প্রস্তাবিত গঙ্গা ব্যারেজ প্রকল্প বাস্তবায়নের দাবিতে রাজশাহীতে সমাবেশ

নিজস্ব প্রতিবেদক:

প্রস্তাবিত গঙ্গা ব্যারেজ প্রকল্প বাস্তবায়নের জোর দাবিতে রাজশাহীতে র‌্যালী ও সামাবেশ অনুষ্ঠিত হয়েছে। রবিবার সকালে অনুষ্ঠিত এ সমাবেশ থেকে ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের ১৯৯৬ সালে  স্বাক্ষরিত গঙ্গার পানি বন্টন চুক্তিতে বাংলাদেশের প্রাপ্যতার সর্বোত্তম ব্যবহার নিশ্চিতের মাধ্যমে এ অগ্রগতি কামনা করা হয়। এসময় গঙ্গা ব্যারেজ প্রকল্প দ্রুত বাস্তবায়নের জোর দাবি জানানো হয়।

 

 

সমাবেশে বক্তারা বলেন, প্রস্তাবিত গঙ্গা ব্যারেজ প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য ইতিমধ্যে ভারতীয় প্রতিনিধি দলের প্রকল্প এলাকা সরেজমিন পরিদর্শনের জন্য আসার প্রস্তুতি নিয়েছেন। প্রতিনিধি দলকে স্বাগত জানাতে রক্ষা সংগ্রাম পরিষদ সমাবেশ ও র‌্যালীর আয়োজন করে।
সামাবেশে বক্তারা গঙ্গা ব্যারেজের উপকারিতাও তুলে ধরেন। তারা বলেন, পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের অধিনে বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড গঙ্গা ব্যারাজ প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে। আগামী ২০২২ সালের জুন পর্যন্ত এ প্রকল্পের বাস্তবায়ন মেয়াদকাল নির্ধারণ করা হয়েছে। বক্তারা নির্ধারিত সময়ের মধ্যে এ প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য জোর দাবি জানান।
বক্তারা বলেন, এ প্রকল্প বাস্তবায়ন হলে দেশের মোট জনসংখ্যার এক তৃতীয়াংশ মানুষের জন্য জীবীকার প্রসার ও জীবনযাত্রার মানোন্নয়নের মাধ্যমে সামাজিক উন্নয়ন সাধন হবে। বৃহত্তর কুস্টিয়া, ফরিদপুর, যশোর, খুলনা, বরিশাল, পাবনা এবং রাজশাহী জেলার গ্রস এলাকার জীবনযাত্রার চিত্র পাল্টে যাবে। এছাড়া এ প্রকল্পের মাধ্যমে এ অঞ্চলের চাষযোগ্য ১৯ লক্ষ হেক্টর কৃষিজমির জন্য সেচের সু ব্যবস্থা নিশ্চিত হবে। ফলে কৃষি ফসল উৎপাদনে আরো সয়ংসম্পুর্ণতা অর্জন করা সম্ভব হবে। গঙ্গা নির্ভর নদীগুলোর প্রবাহ ও নাব্যতা বৃদ্ধি পাবে।

 

 

শুস্ক মৌসুমে গড়াই, নবগঙ্গা, বড়াল, কপোতাক্ষ ইত্যাদির পানি প্রবাহ বৃদ্ধি পাবে। লবনাক্ততার মাত্রা কমে যাবে। জলবিদ্যুৎ উৎপাদন হবে। গঙ্গা নির্ভর এলাকায় গুরুত্বপূর্ণ বর্তমান ও ভবিষ্যৎ প্রকল্প সমুহের নির্মাণ ও রক্ষণাবেক্ষণ ব্যয় হ্রাস পাবে। এছাড়া সুন্দরবনের বনজ সম্পদ ও জীব বৈচিত্র্য রক্ষা করা সম্ভব হবে। এ প্রকল্পটি আলোর মুখ দেখলে এলাকার মৎস্য সম্পদ সংরক্ষন প্রসারতা বৃদ্ধি পাবে।
সমাবেশ থেকে এ এলাকার মানুষের বহুমুখী সমস্যার সমাধান নিশ্চিত হবে উল্লেখ করে বক্তারা বলেন, এ প্রকল্প বাস্কবায়ন হলে বৃহত্তর রাজশাহী, ফরিদপুর, কুষ্টিয়া, পাবনা, বরিশাল, খুলনা এবং যশোরের মধ্যে আঞ্চলিক বৈষম্য দুরিকরণে সহায়ক হবে। একই সঙ্গে পরিবেশ রক্ষা ও খাদ্য নিরাপত্তায় সহায়ক হবে।
সমাবেশে রাজশাহী রক্ষা সংগ্রাম পরিষদের সভাপতি লিয়াকত আলীর সভাপতিত্বে অন্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন রাজশাহী রক্ষা সংগ্রাম পরিষদের সাধারণ সম্পাদক জামাত খান, সাংগাঠনিক সম্পাদক দেবাশিষ প্রামাণিক দেবু, রাজশাহী চেম্বার সভাপতি মনিরুজ্জামান মণি, মুক্তিযোদ্ধা শাহজাহান আলী বরজাহান, সমাজসেবক মিনহাজ উদ্দিন মিন্টু, নিযামউদ্দিন, অধ্যাপক জিএম হারুন, নারী নেত্রী কল্পনা রায়, জেলা লোকমোর্চার সভাপতি আলাউদ্দিন আল আজাদ, নাচোল উপজেলার ভাইস চেয়ারম্যান আবু তাহের খোকন, রাজশাহী সাংবাদিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক মামুন-অর-রশিদ, প্রকৌশলী খাজা তারেক, লেখক শাহ মো. জিয়া, ক্রিড়া সংগঠক শহিদুজ্জামান টুকু, পরিবেশবিদ মিজানুর রহমান. ডা. সেলিনা খাতুন, ওয়েব সভাপতি আঞ্জুমান আরা লিপি, আফরোজা হেলেন, শাহীন শেখ, আনসার আলী বাবু প্রমুখ বক্তব্য রাখেন।
বক্তারা সমাবেশ থেকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে স্বাগত জানিয়ে বলেন, সরকার এ প্রকল্প বাস্তবায়নে আগ্রহ নিয়ে এগিয়ে এসেছে। প্রধানমন্ত্রীর অনুরোধে ভারতের প্রধানমন্ত্রী উচ্চ ক্ষমতা সম্পন্ন প্রতিনিধি দল বাংলাদেশে গঙ্গা ব্যারাজ প্রকল্প এলাকা পরিদর্শনে আসছেন।

 

 

সরকারের এ উদ্যোগকে সাধুবাদ জানিয়ে বক্তারা বলেন, এ অঞ্চলের মানুষের জীবনমান উন্নয়নে রাজশাহী রক্ষা সংগ্রাম পরিষদ দীর্ঘদিন ধরে আন্দোলন সংগ্রাম করে আসছেন। এরই ধারাবাহিকতায় সরকার গঙ্গা ব্যারাজ প্রকল্প অনুমোদনের পর ইতিমধ্যে প্রকল্প গ্রহন করেছেন। এখন নির্ধারিত সময়ের মধ্যে এ প্রকল্প বাস্তবায়নে সরকারকে আরো দৃঢতার সঙ্গে পদক্ষেপ গ্রহণের অনুরোধ জানান। একই সমাবেশ থেকে রাজশাহীবাসীর দীর্ঘদিনের স্বপ্ন উত্তর রাজশাহী সেচ প্রকল্প সু বিবেচনায় নিয়ে দ্রুত বাস্তবায়নের জোর দাবি করা হয়।

স/আর