শুক্রবার , ২৫ জানুয়ারি ২০১৯ | ২৮শে জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
  1. অন্যান্য
  2. অপরাধ ও দুর্নীতি
  3. অর্থ ও বাণিজ্য
  4. আইন আদালত
  5. আন্তর্জাতিক
  6. কৃষি
  7. খেলা
  8. চাকরি
  9. ছবিঘর
  10. জাতীয়
  11. তথ্যপ্রযুক্তি
  12. দুর্ঘটনা
  13. ধর্ম
  14. নারী
  15. নির্বাচিত খবর

প্রতিবন্ধী তারা মিয়া

Paris
জানুয়ারি ২৫, ২০১৯ ৩:৫৪ অপরাহ্ণ

সিল্কসিটিনিউজ ডেস্ক:

জামালগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবুল হাসেমের বক্তব্যে মনে করার যথেষ্ট কারণ আছে যে পুলিশের ওপর হামলার মামলায় অভিযুক্ত তারা মিয়া উচ্চ আদালতের নির্দেশে ছয় সপ্তাহের জামিন পেলেও সহজে মামলা থেকে রেহাই পাচ্ছেন না। পত্রিকার ছবি ও খবরে দেখা যাচ্ছে, তারা মিয়ার এক হাত সম্পূর্ণ অকেজো, অন্য হাতেও তেমন কাজকর্ম করতে পারেন না, ভিক্ষা করে জীবিকা নির্বাহ করেন। কিন্তু মামলার বাদী কমলগঞ্জ থানার ওসি বলছেন, তাঁরা জেনেবুঝেই মামলা করেছেন। তারা মিয়ার এক হাত অকেজো হলেও তিনি অন্য হাতে সব কাজ করতে পারেন। সব কাজ বলতে কি তিনি পুলিশের ওপর রামদা, হকিস্টিক ও লোহার রড দিয়ে হামলার কথাই বুঝিয়েছেন?

স্ত্রী, এক ছেলে ও দুই মেয়ে নিয়ে তারা মিয়ার সংসার। জন্ম থেকেই তাঁর ডান হাতটি চিকন। এই হাত দিয়ে তিনি কোনো কাজ করতে পারেন না। ভিক্ষা করে ও মানুষের সাহায্যে তাঁর চলে সংসার। অথচ বিশেষ ক্ষমতা আইনের ওই মামলায় বলা হয়, গত ২৮ ডিসেম্বর পুলিশ খবর পায়, সুনামগঞ্জ জেলার জামালগঞ্জ উপজেলার ভীমখালি ইউনিয়নের মল্লিকপুর বাজারের মধ্যবাজার গলিতে কিছু লোক জড়ো হয়ে পঞ্চগ্রাম মাদ্রাসা ভোটকেন্দ্রে নাশকতার পরিকল্পনা করছেন। পুলিশ গিয়ে দেখতে পায়, আসামিরা রামদা, হকিস্টিক, লোহার রড, লাঠি ও ইটপাটকেল নিয়ে ধানের শীষ প্রতীকের নামে মিছিল করে অরাজক পরিস্থিতির সৃষ্টি করেছেন। পরে আসামিরা পুলিশের ওপর হামলা চালান। পরদিন পুলিশ তাঁদের বিরুদ্ধে মামলাটি করে, যার আসামিদের মধ্যে তারা মিয়ার নামও আছে। কোনো প্রতিবন্ধী মানুষ, যিনি ভিক্ষাবৃত্তি করে জীবিকা নির্বাহ করেন, তিনি পুলিশের ওপর হামলা করে মামলার আসামি হয়েছেন—এমন অবিশ্বাস্য দৃষ্টান্তের জন্ম দিয়েছে কমলগঞ্জ থানার পুলিশ।

এই মামলায় জামিন নিতে প্রতিবন্ধী তারা মিয়াকে হাইকোর্টে ধরনা দিতে হয়েছিল। গত বুধবার প্রতিবেদন ছাপা হলে আসামিপক্ষের আইনজীবী আদালতের দৃষ্টি আকর্ষণ করে তাঁর জামিনের আবেদন করেন। আদালত তাঁকে ছয় সপ্তাহের অন্তর্বর্তীকালীন জামিন দিয়ে মেয়াদ শেষে তাঁকে নিম্ন আদালতে আত্মসমর্পণ করতে বলেছেন।

পুলিশ তারা মিয়ার বিরুদ্ধে নাশকতা ও পুলিশের ওপর হামলার যে মামলা দায়ের করেছে, তা বিচ্ছিন্ন কোনো ঘটনা নয়। কমলগঞ্জের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার ভাষ্য অনুযায়ী এ রকম ‘জেনেবুঝে’ আসামি করার অসংখ্য উদাহরণ আছে। ২০১৫ সালে বিএনপির ডাকা হরতাল-অবরোধের সময় যত নাশকতার মামলা হয়েছে,গত সেপ্টেম্বরে হয়েছে তার চেয়ে কয়েক গুণ বেশি। এসব কথিত নাশকতা ও পুলিশের ওপর হামলার বেশির ভাগই যে ভিত্তিহীন ও গায়েবি, তা নানা তথ্য-উপাত্তে উঠে এসেছে।

নির্বাচনের আগে যেখানে বিরোধী দল, বিশেষ করে ধানের শীষের সমর্থকেরা পালিয়ে বেড়াচ্ছিলেন, সেখানে এভাবে রামদা, হকিস্টিক ও লোহার রড নিয়ে পুলিশের ওপর সংঘবদ্ধ হামলা চালানো তাঁদের পক্ষে সম্ভব কি না, সেই বিষয়টি তলিয়ে দেখা প্রয়োজন। যেহেতু পুলিশ মামলা করেছে, সেহেতু তাদের ওপর তদন্তের ভার দিলে হবে না। তারা মিয়ার বিরুদ্ধে আনীত মামলার বিচার বিভাগীয় তদন্ত হোক।

উচ্চ আদালতে ছয় সপ্তাহের অন্তর্বর্তী জামিন পাওয়ায় তারা মিয়া আপাতত পুলিশি হয়রানি থেকে রেহাই পেলেন। কিন্তু  আমাদের দাবি, প্রতিবন্ধী মানুষটিকে মামলা থেকে পুরোপুরি রেহাই দেওয়া হোক। সে ক্ষেত্রে যাঁরা ‘জেনেবুঝে’ মামলাটি দিয়েছেন, তাঁদের কর্তব্য হবে অবিলম্বে তা প্রত্যাহার করা। একই সঙ্গে এ ধরনের সব ‘গায়েবি মামলা’ প্রত্যাহার হোক।

সর্বশেষ - মতামত