প্রধানমন্ত্রীর অনুমোদন পেলেই এমপিওভুক্তির প্রজ্ঞাপন

সিল্কসিটিনিউজ ডেস্ক:

বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের বহুল আলোচিত ও কাঙ্ক্ষিত এমপিওভুক্তির চূড়ান্ত তালিকা প্রজ্ঞাপন আকারে প্রকাশ করা হবে। শিক্ষা মন্ত্রণালয় এ প্রজ্ঞাপন জারি করবে। তবে প্রধানমন্ত্রীর অনুমোদনের অপেক্ষায় রয়েছে মন্ত্রণালয়। প্রধানমন্ত্রীর অনুমোদিত তালিকা হাতে পেলেই প্রজ্ঞাপন জারি করবে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। দায়িত্বশীল সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।

সূত্র জানায়, আগামী কয়েকদিনের মধ্যেই এ তালিকা পাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। ঈদুল আজহার পর ১৪ আগস্ট শর্তপূরণ করা প্রায় দুই হাজার ৭০০ স্কুল, কলেজ, মাদরাসা ও কারিগরি প্রতিষ্ঠানের তালিকা প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে পাঠানো হয়েছে।

শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের সিনিয়র সচিব মো. সোহরাব হোসাইন বলেছেন, প্রধানমন্ত্রীর অনুমোদনের পরই শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে প্রতিষ্ঠানের নাম উল্লেখ করে প্রজ্ঞাপন জারি করা হবে। প্রজ্ঞাপন যে দিনই জারি হোক, তালিকায় থাকা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষকরা গত ১ জুলাই থেকেই এমপিও’র সুবিধা পাবেন।

সিনিয়র সচিবের দফতরের দায়িত্বশীল এক কর্মকর্তা জানান, মঙ্গলবার (২০ আগস্ট) পর্যন্ত প্রধানমন্ত্রীর অনুমোদন করা তালিকা মন্ত্রণালয়ে বা সচিবের দফতরে আসেনি। তবে মন্ত্রণালয়ে দিনভরই বিষয়টি নিয়ে আলোচনা ছিল, প্রধানমন্ত্রীর অনুমোদিত তালিকা এসেছে এবং আজই প্রজ্ঞাপন জারি হতে পারে -এমন নানা বিষয়। তবে মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব ও এমপিওভুক্তির জন্য প্রতিষ্ঠান যাচাই-বাছাই কমিটির আহ্বায়ক জাবেদ আহমেদ জানান, প্রজ্ঞাপন জারির কোনো খবর আমার কাছে নেই।

এদিকে কতগুলো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানকে এবার এমপিও তালিকায় স্থান দেয়া হবে -তা নিয়ে নানা কথা শোনা যাচ্ছে। এবার যাদের এমপিও দেয়া হবে তাদের জন্য কিছু শর্তারোপ করা হবে। সাময়িক এবং একটি সময় বেঁধে দেয়া হবে প্রতিষ্ঠানের মান বজায় রাখা হচ্ছে কি না -তা যাচাইয়ের জন্য। তবে তালিকায় কতগুলো স্কুল-কলেজ রয়েছে -তা কেউ নিশ্চিত করতে পারেননি।

এছাড়া শোনা যাচ্ছে মাদরাসা ও কারিগরি প্রতিষ্ঠানের জন্য আলাদা আলাদা প্রজ্ঞাপন জারি করা হবে। কারণ হিসেবে বলা হচ্ছে, কারিগরি ও মাদরাসা বিভাগ আলাদা এবং তাদের নীতিমালা প্রায় এক রকম হলেও আলাদাভাবেই নীতিমালা জারি হয়েছে।

নীতিমালার কঠোর শর্ত কিঞ্চিত শিথিল করে হাওর, চরাঞ্চল, পাহাড়ি ও অনগ্রসর এলাকার কিছু শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানকে এমপিও আওতায় আনার এবং বাদ পড়া উপজেলায় অন্তত একটি করে হলেও প্রতিষ্ঠান এমপিও’র তালিকায় স্থান দেয়ার সুপারিশ করা হয়েছে।

যেসব উপজেলায় কোনো প্রতিষ্ঠানই এতদিন এমপিওভুক্ত ছিল না, নীতিমালা ও যোগ্যতার শর্ত পূরণ করতে পারেনি, তাদের মধ্য থেকে এমপিও আওতায় আনতে শর্ত কিছুটা শিথিল করা হয়েছে। তবে, তা যোগ্যতার ন্যূনতম ৫০ নম্বর প্রাপ্তি সাপেক্ষে করা হয়েছে বলে জানা গেছে।

মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, ২০১০ সালের অভিজ্ঞতাকে বিবেচনায় রেখেই নতুন প্রতিষ্ঠান এমপিও’র আওতায় আনার কাজ চূড়ান্ত করা হয়েছে। নতুন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্ত করার ক্ষেত্রে এখন পর্যন্ত ২০১৮ সালে জারি করা নীতিমালাকে প্রাধান্য দিয়ে তালিকা চূড়ান্তের কাজ চলছে।

তালিকা চূড়ান্ত করার যাচাই-বাছাই কমিটির শীর্ষ একাধিক কর্মকর্তা জানান, তালিকা করার ক্ষেত্রে কোনো ধরনের রাজনৈতিক বিবেচনা বা প্রভাবশালী মহলের তদবীরকে প্রাধান্য দেয়া হয়নি।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে তারা আরও বলেন, পেশাদারিত্ব ও দায়িত্ববোধের দিক থেকে শতভাগ সৎ থেকে তালিকার কাজ করা হয়েছে। পরবর্তী সিদ্ধান্ত বা তালিকায় সংযোজন-বিয়োজন করার দায়িত্ব সরকারের শীর্ষ পর্যায়ের এবং তাদের রাজনৈতিক সিদ্ধান্তের আলোকেই হবে। এ ক্ষেত্রে মন্ত্রণালয়ের বা কর্মকর্তা পর্যায়ের কিছুই করার নেই। মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা সরকারের সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করবেন মাত্র।

বর্তমানে সারাদেশে এমপিওভুক্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ২৬ হাজারের বেশি। এসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে কর্মরত প্রায় ৫ লাখ শিক্ষক-কর্মচারী প্রতি মাসে বেতন ও সরকারি ভাতা পেয়ে থাকেন। এখনও শিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং শিক্ষা বোর্ড স্বীকৃতিপ্রাপ্ত প্রতিষ্ঠান রয়েছে সাড়ে ৫ হাজারের মতো। এখানে কর্মরত রয়েছেন প্রায় ৮০ হাজারের মত শিক্ষক-কর্মচারী। গত বছর (জুলাই ২০১৮) জারি করা এমপিও নীতিমালা অনুসারে এখন এমপিও’র জন্য যোগ্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বাছাই করা হয়েছে ২ হাজার ৭৬২টি। এর মধ্যে বিদ্যালয় ও কলেজ ১ হাজার ৬২৯টি, মাদরাসা ৫৫১টি এবং কারিগরি প্রতিষ্ঠান ৫৮২টি।

গত কয়েক বছর ধরে এমপিওভুক্তির দাবিতে আন্দোলন করা নন-এমপিওভুক্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান শিক্ষক-কর্মচারী ফেডারেশনের সভাপতি অধ্যক্ষ মাহমুদন্নবী ডলার বলেন, আমাদের বিশ্বাস সরকার আমাদের দাবি মেনে নেবেন এবং নির্বাচনের আগে দেয়া প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়ন করবেন।

তিনি আরও বলেন, আমাদের দাবি স্বীকৃতিপ্রাপ্ত সব কয়টি প্রতিষ্ঠানকেই এমপিও’র আওতায় নেয়ার। প্রয়োজনে ধাপে ধাপে করা যেতে পারে। বেতনও ধাপে ধাপে দেয়া হোক। কারণ, ১৭-১৮ বছর ধরে বহু শিক্ষক বিনা বেতনে চাকরি করছেন। তাদের বয়স শেষের দিকে। অন্যথায় এসব শিক্ষক ভয়ানক ক্ষতির মুখে পড়বেন।