প্রায় দ্বিগুণ দামে খবিরের সেই ৬ মণ কয়েন কিনে নিলেন ঢাকার ব্যবসায়ী

জমানো ছয় মণ কয়েন নিয়ে বিপাকে পড়া মাগুরার মহাম্মদপুরের সবজি ব্যবসায়ী খাইরুল ইসলাম খবিরের সব কয়েন কিনে নিয়েছেন ঢাকার এক ওষুধ কোম্পানির ব্যবস্থাপনা পরিচালক। মোট ৫৬ হাজার টাকার কয়েন (ধাতব মুদ্রা) তিনি খবিরের কাছ থেকে লাখ টাকায় কিনে নিয়েছেন।

বুধবার (২৮ অক্টোবর) বিকেলে উপজেলা সদরের জাঙ্গালিয়া গ্রামের বাড়িতে গিয়ে ঢাকার ধানমন্ডির মিকা ফার্মা কেয়ার লিমিটিডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক নিয়ামুল করিম টিপু খবিরের সব কয়েন কিনে নেন।

এর আগে খবিরের প্রায় ছয় মণ ওজনের কয়েন নিয়ে বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে খবর প্রকাশ হওয়ায় ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশে মহম্মদপুর সদর সোনালী ব্যাংক শাখা তার অ্যাকাউন্টে প্রতিদিন এক হাজার টাকা করে জমা নেয়া শুরু করে। এ পর্যন্ত চার হাজার টাকা জমা দেন তিনি। পরে আবারো খবিরের কয়েন নিয়ে সংবাদ প্রকাশ হয়।

খবির ১০ বছর ধরে ২৫ পয়সা, ৫০ পয়সা, ১ টাকা ও ২ টাকার প্রায় ছয় মণ ওজনের ৬০ হাজার টাকার ধাতব মুদ্রা জমান। এই কয়েনের কার্যত লেনদেন না থাকায় তিনি বিপাকে পড়েন। ৪ হাজার টাকা ব্যাংকে জমা দেয়ার পরও খবিরের কাছে আরো ৫৬ হাজার টাকার ধাতব মুদ্রা ছিল।

পরে খবরটি বিভিন্ন জায়গায় ছড়িয়ে পড়লে বুধবার বিকেলে খবিরের বাড়িতে এসে ধাতব মুদ্রাগুলো কিনে নেন ঢাকার ওষুধ ব্যবসায়ী নিয়ামুল করিম টিপু।

এ সময় খবিরের বাড়িতে উপস্থিত ছিলেন- মহম্মদপুর ইউএনও রামানন্দ পাল, ঢাকার ধানমন্ডির মিকা ফার্মা কেয়ার লিমিটিডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক নিয়ামুল করিম টিপু ও মহম্মদপুর সদরের আমিনুর রহমান কলেজের অধ্যক্ষ ও প্রেস ক্লাবের সভাপতি বিপ্লব রেজা বিকো।

ঢাকার ধানমন্ডির মিকা ফার্মা কেয়ার লিমিটিডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক নিয়ামুল করিম টিপু জানান, কয়েকটি মিডিয়ায় প্রতিবেদন দেখে মূলত বিপাকে পড়া ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীর পাশে দাঁড়ানোর জন্য তিনি কয়েনগুলো প্রায় দিগুণ দামে কিনে নিয়েছেন।

তিনি জানান, এই কয়েন থেকে নির্দিষ্ট পরিমাণ মাটির ব্যাংকে ঢুকিয়ে দরিদ্র শিশুদের মধ্যে বিতরণ করবেন। এর মাধ্যমে তাদের মধ্যে সঞ্চয়ী হওয়ার অভ্যাস গড়ে তোলার চেষ্টা করবেন।

মহম্মদপুর ইউএনও রামানন্দ পাল বলেন, খবিরের কয়েন আমরা ব্যাংকে জমা নেয়ার ব্যবস্থা করেছিলাম। বিষয়টি ছিল সময়সাপেক্ষ ও ঝামেলাপূর্ণ। কয়েনের বিনিময়ে একসঙ্গে প্রায় দ্বিগুণ টাকা পাওয়ায় দরিদ্র ব্যবসায়ীর অনেক উপকার হলো।

খাইরুল ইসলাম খবির আনন্দে কাঁদতে কাঁদতে বলেন, ‘ছয় মণ খুচরো পয়সা নিয়ে আমার রাতে ঘুম আসত না। এতো পয়সা জমা করেছিস কেন? সবাই ভয় দিত তোরে ধরে নিয়ে যাবে। আমার ব্যবসার সব পুঁজি চলে গেছিল এই পয়সার মধ্যে। জীবনের প্রথম একসঙ্গে এক লাখ টাকা হাতে পেলাম। আমার অনেক উপকার হলো।’

উল্লেখ্য, ১০ বছর ধরে পঁচিশ পয়সা, পঞ্চাশ পয়সা, এক টাকা ও দুই টাকা করে ছয় মণ ধাতব মুদ্রা (কয়েন) জমে যায় ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী খবিরের কাছে। এসব কয়েন লেনদেন সরকার বাতিল না করলেও খরিদ্দাররা এখন আর নিতে চান না। কার্যত অচল হয়ে পড়া বিপুল পরিমাণ এ কয়েন নিয়ে তিনি বিপাকে পড়েন।

 

সূত্রঃ কালের কণ্ঠ