‘প্রাণ ও প্রকৃতি’ নওগাঁয় পাখির নিরাপদ আবাস

কাজী কামাল হোসেন:
হাজারো পাখির কল কাকলিতে মুখরীত হয়ে উঠেছে আত্রাই নদ। আর পাখির কিচির মিচির শব্দে ঘুম ভাঙে নদীর দু’পাড়ের মানুষের। অতিথি পাখিদের ‘নিরাপদ আবাস’ গড়তে স্থানীয় কয়েকজন যুবক প্রচেষ্টায় চালিয়ে যাচ্ছেন। এমন দৃশ্য নওগাঁর মহাদেবপুর উপজেলার মধুবন-কুঞ্জবন এলাকার আত্রাই নদ। পাখিদের এ নিরাপদ আবাসের নাম দেয়া হয়েছে ‘প্রাণ ও প্রকৃতি’।

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, গত আট বছর আগ থেকে আত্রাই নদীতে অতিথি পাখির আগমণ ঘটছে। নিরাপদ মনে করে পাখিরা এ নদীতে আশ্রয় নিয়েছে। শীতের শুরুতে পাখিদের আগমণ শুরু হয়। এসময় নদীতে পানির পরিমাণ কম থাকে। নদীতে পানি বৃদ্ধি পেলে আবার পাখিগুলো চলে যায়। এ নদীতে বছরে প্রায় ৭-৮ মাস পাখিগুলো থাকে। পাখির অবাধ বিচরণ দেখে ২০১০ সালে পাখি প্রেমী কাজী নাজমুল, আইনুল ইসলাম, মোকলেসুর রহমান, একরামুল হোসেনসহ কয়েকজন যুবক মিলে অভয়াশ্রম গড়ে তোলার উদ্যোগ নিয়েছে।

আত্রাই নদীতে পাখিদের আবাস হলেও তারা চরা করতে যায় পাশের বিল মোহাম্মদপুর, রামচন্দ্রপুর, মধুবনসহ কয়েকটি। রাত হলেওই তারা চরা করতে চলে যায়। আবার ভোরের দিকে চলে আসে।

সরেজমিনে দেখা যায়, উপজেলা সদর থেকে প্রায় এক কিলোমিটার উত্তরে মধুবন-কুঞ্জবন গ্রাম। গ্রামে প্রবেশে রাস্তার দু’ধারে ফলজ ও বনজ গাছ। পাখি শিকার রোধসহ বণ্যপ্রানী রক্ষার সচেতনতামূলক বিভিন্ন সাইনবোর্ড গাছে গাছে ঝুঁলিয়ে রাখা হয়েছে। এছাড়া পাখিদের কেউ উত্যক্ত, বিরক্ত ও কোন ধরনের শব্দ করা যাবেনা বলেও সচেতন করা হয়েছে। পাখিদের এ নিরাপদ আবাসের নাম দেয়া হয়েছে ‘প্রাণ ও প্রকৃতি’।

মৌসুমি পাখিদের আরামে বসে থাকার জন্য আত্রাই নদীর পানিতে বেশ কিছু বাঁশ বেঁধে দিয়ে ঘের তৈরী করে দেয়া হয়েছে। ঝাঁকে ঝাঁকে পাখি উড়ে এসে পানিতে পড়ছে। কেউ গা ভাসিয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছে। কেউ গা পরিস্কার করছে। আবার কেউ বাঁশের উপর বসে আরাম করছে। পাখিদের কিচির মিচির শব্দে মুখরিত হয়ে উঠছে নদীর দু’পাড়। বালিহাঁস, সরালি হাঁস, পানকৌড়ি, রাতচোরা, বক, মাছরাঙ্গা সহ বিভিন্ন প্রজাতির হাজারো পাখির বিচরন। মনোরম এ পরিবেশ যে কাউকে মুগ্ধ করবে।

পাখি প্রেমী কাজী নাজমুল বলেন, উপজেলাতে ‘প্রাণ ও প্রকৃতি’ নামে যে সংগঠন আছে সেখানে প্রায় শতাধিক সদস্য আছে। আমরা নিজেদের উদ্যোগে পাখিদের নিরাপদ আশ্রয় গড়ার চেষ্টা করছি। প্রতিকুল সমস্যার মধ্য দিয়ে আমরা চেষ্টা করে যাচ্ছি। প্রতি মৌসুমে প্রায় ৩-৪ হাজার বিভিন্ন প্রজাতির পাখি আসে আত্রাই নদীতে। পাখিদের কিছু অভয়াশ্রম আছে যেখানে কারেন্ট জাল দিয়ে মাছ শিকারের সময় পাখিরা ভয় পেয়ে চলে যায়। যেসব লোকদের অনেকবার বলার পর কিছুটা সচেতন হয়েছে। এ উপজেলাকে পাখিদের অবাধ বিচরণ ‘নিরাপদ আবাস’ হিসেবে গড়ে তোলার চেষ্টা করছি।

মধুবন গ্রামের সাজ্জাদ হোসেন বলেন, পাখির কিচির মিচির শব্দে খুব সকালে আমাদের ঘুম ভাঙে। পাখি যেন ভয় না পায় এজন্য আমরা কোন শব্দও করিনা। শুধু নদীতেই নয়, গ্রামের গাছেও পাখিদের অবাধ বিচরণ।

মহাদেবপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মিজানুর রহমান এ প্রতিবেদককে বলেন, পাখির অভয়াশ্রম গড়ে তুলতে স্থানীয় পাখি প্রেমী যুবকদের প্রশাসনের পক্ষ থেকে সার্বিক সহযোগীতা করা হবে। এছাড়া অবাধে কেউ যেন পাখি শিকার করতে না পারে সে বিষয়টিও দেখা হবে। পাখির অভয়াশ্রম গড়ে উঠায় এ উপজেলাটি বেশ প্রশংসিত হয়েছে।