‘প্রতিবেশী দেশের কর্মকর্তার ষড়যন্ত্রে দেশ ছাড়ছে সানোফি’

সিল্কসিটিনিউজ ডেস্ক:

লাভজনক প্রতিষ্ঠান হওয়া সত্ত্বেও বাংলাদেশ থেকে ব্যবসা গুটিয়ে নিচ্ছে বিদেশি ওষুধ কোম্পানি সানোফি।

তবে যাওয়ার পেছনে কোনো সুনির্দিষ্ট কারণ উল্লেখ করেনি ফ্রান্সভিত্তিক এ কোম্পানিটি।

শ্রমিক নেতারা বলছেন, দেড় বছর আগে প্রতিবেশী একটি দেশ থেকে রামপ্রসাদ ভাট নামে একজনকে চেয়ারম্যান নিয়োগ দেয়া হয়।

তার ষড়যন্ত্রে এ ঘটনা ঘটতে পারে। আর এ বিষয়ে ব্যবস্থা নেয়ার জন্য সরকারের উদাসীনতা রয়েছে।

রোববার জাতীয় প্রেসক্লাবে এক সংবাদ সম্মেলনে সানোফি বাংলাদেশ শ্রমিক ও কর্মচারী ইউনিয়নের নেতারা এসব কথা বলেন।

এতে বক্তব্য রাখেন সংগঠনের সভাপতি আবদুর রাজ্জাক, সাধারণ সম্পাদক গোলাম মোস্তফা, ওয়ার্কার্স ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক কুতুবুদ্দীন আহমেদ এবং বাংলাদেশ সমাজতান্ত্রিক দলের নেতা রাজেকুজ্জামান রতন।

অনুষ্ঠানে বক্তারা বলেন, এ কোম্পানি চলে গেলে কমপক্ষে এক হাজার পরিবার ক্ষতিগ্রস্ত হবে। এ জন্য প্রতিষ্ঠানটিকে ধরে রাখতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়ার জন্য সরকারের কাছে দাবি জানান তারা।

কুতুবুদ্দীন আহমেদ বলেন, কোম্পানিটি অত্যন্ত ভালোভাবে চলছিল। গত বছর ৭২ কোটি টাকা নিট মুনাফা করেছে। এখান থেকে শ্রমিকদের ৫ শতাংশ হারে মোট ৩ কোটি ৬০ লাখ দিয়েছে।

কিন্তু হঠাৎ করে পত্রিকার মাধ্যমে তাদের চলে যাওয়ার খবর জানতে পারি। এ জন্য শ্রমিকদের লিখিতভাবে কিছু জানানো হয়নি।

তিনি বলেন, আমাদের ধারণা- প্রতিবেশী একটি দেশের (ভারত) ষড়যন্ত্র রয়েছে। কারণ দেড় বছর আগে ওই দেশ থেকে একজন চেয়ারম্যান নিয়োগ দেয়া হয়। তার নাম রামপ্রসাদ ভাট।

এর আগে গ্লাস্কো স্মিথ কেলাইনের ক্ষেত্রেও একই ঘটনা ঘটেছে। ওই দেশ থেকে চেয়ারম্যান নিয়োগ দেয়ার পর প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ থেকে চলে গেছে।

তিনি বলেন, তাদের মাথায় বড় পরিকল্পনা রয়েছে। পণ্য উৎপাদন হবে ওই দেশে। কিন্ত বাজার ধরবে বাংলাদেশের। তার মতে, সানোফির ওষুধ অনেক মানসম্মত। ফলে এটিকে নিয়েই ষড়যন্ত্র করা হচ্ছে। আবদুর রাজ্জাক বলেন, একটি স্বার্থান্বেষী মহল কোম্পানিকে ভুল বুঝিয়ে এ দেশ থেকে নিয়ে যাচ্ছে। কিন্তু এখন পর্যন্ত লিখিতভাবে শ্রমিকদের কিছু জানানো হয়নি।

তবে কোম্পানির ব্যবস্থাপনা পরিচালক চলে যাওয়ার বিষয়টি মৌখিকভাবে জানিয়েছেন। তারা বলেন, তারা রাজি থাকলে শ্রমিকরাও এ কোম্পানি চালানোর দায়িত্ব নিতে পারে।

গোলাম মোস্তফা বলেন, ১৯৫৮ সালে কোম্পানিটি এ দেশে আসে। তখন থেকেই লাভজনক ছিল। বর্তমানে এই প্রতিষ্ঠানে এক হাজার শ্রমিক রয়েছেন।

তাদের পরিবার মিলিয়ে লোক সংখ্যা ৫ হাজার ছাড়িয়ে যাবে। আর এই কোম্পানি চলে গেলে, শ্রমিকরা বেকার হয়ে যাবেন। তাদের ধরে রাখতে সরকারকে উদ্যোগ নিতে হবে।

রাজেকুজ্জামান রতন বলেন, ব্যবসা গুটিয়ে নয়, এই কোম্পানি বাংলাদেশ থেকে পালিয়ে যাচ্ছে। এটিকে প্রতিরোধ করতে হবে।

কারণ এ কোম্পানি যখন বাংলাদেশে ব্যবসা শুরু করে, তখন কিছু শর্ত পালন করেছে। আর চলে যাওয়ার জন্যও শর্ত মানতে হবে। যে কেউ চাইলেই বাংলাদেশ থেকে চলে যেতে পারবে না। এ ক্ষেত্রে কয়েকটি করণীয় রয়েছে।

প্রথমত রাষ্ট্রকে কোম্পানি চালানোর দায়িত্ব নিতে হবে। আর রাষ্ট্র না পারলে শ্রমিকরাই দায়িত্ব নিতে পারে। এ ক্ষেত্রে কোম্পানি রাজি না হলে তাদের সব সম্পদ বাজেয়াপ্ত করতে হবে।

বক্তারা বলেন, এই কোম্পানি চলে গেলে বাজারে মানহীন ওষুধের রাজ্য তৈরি হবে। বাংলাদেশে কোনো ওষুধ কোম্পানি লোকসান হচ্ছে না।

আর সানোফি দীর্ঘদিন থেকে মুনাফা করছে। এ মুনাফার অংশীদার বাংলাদেশের জনগণ। ফলে তাদের বঞ্চিত করে কোনোভাবেই এই কোম্পানিকে যেতে দেয়া হবে না।