প্রধানমন্ত্রীকে ‘ঐতিহাসিক’ টেস্ট দেখার আমন্ত্রণ জানাচ্ছে ভারত

সিল্কসিটিনিউজ ডেস্ক :

আগামী বছরের ফেব্রুয়ারিতে বাংলাদেশ ক্রিকেট দল ভারতের মাটিতে তাদের ‘ঐতিহাসিক’ প্রথম টেস্ট খেলতে নামবে। সেই ম্যাচে উপস্থিত থাকার জন্য বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে অনুরোধ জানাতে চলেছে ভারত।
দিল্লির সাউথ ব্লকে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একটি নির্ভরযোগ্য সূত্রে জানা গেছে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কার্যালয়ে এই বার্তা পাঠানো হবে যে, হায়দরাবাদে অনুষ্ঠেয় টেস্ট ম্যাচটি দেখতে তিনি রাজি হলে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিও যেভাবেই হোক সময় বের করে সেখানে যাবেন।

 

দুজনে পাশাপাশি বসে কিছুটা সময়ের জন্য ম্যাচটি দেখবেন এবং এর মাধ্যমে রচিত হবে ক্রিকেট-কূটনীতির এক নতুন দিগন্ত।
আসলে ডিসেম্বরের তৃতীয় সপ্তাহে শেখ হাসিনার ভারত সফরে আসার কথা থাকলেও শেষ মুহূর্তে তা স্থগিত হয়ে যাওয়ায় সাউথ ব্লক যে কিছুটা হলেও বিচলিত, তা গোপন নয়।
প্রধানমন্ত্রী হাসিনা ঠিক কী কারণে এখন আসতে চাইলেন না এবং তিস্তা চুক্তি নিয়ে তার মধ্যে কোনও সংশয় বা অস্বস্তি কাজ করছে কিনা, সেটা জানতে ভারতের পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী এম জে আকবরকে তড়িঘড়ি ঢাকায় পাঠানো হয়েছিল।

 

তিনি দীর্ঘদিন ধরে ভারত সরকারের তরফে বাংলাদেশের সঙ্গে রাজনৈতিক যোগাযোগ রেখে চলেছেন। আকবর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে দেখা করে ঢাকা থেকে ফেরার পরই হায়দরাবাদ টেস্টে তাকে আমন্ত্রণ জানানোর ব্যাপারে ভাবনাচিন্তা শুরু হয়েছে।

 
২০০০ সালে আইসিসি’র পূর্ণ সদস্যপদ পেলেও আজ পর্যন্ত ভারতের মাটিতে কোনও টেস্ট ম্যাচ খেলেনি বাংলাদেশ। কোনও না কোনও অজুহাতে বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের সফর বারবার পিছিয়ে দিয়েছে ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ড (বিসিসিআই)।

 

অবশেষে চলতি বছরের আগস্টে ঘোষণা করা হয়, ২০১৭ সালের ৮ থেকে ১২ ফেব্রুয়ারি বাংলাদেশ ভারতে এসে তাদের প্রথম টেস্ট ম্যাচটি খেলবে। আর ম্যাচটি হবে হায়দরাবাদের রাজীব গান্ধী আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামে।
ডিসেম্বরে শেখ হাসিনার ভারত সফর স্থগিত হয়ে যাওয়ার পর আগামী বছরের জানুয়ারি-ফেব্রুয়ারিতে সফরের নতুন দিনক্ষণ স্থির করার চেষ্টা চলছে। ভারত চাইছে সেই সফরের মধ্যে ক্রিকেটকেও জুড়ে দিতে, যা দু’দেশের সম্পর্ক মজবুত করতে বড় ভূমিকা পালন করতে পারে।
ভারত সফরে এসে বিদেশি সরকারপ্রধান বা রাষ্ট্রপ্রধানদের নিজের দেশের ক্রিকেট ম্যাচ দেখতে মাঠে উপস্থিত হওয়ার নজির অবশ্য অতীতেও আছে। ১৯৮৭’র ফেব্রুয়ারিতে পাকিস্তানের তখনকার সামরিক শাসক জেনারেল জিয়াউল হক ভারতকে খানিকটা অবাক করেই এসে হাজির হয়েছিলেন জয়পুরে, পাকিস্তান ও ভারতের মধ্যে সিরিজের তৃতীয় টেস্ট ম্যাচ দেখতে।
সাম্প্রতিক অতীতেও এমন উদাহরণ আছে। ২০১১ সালে বিশ্বকাপ সেমিফাইনাল দেখতে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রীকে আমন্ত্রণ জানিয়েছিল ভারত। মোহালিতে অনুষ্ঠিত ভারত-পাকিস্তানের সেই ‘হাইভোল্টেজ’ ম্যাচ পাশাপাশি বসে দেখেছিলেন দু’দেশের প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিং ও ইউসুফ রাজা গিলানি।

তবে ভারত-পাকিস্তানের মধ্যে সেই ক্রিকেট-কূটনীতি ছিল দুই চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী দেশের মধ্যে বরফ গলানোর চেষ্টা। আর শেখ হাসিনা ও নরেন্দ্র মোদি পাশাপাশি বসে ‘ঐতিহাসিক’ টেস্ট ম্যাচটি দেখলে সেটা হবে বন্ধুপ্রতিম দুই প্রতিবেশীর সম্পর্ক এক নতুন উচ্চতায় পৌঁছে যাওয়া। অন্তত বিষয়টাকে এভাবেই দেখতে চাইছেন ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের নীতি-নির্ধারকরা।
ভারতের এই ক্রিকেট-প্রস্তাবে শেখ হাসিনা শেষ পর্যন্ত রাজি হবেন কিনা, বা ফেব্রুয়ারির ৮ থেকে ১২ তারিখের মধ্যে কোনও একটা দিন তিনি ভারত সফরে এসে হায়দরাবাদ টেস্টের জন্য সময় বের করতে পারবেন কিনা সেটা অবশ্য আলাদা প্রশ্ন। কিন্তু বাংলাদেশের সামনে আনুষ্ঠানিক প্রস্তাব পেশের আগে থেকেই এই ক্রিকেট-কূটনীতিকে ঘিরে নতুন সম্ভাবনার আলো দেখতে শুরু করেছে দিল্লির সাউথ ব্লক।

সূত্র :  বাংলাট্রিবিউন