প্রথম ১০ মাসে ৯২ হাজার কোটি টাকার সঞ্চয়পত্র বিক্রি

চলতি অর্থবছরের প্রথম ১০ মাসে (জুলাই-এপ্রিল) প্রায় ৯২ হাজার কোটি টাকার (৯১ হাজার ৮৭৭ কোটি) সঞ্চয়পত্র বিক্রি হয়েছে। এ সময়ে আগে বিক্রি হওয়া সঞ্চয়পত্রের মুনাফা ও মূল টাকা পরিশোধ হয়েছে ৫৭ হাজার ১৪৮ কোটি টাকা। ফলে সঞ্চয়পত্র থেকে উল্লিখিত সময় সরকারের নিট ঋণ দাঁড়িয়েছে প্রায় ৩৪ হাজার ৭২৯ কোটি টাকা। সঞ্চয়পত্র অধিদপ্তরের হালনাগাদ প্রতিবেদনে এ তথ্য উঠে এসেছে।

সংশ্লিষ্টরা জানান, মূলধন নিরাপদ ও বেশি লাভের আশায় সাধারণ মানুষের কাছে বিনিয়োগের প্রথম পছন্দ এখন সঞ্চয়পত্র। তাই সঞ্চয়পত্র কেনায় ঝুঁকছেন বিনিয়োগকারীরা। করোনা মহামারির সৃষ্ট অর্থনৈতিক সংকটের মধ্যেও বেড়েছে সঞ্চয়পত্র বিক্রি।

তাদের মতে, একদিকে ব্যাংকে আমানতের সুদহার কম। অন্যদিকে দুর্নীতি অনিয়মের কারণে কয়েকটি ব্যাংক সাধারণ মানুষের আস্থা হারিয়েছে। আর নন ব্যাংক আর্থিক প্রতিষ্ঠানের হাতেগোনা কয়েকটি ছাড়া বেশিরভাগই রোগাক্রান্ত। বিশেষ করে ৬টি প্রতিষ্ঠান আমানত ফেরত দিতে পারছে না। এসব কারণে বিনিয়োগের জন্য সঞ্চয়পত্রকে ঝুঁকিমুক্ত ও নিরাপদ মনে করছেন সাধারণ মানুষ। তাই বিভিন্ন শর্ত পরিপালন করেই সঞ্চয়পত্রে ঝুঁকছেন বিনিয়োগকারীরা।

জানা যায়, চলতি অর্থবছরের প্রথম ১০ মাসে বাজেট ঘাটতি মেটাতে সঞ্চয়পত্র থেকে যে অঙ্কের ঋণ নেওয়ার লক্ষ্য ঠিক করা হয়েছিল, তার চেয়ে প্রায় ৭৪ শতাংশ এবং সংশোধিত লক্ষ্যমাত্রার প্রায় ১৫ শতাংশ বেশি ঋণ নিয়েছে সরকার। চলতি অর্থবছরে বাজেটে লক্ষ্য ছিল ২০ হাজার কোটি টাকা। তবে সঞ্চয়পত্র বিক্রি বেড়ে যাওয়ায় সংশোধন করে তা বাড়িয়ে ৩০ হাজার ৩০৩ কোটি টাকা করা হয়।

বাংলাদেশ ব্যাংকের জানুয়ারির তথ্য অনুযায়ী, বেশিরভাগ বাণিজ্যিক ব্যাংক আমানতের বিপরীতে ৪ থেকে ৬ শতাংশ সুদ বা মুনাফা দিচ্ছে। অন্যদিকে সঞ্চয়পত্রে সুদ মিলছে ১১ শতাংশের উপরে।

সঞ্চয়পত্র অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, একক মাস হিসাবে চলতি অর্থবছরের এপ্রিলে মোট ৫ হাজার ৮৮৬ কোটি ৮৭ লাখ টাকার সঞ্চয়পত্র বিক্রি হয়েছে। এর বিপরীতে মূল অর্থ পরিশোধ হয়েছে ৪ হাজার ৩৬০ কোটি ৮৮ লাখ টাকা। সে হিসাবে এপ্রিলে নিট বিক্রির অঙ্ক দাঁড়িয়েছে ১ হাজার ৫২৬ কোটি টাকা।

সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান, আগে বিক্রি হওয়া সঞ্চয়পত্রের সুদ-আসল পরিশোধের পর যা অবশিষ্ট থাকে, তাকে নিট বিক্রি বলা হয়। বিক্রির ওই অর্থ সরকারের কোষাগারে জমা থাকে এবং সরকার তা রাষ্ট্রীয় কর্মসূচি বাস্তবায়নে কাজে লাগায়। এর বিনিময়ে সঞ্চয়পত্রের গ্রাহকদের প্রতি মাসে সুদ দিতে হয়। এ কারণে অর্থনীতির পরিভাষায় সঞ্চয়পত্রের নিট বিক্রিকে সরকারের ঋণ বা ধার হিসাবে গণ্য করা হয়।

জাতীয় বাজেটে ঘাটতি পূরণে অভ্যন্তরীণ উৎসের মধ্যে অন্যতম সঞ্চয়পত্র। ৩ জুন জাতীয় সংসদে ২০২১-২২ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেট পেশ করেছেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। প্রস্তাবিত বাজেটে ঘাটতি ধরা হয়েছে ২ লাখ ১১ হাজার ১৯১ কোটি টাকা। আর অনুদান ছাড়া ঘাটতির পরিমাণ হচ্ছে ২ লাখ ১৪ হাজার ৬৮১ কোটি টাকা। বাজেটের আয়-ব্যয়ের ঘাটতি পূরণে সঞ্চয়পত্র থেকে ৩২ হাজার কোটি টাকা ঋণ নেওয়ার লক্ষ্য ঠিক করা হয়েছে। যা চলতি অর্থবছরের চেয়ে ৬০ শতাংশ বেশি। এছাড়া এবারের বাজেটে দুই লাখ টাকার বেশি সঞ্চয়পত্র বা পোস্টাল সেভিংস কিনতে হলে কর শনাক্তকরণ নম্বর (টিআইএন) বাধ্যতামূলক করা হয়েছে।

সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগ নিরুৎসাহিত করতে সর্বশেষ ২০১৫ সালের মে মাসে সব ধরনের সঞ্চয়পত্রের সুদহার গড়ে ২ শতাংশ করে কমানো হয়েছিল। ওই সুদহারই এখন পর্যন্ত বহাল আছে। বর্তমানে পরিবার সঞ্চয়পত্রের মুনাফার হার ১১ দশমিক ৫২ শতাংশ। ৫ বছর মেয়াদি বাংলাদেশ সঞ্চয়পত্রের মুনাফার হার ১১ দশমিক ২৮ শতাংশ, ৩ মাস অন্তর মুনাফাভিত্তিক সঞ্চয়পত্রের মুনাফার হার ১১ দশমিক ০৪ শতাংশ, পরিবার সঞ্চয়পত্রের মুনাফার হার ১১ দশমিক ৫২ শতাংশ এবং পেনশনার সঞ্চয়পত্রের মুনাফার হার ১১ দশমিক ৭৬ শতাংশ। ২০১৫ সালের ২৩ মের পর থেকে এ হার কার্যকর আছে। এর আগে সঞ্চয়পত্রের মুনাফার হার ছিল ১৩ শতাংশেরও বেশি।

 

সূত্রঃ যুগান্তর