প্রবাসী আয়ে এবার ছন্দঃপতন

উড়ন্ত গতির প্রবাসী আয়ে ছন্দঃপতন দেখা যাচ্ছে কয়েক মাস ধরে। চলতি অর্থবছরের দ্বিতীয় মাস আগস্টেও প্রবাসী আয়ের গতি আরো নিম্নমুখী হয়ে পড়েছে। এ মাসে প্রবাসীরা দেশে রেমিট্যান্স পাঠিয়েছেন ১৮১ কোটি ডলার। এটি গত পাঁচ মাসের মধ্যে সর্বনিম্ন। এ ছাড়া এটি গত অর্থবছরের একই মাসের চেয়ে প্রায় সাড়ে ১৫ কোটি ডলার কম। সব মিলে চলতি অর্থবছরের প্রথম দুই মাসে (জুলাই-আগস্ট) রেমিট্যান্স এসেছে ৩৬৮ কোটি ১৬ লাখ ডলার। এটি গত অর্থবছরের একই সময়ের চেয়ে প্রায় ১৯ শতাংশ কম। গত অর্থবছরের প্রথম দুই মাসে রেমিট্যান্স এসেছিল ৪৫৬ কোটি ২১ লাখ ডলার। করোনার দ্বিতীয় ধাক্কার প্রভাবে রেমিট্যান্স প্রবাহ কিছুটা নিম্নমুখী হয়ে পড়েছে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা। চলতি অর্থবছরের প্রথম মাস জুলাইয়ে ১৮৭ কোটি ১৫ লাখ ডলারের রেমিট্যান্স পাঠান প্রবাসীরা। এটি ছিল তার আগের চার মাসের মধ্যে সবচেয়ে কম। তবে জুলাইতে রেমিট্যান্স কমার কারণও ছিল। ওই মাসে কোরবানির ঈদের কারণে আগের কয়েক দিন বেশ রেমিট্যান্স এলেও পরের কয়েক দিনে আবার বেশ কমে যায়। তবে সামনের মাসগুলোতে রেমিট্যান্স প্রবাহে স্বাভাবিক গতি ফেরার আশা করা হচ্ছে।

২০১৯ সালের ১ জুলাই থেকে ব্যাংকিং চ্যানেলে রেমিট্যান্স পাঠালে ২ শতাংশ প্রণোদনা দেওয়া হচ্ছে। চলতি অর্থবছরেও এই সুিবধা বহাল রাখা হয়েছে। রেমিট্যান্সে ২ শতাংশ নগদ প্রণোদনা দেওয়ার পর থেকে প্রতি মাসেই প্রবাসীরা পরিবার-পরিজনের কাছে বেশি অর্থ পাঠাচ্ছেন। করোনার সংক্রমণের মধ্যেও তাঁদের এই অর্থ প্রেরণ বেড়েছে। করোনার মধ্যেই সদ্যঃসমাপ্ত ২০২০-২১ অর্থবছরে প্রবাসী আয়ে বড় রেকর্ড হয়। গেল অর্থবছরে প্রবাসীরা প্রায় পৌনে ২৫ বিলিয়ন ডলার বা দুই হাজার ৪৭৮ কোটি ডলারের সমপরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা দেশে পাঠিয়েছেন, যা কোনো এক অর্থবছরে বাংলাদেশের ইতিহাসে এযাবৎকালের সর্বোচ্চ। এটি ২০১৯-২০ অর্থবছরের চেয়ে প্রায় সাড়ে ছয় বিলিয়ন বা ৩৬ শতাংশ বেশি। বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদনে দেখা যায়, ২০২০-২১ অর্থবছরের শেষ মাস জুনেও প্রবাসীরা রেকর্ড পরিমাণ রেমিট্যান্স পাঠান। এ মাসে দেশে রেমিট্যান্স আসে ১৯৪ কোটি ডলার। এটি তার আগের অর্থবছরের একই মাসের চেয়ে ১১ কোটি ডলার বেশি ছিল। ঈদের মাস মেতেও দেশে রেকর্ড পরিমাণ রেমিট্যান্স পাঠান প্রবাসীরা। ওই মাসে ২১৭ কোটি ডলারের বেশি রেমিট্যান্স আসে, যা একক মাস হিসেবে এযাবৎকালের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ। তার আগের মাস এপ্রিলেও রেকর্ড পরিমাণ রেমিট্যান্স আসে দেশে। ওই মাসে দেশে রেমিট্যান্স আসে ২০৬ কোটি ৭১ লাখ ডলার।

বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদনে আরো দেখা যায়, ২০২০-২১ অর্থবছরের প্রথম মাস জুলাইতে রেকর্ড ২৫৯ কোটি ৮২ লাখ ডলারের রেমিট্যান্স আসে, যা একক মাস হিসেবে এযাবৎকালের সর্বোচ্চ। এ ছাড়া আগস্টে ১৯৬ কোটি ৩৯ লাখ ডলার, সেপ্টেম্বরে ২১৫ কোটি ১০ লাখ ডলার, অক্টোবরে ২১০ কোটি ২১ লাখ ডলার, নভেম্বরে ২০৭ কোটি ৮৭ লাখ ডলার, ডিসেম্বরে ২০৫ কোটি ছয় লাখ ডলার, জানুয়ারিতে ১৯৬ কোটি ১৯ লাখ ডলার, ফেব্রুয়ারিতে ১৭৮ কোটি ডলার এবং মার্চে ১৯১ কোটি ৯৫ লাখ ডলারের রেমিট্যান্স আসে।