প্রাণের উচ্ছ্বাসে রাজশাহীতে বসন্তবরণ

নিজস্ব প্রতিবেদক :
দুয়ারে আজ আগুন রাঙা বসন্ত দেখে সবার মন যেন ছুটে যেতে চাইছে সবুজ অরণ্যে।

যেখানে কাননে কাননে উৎসবের রঙের কোলাহলে মেতে উঠেছে চারদিক। গাছের কচি পাতায় ফাগুনের ছোঁয়া। দক্ষিণা বাতাসে দূর থেকে ভেসে আসা কোকিলের কুহু কুহু কলতানে আজ তাই ঘর ছেড়েছে তারুণ্য। তাইতো মধুময় যৌবনের উদ্দামতা বয়ে আনার বসন্তে আজ মেতে উঠেছে রাজশাহী।

বাঁধ ভাঙা আনন্দ, উচ্ছ্বাস ও উদ্বেলতায় নানা আয়োজনে সবাই ঋতুরাজকে সাড়ম্বরে বরণ করে নিচ্ছে। বুধবার (১৪ ফেব্রুয়ারি) পয়লা ফাল্গুন সকাল থেকেই বসন্তবরণ উৎসবে মুখোরিত হয়ে উঠেছে এই নগর। আজ ভালোবাসা দিবস এবং সরস্বতী পূজাও।

তাই বলা যায়- সবকিছুকেই আজ ছুঁয়েছে বসন্ত। সকাল থেকে ধর্ম, বর্ণ নির্বিশেষে সকল শ্রেণির মানুষ ভিন্ন আবহে প্রাণ উজাড় করে যোগ দিয়েছেন আজ বসন্তবরণ উৎসবে। ঐতিহ্যবাহী ও তিনবারের দেশ সেরা রাজশাহী কলেজে বাসন্তী রঙের বর্ণিল শোভাযাত্রা, কবিতাপাঠ, নাচ আর গানের ছন্দে বর্ণাঢ্য অনুষ্ঠানের মধ্যে দিয়ে চলছে ফাল্গুনী উৎসব। হলুদ রঙে রঙিন হয়ে স্বপ্নজয়ী তারুণ্যের ঢেউ লেগেছে যেনে সব আয়োজনেই।

এছাড়া বরাবরের মতো রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলায় এবারও চলছে বসন্ত বরণের নানা অনুষ্ঠান। বসন্তবরণের অনুষ্ঠান শুরু হয়- বুধবার সকাল সাড়ে ৯টায়। সকাল সাড়ে ১০টায় শোভাযাত্রা বের করা হয়। এছাড়া রাত ১০টা পর্যন্ত সেখানে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানসহ আরও নানান আয়োজন করা হয়েছে। প্রতি বছরের মতো এবারও সেখানে বেজে উঠেছে নতুন প্রাণের স্পন্দন। শীতের শুকনো পাতার মড় মড় ধ্বনি ভেঙে উৎসাহ উদ্দীপনায় রাবি শিক্ষক-শিক্ষিকা, বন্ধু আর সহপাঠীদের নিয়ে সবাই আনন্দে মেতে উঠেছেন আজ।

এদিকে পহেলা ফাল্গুন উপলক্ষে সকালে রাজশাহী কলেজ থেকে বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রা বের করা হয়। এতে কলেজের বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষার্থীরা অংশ নেন। বাদ্য-বাজনার ছন্দে ছাত্রীদের হলুদ শাড়ি আর ছাত্রদের হলদে পাঞ্জাবি বরণে শোভাযাত্রাটি পুরো শহরে যেন জানান দেয় আজ বসন্তের দিন। শোভাযাত্রাটি মহানগরীর বিভিন্ন প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ করে আবারও কলেজে গিয়ে শেষ হয়। এখানে দিনভর নানা অনুষ্ঠান চলছে।

এছাড়া মহানগরীর বিভিন্ন বিনোদন স্পটে আজ তরুণ-তরণী যুবক-যুবতীসহ বিভিন্ন বয়সের মানুষের ঢল নেমেছে। মেয়েদের পরনে হলুদ রঙের শাড়ি, খোপায় গাঁদা ফুল, আবার কারও কারও খোপায় রঙিন ফুলের রিং। ছেলেদের পরনে রয়েছে হলুদ অথবা সফেদ রঙের পাঞ্জাবি। বিনোদন কেন্দ্রগুলোতে ঘুরতে গিয়ে মোবাইল ফোন দিয়েই অনেককে ফটোসেশন সারতে দেখা গেছে। বন্ধুদের নিয়ে জটলা করে ফোনের ক্যামেরায় সেলফি তুলেও তা স্মৃতিবন্দি করছেন অনেকে।

সকাল থেকে রাজশাহীর শহীদ এএইচএম কামরুজ্জামান উদ্যান, শহীদ জিয়া পার্ক, বড়কুঠি পদ্মাপাড়ে, টি-বাঁধ, ভদ্রার শহীদ মনসুর রহমান পার্ক, পদ্মা গার্ডেনসহ অন্যান্য বিনোদনকেন্দ্রগুলোতে উপচে পড়া ভিড় লক্ষ্য করা যাচ্ছে। আজ সকালেই কেউ বন্ধু-বান্ধবীকে নিয়ে, কেউ প্রিয়তম, কেউ আবার পরিবার-পরিজন নিয়ে বিভিন্ন বাহনে ঘুরে বেড়াচ্ছেন শহরের এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে।