‘কলঙ্কিনী রাধা’ গানের জেরে নেটফ্লিক্স বয়কটের ডাক ভারতে

সম্প্রতি রিলিজ হওয়া অনলাইন স্ট্রিমিং সার্ভিস নেটফ্লিক্সের একটি মুভিতে ‘কলঙ্কিনী রাধা’ শিরোনামের জনপ্রিয় বাংলা লোকগীতিটি ব্যবহার করা হয়েছে। এতেই মারাত্মকভাবে ক্ষেপেছেন ভারতে হিন্দুত্ববাদীরা। এর জেরে নেটফ্লিক্স বয়কট করারও ডাক দিছেন তারা। ছবিটির প্রযোজক আনুশকা শর্মাকেও সমালোচনা শুনতে হচ্ছে এর জন্য।

মুভিটির নাম ‘বুলবুল’। ‘কলঙ্কিনী রাধা’ গানটি বাংলাদেশের সিলেটের কিংবদন্তী বাউল শিল্পী শাহ আবদুল করিমের। যে গানটিকে তাকে অসম্ভব জনপ্রিয় করে তুলেছিলেন।

নেটফ্লিক্সের প্ল্যাটফর্মে বুলবুল রিলিজ করেছিল গত ২৪ জুন। প্রকাশের সঙ্গে সঙ্গেই ‘কলঙ্কিনী রাধা’ নিয়ে শুরু হয়ে যায় তুমুল হইচই আর তর্কবিতর্ক।

তবে মূল বিতর্কের বিষয় হলো- ওই গানে হিন্দুদের ভগবান কৃষ্ণকে যেভাবে ‘কানু হারামজাদা’ এবং তার লীলাসঙ্গিনী রাধাকে ‘কলঙ্কিনী’ বলে বর্ণনা করা হয়েছে, সেটাকে বিশেষত উত্তর ভারতে অনেকেই হিন্দুত্ববাদের ওপর আক্রমণ হিসেবেই দেখছেন।

এই সমালোচনার মুখে নেটফ্লিক্স ওই মুভির হিন্দি সাবটাইটেলেও কৃষ্ণের বর্ণনায় ‘হারামজাদা’ শব্দটি পাল্টে ‘নটখট’ (দুষ্টু) শব্দটি ব্যবহার করেছে। তবে আনুশকা শর্মা নিজে বা মুভির নির্মাতা সংস্থা এই বিতর্ক নিয়ে এখনও মুখ খোলেননি।

ভারতের জনপ্রিয় ইউটিউবার ও ‘বিগ বস- ১৩’ এর প্রতিযোগী হিন্দুস্তানি ভাউ টুইট করেন, ‘বুলবুলে যেভাবে ভগবান শ্রীকৃষ্ণ ও রাধাকে নোংরা ভাষায় অপমানিত করা হয়েছে, তার জন্য সরকার কি আনুষ্কা শর্মাদের বিরুদ্ধে তদন্ত করবে?’

আদিত্য অখিল নামে আরও একজন টুইটার ব্যবহারকারী অভিযোগ তোলেন, ‘বিনোদনের নামে চিরকালই বলিউড এভাবে সংখ্যাগরিষ্ঠ হিন্দু সমাজ ও তাদের দেবদেবীদের অপমান করে আসছে।’

প্রথমেশ ভাই নামে আরও একজন লেখেন, ‘প্রথমে পাতাললোক ও এখন বুলবুল, আনুশকা শর্মা এমন সব সিরিজ ও মুভিই প্রযোজনা করছেন যেগুলো হিন্দুদের ভাবাবেগকে আহত করে।’

ভগবান কৃষ্ণকে অপমান করেছে, এই ধরনের মুভির বিরুদ্ধে হিন্দুদের ঐক্যবদ্ধ হয়ে গর্জে উঠতে হবে বলেও আহ্বান জানান তিনি। ‘হ্যাশট্যাগ বয়কটবুলবুল’র আওয়াজও সোশ্যাল মিডিয়াতে ক্রমশ ছড়িয়ে পড়তে থাকে।

পীযূষ রাই নামে আরেকজন জনপ্রিয় ইউটিউবার আবার নিজের চ্যানেলে প্রশ্ন তোলেন, ‘এই মুভিতে যেভাবে হিন্দু দেবীদের গালিগালাজ করা হয়েছে, সেটা কি বাংলায় খুব স্বাভাবিক একটা ঘটনা? আমি ভুল করলে বাঙালিরা আমাকে শুধরে দেবেন!’

একই সঙ্গে নবী মুহম্মদ বা খ্রিস্টানদের আরাধ্য যিশুকে এই ধরনের ভাষায় ডাকার ক্ষমতা ফিল্মের নির্মাতাদের আছে কি না- সে চ্যালেঞ্জও ছুড়ে দেন তিনি। বলেন, ‘বুলবুলে যেটা করা হয়েছে, তা হল সিলেক্টিভ সেকুলারিজম!’

নেটফ্লিক্স ভারতে হিন্দুত্ববাদীদের আক্রমণের মুখে পড়ছে বেশ কিছুদিন ধরেই। যেমন- ইংরেজি সাবটাইটেলে কলঙ্কিনীর জায়গায় ‘শেমলেস হাসি’ (লজ্জাহীনা নারী) ও হারামজাদার জায়গায় ‘বাস্টার্ড’ (বেজন্মা) লেখা হয়েছিল। হিন্দিতে ব্যবহার করা হয়েছিল- যথাক্রমে বেশরম ও হারামজাদা শব্দ দুটো। পরে অবশ্য হারামজাদা পাল্টে লেখা হয়েছে নটখট শব্দটি।

সূত্র : বিবিসি