প্রতিটি মানুষকে বিনামূল্যে করোনা ভ্যাকসিন দিতে হবে: জিএম কাদের

জাতীয় পার্টি চেয়ারম্যান ও বিরোধী দলীয় উপনেতা জিএম কাদের সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়ে বলেছেন, প্রতিটি মানুষকে বিনামূল্যে করোনাভাইরাস প্রতিরোধের ভ্যাকসিন দিতে হবে।

তিনি বলেন, দেশের হতদরিদ্র মানুষের পক্ষে পয়সা খরচ করে ভ্যাকসিন নেয়া হয়তো সম্ভব হবে না। তাই সবার জন্য বিনামূল্যে করোনার ভ্যাকসিন নিশ্চিত করতে হবে।

জিএম কাদের বলেন, দেশের মানুষ ভ্যাকসিনের ব্যাপারে পরিচ্ছন্ন ধারণা চায়।  দেশের মানুষ করোনা প্রতিরোধে ভ্যাকসিনের ব্যাপারে আস্থাশীল হতে চায়। সরকারকে এ ব্যাপারে দায়িত্বশীল ভূমিকা রাখতে হবে।

বুধবার দুপুরে জাতীয় পার্টি চেয়ারম্যানের বনানী কার্যালয় মিলনায়তনে বাংলাদেশ বেসরকারি শিক্ষক-কর্মচারী ফোরাম নেতাদের সঙ্গে মতবিনিময়কালে তিনি এসব কথা বলেন।

এদিন বেসরকারি শিক্ষক-কর্মচারী ফোরাম নেতারা জাতীয় পার্টি চেয়ারম্যানকে ফুলের শুভেচ্ছা জানাতে তার কার্যালয়ে আসেন।

এ সময় প্রধান অতিথির বক্তব্যে জাতীয় পার্টি চেয়ারম্যান আরও বলেন, শীতের শুরুতেই ইউরোপ-আমেরিকাসহ বিভিন্ন দেশে করোনার প্রকোপ বেড়ে যাচ্ছে। বাংলাদেশেও করোনার প্রকোপ বেড়ে যাচ্ছে। কিন্তু দৃশ্যমান প্রস্তুতি নেই করোনা মোকাবেলায়।

তিনি বলেন, সংশ্লিষ্ট মন্ত্রীরা বলেন- সব প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে। কিন্তু ঢাকা শহরে টাকা খরচ করেও বেসরকারি হাসপাতালে লাইফ সাপোর্ট মিলছে না। করোনা আক্রান্ত রোগীদের কারও শ্বাসকষ্ট হলে হাহাকার শুরু হয়ে যায়। বাবার চোখের সামনে সন্তান শ্বাসকষ্টে মারা যায়, কিন্তু কিছুই করার থাকে না।

জিএম কাদের বলেন, প্রতিটি হাসপাতালে চিকিৎসাসেবা ফ্রি করে দিতে হবে।  ঢাকার বাইরে সরকারি হাসপাতালে করোনা চিকিৎসাসেবা নেই বললেই চলে। শ্বাসকষ্ট হলে অক্সিজেন সহায়তা মিলছে না।  হাজার হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে বিভিন্ন প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হয়, কিন্তু মানুষের জীবন বাঁচাতে প্রয়োজনীয় দৃশ্যমান উদ্যোগ নেই।

তিনি আরও বলেন, মানসম্মত শিক্ষা ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে শিক্ষা ব্যবস্থা জাতীয়করণ জরুরি।  প্রাথমিক পর্যায়ে শিক্ষা সমমান হলে অবশ্যই ইবতেদায়িকে জাতীয়করণ করতে হবে। তিনি দুঃখ প্রকাশ করে বলেন, ধনীদের সন্তানরা শিক্ষায় যে সুবিধা ভোগ করে, গরিব মানুষের সন্তানরা সেই সুযোগ পায় না। তাই দেশের বৈষম্য দূর হয় না। বৈষম্যহীন দেশ গড়তে সব শিক্ষার্থীর জন্য সমান সুযোগ নিশ্চিত করতে হবে। শিক্ষাকে জাতীয়করণ করে প্রয়োজনে বেসরকারি শিক্ষকদের বিসিএস পরীক্ষায় অংশ নিতে সুযোগ দিতে হবে। যারা উত্তীর্ণ হবে তারা সরকারি সুযোগ পাবে। যেসব শিক্ষক উত্তীর্ণ হতে পারবে না তারা পূর্বের স্কেলে সুযোগ পেয়ে পুনরায় যাতে পরীক্ষায় অংশ নিতে পারে সে ব্যবস্থা করতে হবে।

এ সময় জাতীয় পার্টি মহাসচিব জিয়াউদ্দিন আহমেদ বাবলু বলেন, যতই পদ্মা সেতু আর ফ্লাইওভার নির্মাণ করা হোক শিক্ষার মানোন্নয়ন না হলে দেশের প্রকৃত উন্নয়ন সম্ভব নয়। তিনি বলেন, পল্লীবন্ধু হুসেইন মুহম্মদ এরশাদই প্রথম পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত বিনামূল্যে পাঠ্যবই বিতরণ করেছিলেন। তিনি শিক্ষা মন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করে বলেন, বর্তমান শিক্ষা ব্যবস্থা যদি সার্টিফিকেট সর্বস্ব হয়, তাহলে প্রকৃত শিক্ষা ব্যবস্থা চালু করছেন না কেন?

বাবলু বলেন, শিক্ষা ব্যবস্থায় অটো প্রমোশন কখনোই কাম্য হতে পারে না। লটারীর মাধ্যমে ছাত্র ভর্তির প্রক্রিয়া সুফল বয়ে আনবে না।

এ সময় অন্যদের মধ্যে বক্তব্য দেন- জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য সুনীল শুভরায়, যুগ্ম মহাসচিব ফখরুল আহসান শাহজাদা, সাংগঠনিক সম্পাদক মো. হেলাল উদ্দিন, যুগ্ম সাংগঠনিক সম্পাদক শরফুদ্দিন আহমেদ শিপু।

বাংলাদেশ বেসরকারি শিক্ষক-কর্মচারী ফোরামের সভাপতি মো. সাঈদুল হাসান সেলিম, মহাসচিব রেহান উদ্দিন, বেসরকারি শিক্ষক-কর্মচারী ফোরামের কেন্দ্রীয় নেতা মো. রফিকুল ইসলাম, হাফেজ মাওলানা হাফিজুর রহমান, আবদুর রহমান, দেলোয়ার হোসেন আজিজি ও হারুন অর রশীদ।

জাতীয় পার্টির নেতাদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন- পার্টির চেয়ারম্যানের উপদেষ্টা মাহমুদুর রহমান মাহমুদ, সাংগঠনিক সম্পাদক এনাম জয়নাল আবেদিন, সৈয়দ মঞ্জুরুল হোসেন মঞ্জু, দফতর সম্পাদক-২ এমএ রাজ্জাক খান, শিক্ষা বিষয়ক সম্পাদক মিজানুর রহমান মিরু, যুগ্ম সাংগঠনিক সম্পাদক নুরুল হক নুরু, যুগ্ম দফতর সম্পাদক মাহমুদ আলম, কেন্দ্রীয় নেতা আবুল কাশেম, আলমগীর হোসেন, ওমর আলী খান মান্নাফ, সারোয়ার হোসেন, জাতীয় ছাত্র সমাজের দফতর সম্পাদক রুহুল আমিন গাজী বিপ্লব।

 

সূত্রঃ যুগান্তর