতায় করা হয়। কিন্তু সঠিকভাবে কাজ না করায় এত অর্থ আর এত মাটি ঠিকভাবে কাজে আসছে না।

স্থানীয়দের অভিযোগ, বিপুল অর্থ বরাদ্দ হলেও ত্রুটিপূর্ণ নকশায় বাঁধ নির্মাণ করা হয়েছে। ক্লোজারগুলো সঠিকভাবে বন্ধ করার পদ্ধতি নেই। এ বছর বেশির ভাগ ক্লোজারেই বাঁশ, চাটাই ব্যবহার করা হয়নি। বাঁধের নিচে কাঁকড়াসহ নানা কারণে সৃষ্ট এক ধরনের গর্ত (স্থানীয় ভাষায় ফুলপা) রয়েছে প্রচুর। ওই সব গর্ত ভরাটে কাজ হয়নি। মাটিকে ভালো করে স্থায়ী করতে দুরমুজ (চাপ) দেওয়া হয়নি। হাওর সম্পর্কে অনভিজ্ঞ কর্মকর্তাদের দিয়ে কাজ করানোর কারণেই এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে।

হাওরপারের কৃষক ও উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাধারণ সম্পাদক এমরান হোসেন বিপক বলেন, হাওরপারের স্থানীয় কৃষকদের নিয়ে পিআইসি গঠন করার কথা থাকলেও যথাযথ নিয়ম অনুসরণ করা হয়নি। তারা বাঁধের গোড়া থেকে মাটি উত্তোলন করেছে। এতে এই স্থায়ী বাঁধ আরো দুর্বল হয়েছে।

হাওরাঞ্চলের সাতটি জেলা নিয়ে গঠিত ‘হাওর বাঁচাও আন্দোলন’-এর সাধারণ সম্পাদক বিজন সেন রায় বলেন, স্থানীয় কৃষকদের নিয়ে পিআইসি গঠন করার কথা থাকলেও অমনক ক্ষেত্রেই তা মানা হচ্ছে না। বেশির ভাগ পুরনো বাঁধে সামান্য মাটি দিয়েই দায় এড়িয়েছে পিআইসি।

 

সূত্রঃ কালের কণ্ঠ

সর্বশেষ - জাতীয়