প্রস্তাব নিয়ে কৌশলপত্র তৈরি করবে ইসি

সিল্কসিটিনিউজ ডেস্কঃ

জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সংলাপে উঠে আসা প্রস্তাবগুলো পর্যালোচনা করেছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। বাস্তবায়নের এখতিয়ার অনুযায়ী প্রস্তাবগুলো কয়েক ভাগে ভাগ করা হচ্ছে। যেসব সুপারিশ ইসির এখতিয়ারভুক্ত এবং যেগুলো নির্বাচন কমিশনের এখতিয়ারে নেই-এমন প্রস্তাব আলাদা করা হচ্ছে। যেগুলোর বাস্তবায়ন রাজনৈতিক সিদ্ধান্তের ওপর নির্ভরশীল, সংবিধান ও আইন সংশোধন করতে হবে-আলাদা করা হচ্ছে সেগুলোও। প্রস্তাবের ধরন অনুযায়ী কৌশলপত্র তৈরির পরিকল্পনা রয়েছে ইসির। এতে রাজনৈতিক দলগুলোর প্রস্তাব বাস্তবায়নে কী কী চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে হবে, এতে সম্পৃক্ত কারা প্রভৃতি বিষয় উল্লেখ করা হতে পারে। ওই কৌশলপত্র নিয়ে আবারও বিশেষ সংলাপের আয়োজনের পরিকল্পনা আছে নির্বাচন কমিশনের (ইসি)। যেখানে ইসির এখতিয়ার নেই-এমন প্রস্তাবগুলো রাজনৈতিক দলগুলোর ওপর ছেড়ে দেওয়া হতে পারে। সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে আলাপ করে এসব তথ্য জানা গেছে।

জানা যায়, নির্বাচনে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন (ইভিএম) ব্যবহার নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর মতামতও গুরুত্ব দিয়ে পর্যালোচনা করছে ইসি। সোমবার পর্যন্ত এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়নি কমিশন। সংলাপে জাতীয় পার্টিসহ ১৫টি রাজনৈতিক দল ইভিএম ব্যবহারের বিপক্ষে এবং আওয়ামী লীগসহ ১১টি রাজনৈতিক দল পক্ষে মত দেয়। এছাড়া রাজনৈতিক দলগুলোর প্রস্তাব পর্যালোচনা করে দ্রুত গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ, ১৯৭২ (আরপিও) সংশোধনের খসড়া আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে নির্বাচন কমিশন। সংলাপে বিএনপিসহ ৯টি রাজনৈতিক দল অংশ না নেওয়াকে রাজনৈতিক কারণ বলে বিশ্বাস করে ইসি। তবে এসব দলের বর্জনে ইসির সংলাপে অপূর্ণতা তৈরি করেছে বলেও মনে করছেন নির্বাচন কমিশনাররা। মোট কথা, সব দলকে সংলাপের টেবিলে আনতে না পারায় ইসি এক্ষেত্রে শতভাগ সফল হয়নি বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।

জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে ১৭ থেকে ৩১ জুলাই রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সংলাপ করে ইসি। এতে নিবন্ধিত ৩৯টি দলের মধ্যে ২৮টি অংশ নেয়। বিএনপিসহ ৯টি দল বর্জন করে এবং দুটি দল সময় চেয়েছে। আওয়ামী লীগের সঙ্গে বৈঠকের মধ্য দিয়ে রোববার কার্যত সংলাপ শেষ হয়। সোমবার প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়ালের অফিসকক্ষে অনানুষ্ঠানিক বৈঠক করেন নির্বাচন কমিশনাররা। এতে সংলাপে উঠে আসা সুপারিশগুলোর করণীয় নিয়ে প্রাথমিক আলোচনা হয়। সিইসি অসুস্থ থাকায় এসব বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়নি।

জানতে চাইলে নির্বাচন কমিশনার বেগম রাশেদা সুলতানা বলেন, আমরা (নির্বাচন কমিশনাররা) অনানুষ্ঠানিকভাবে কিছু সময়ের জন্য বসেছিলাম। সেখানে কনক্রিট কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। তবে সংলাপে উঠে আসা প্রস্তাবগুলো পর্যালোচনার সিদ্ধান্ত হয়েছে। এছাড়া আরপিও সংশোধনীর খসড়া দ্রুত আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠানোর বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। তিনি বলেন, সংলাপ থেকে আমরা রাজনীতিবিদদের অভিজ্ঞতা নিয়েছি। নির্বাচনব্যবস্থা নিয়ে তারা অনেক কথা বলেছেন, প্রস্তাব রেখেছেন, যা আমাদের জন্য ভালো।

রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সংলাপে উঠে আসা প্রস্তাবগুলোর বিষয়ে অপর নির্বাচন কমিশনার মো. আলমগীর জানান, এগুলো নিয়ে তারা পর্যালোচনা করছেন। প্রস্তাবগুলো নিয়ে স্ট্র্যাটেজিক পেপার তৈরি করা হবে। এরপর আবারও গণমাধ্যম, শিক্ষাবিদ, বিশেষজ্ঞজন ও রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে বিশেষ সংলাপ হবে।

তিনি বলেন, বিশেষ সংলাপটি অনুষ্ঠিত হবে দিনব্যাপী। সেখানে সবাই এক মঞ্চেই থাকবেন। সংলাপে কৌশলপত্রটি উপস্থাপন করে অংশীজনের কাছ থেকে মতামত নেওয়া হবে। এরপর সংসদ নির্বাচনের চূড়ান্ত কৌশলপত্র প্রণয়ন করবে নির্বাচন কমিশন।

তিনি বলেন, সংলাপে তিন ধরনের সুপারিশ এসেছে। কিছু কিছু সুপারিশ আছে সংবিধান ও আইনের মধ্য থেকে করতে হবে। কিছু কিছু সুপারিশ বাস্তবায়ন করতে আইনের পরিবর্তন করতে হবে। আর কিছু আছে ইসির এখতিয়ারের মধ্যে নয়। সেটা নিয়ে কীভাবে কী করব, তা যখন আলাপ-আলোচনা করব, তখন সিদ্ধান্ত নেব। তখন হয়তো আমরা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে প্রস্তাবগুলো পাঠিয়ে দেব। তবে এখনো আমরা চূড়ান্ত কোনো সিদ্ধান্ত নিইনি।

মো. আলমগীর বলেন, বিশেষ সংলাপে আমাদের কৌশলপত্রে উদ্দেশ্য, লক্ষ্য, সুবিধা-অসুবিধা, অর্থসংক্রান্ত বিষয়, লোকবল, চ্যালেঞ্জ প্রভৃতি উল্লেখ থাকবে। যে চ্যালেঞ্জগুলো আছে, সেগুলো কীভাবে মোকাবিলা করতে পারি, তা নিয়েই আলোচনা হবে

সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে আলাপ করে জানা যায়, প্রতিটি রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সংলাপ চলাবস্থায় ওই দলের সুপারিশগুলো সংক্ষিপ্ত আকারে তৈরি করেছে নির্বাচন কমিশন সচিবালয়। এছাড়া ইভিএম নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলো কী কী প্রস্তাব করেছে, তাও আলাদাভাবে তৈরি করা হয়েছে। রোববার সংলাপ শেষ হওয়ার পরই নির্বাচন কমিশনারদের হাতে এসব প্রস্তাব দেওয়া হয়। ইসি মনে করে, ইভিএম বিষয়ে কমিশনই সিদ্ধান্ত নেবে।

আরও জানা যায়, বিএনপিসহ ৯টি রাজনৈতিক দল সংলাপ বর্জনের ঘটনাকে রাজনৈতিক সংকট হিসাবে দেখছে কমিশন। নির্বাচনকালীন সরকারব্যবস্থা সম্পর্কে আসা প্রস্তাবগুলোর সমাধান রাজনৈতিক নেতৃত্বের ওপর নির্ভর করছে। এসব বিষয় রাজনৈতিক দলগুলোর ওপর ছেড়ে দেওয়ার চিন্তা করছে ইসি। কৌশলপত্রে এসব বিষয় রাখা হতে পারে।

নাম প্রকাশে অনাগ্রহী এক নির্বাচন কমিশনার জানান, সংলাপে সিইসি তার বক্তব্যে অনেক বিষয় রাজনৈতিক দলগুলোর সমঝোতার ওপর ছেড়ে দেন। ওইটাই কমিশনের পক্ষ থেকে রাজনৈতিক দলগুলোর কাছে এক ধরনের বার্তা দেওয়া হয়। সর্বশেষ আওয়ামী লীগের সঙ্গে সংলাপেও অন্য রাজনৈতিক দলগুলোর কয়েকটি প্রস্তাব জানানো হয়েছে।

দেখা গেছে, সংলাপ শুরুর দিনেই রাজনৈতিক দলগুলোকে ভোটের মাঠে থাকার পরামর্শ দেন সিইসি। এনডিএমের সঙ্গে বৈঠকের একপর্যায়ে তিনি বলেন, ‘আমরা সহিংসতা বন্ধ করতে পারব না। আপনাদেরও (রাজনৈতিক দলের) দায়িত্ব নিতে হবে। কারণ খেলোয়াড় কিন্তু আপনারা। আপনারা মাঠে খেলবেন, আমরা রেফারি। আমাদের অনেক ক্ষমতা আছে। ক্ষমতা কিন্তু কম না, ক্ষমতা প্রয়োগ করব। নির্বাচন অংশগ্রহণমূলক করতে সর্বাত্মক চেষ্টা করবেন জানিয়ে তিনি বলেন, সব দল সহযোগিতা না করলে আমরা সেখানে ব্যর্থ হয়ে যাব।

আরেক সংলাপে বিএনপিকে ইঙ্গিত করে সিইসি বলেন, প্রধানতম দল অংশ না নিলে নির্বাচন সুষ্ঠু, অংশগ্রহণমূলক ও গ্রহণযোগ্য হবে না। রাজনৈতিক দলগুলোর প্রতি আহ্বান জানাই, আপনারা নিজেদের মধ্যে আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে নির্বাচনের অনুকূল পরিবেশ সৃষ্টি করে দিন। রাজনৈতিক সমঝোতার ওপর আবারও গুরুত্বারোপ করে সিইসি বলেন, বেশির ভাগ রাজনৈতিক দলের ইস্যুতে সংবিধান কোনো বাধা নয়। জনগণের প্রয়োজনে সংবিধান সংশোধন করা যেতে পারে। বিরোধী দল যেটা চাইছেন, সরকারি দল যা বলছেন, এটা নিয়ে তাদের নিজেদের মধ্যে আলোচনার জন্য বসা দরকার। তবে নির্বাচনের নামে নাটক মঞ্চস্থ করতে চান না বলেও জানিয়েছেন সিইসি।

 

সুত্রঃ যুগান্তর