পোশাক শ্রমিকদের মজুরি ও ঈদ বোনাস নিয়ে অনিশ্চয়তা

করোনাভাইরাস মহামারির প্রভাবে দেশের বেশির ভাগ রপ্তানি আয়ের তৈরি পোশাক খাতে ধস নামায় শ্রমিকদের জুন মাসের মজুরি ও ঈদ বোনাস পাওয়া নিয়ে অনিশ্চয়তা সৃষ্টি হয়েছে। এ সংকট কাটাতে আরো তিন মাসের মজুরির জন্য সরকারের দিকে তাকিয়ে আছেন এই খাতের উদ্যোক্তারা। এরই মধ্যে অর্থমন্ত্রী এবং প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে চিঠিও দিয়েছে এ খাতের সংগঠন বিজিএমইএ এবং বিকেএমইএ। সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।

সংশ্লিষ্টরা বলেন, এরই মধ্যে বেশ কিছু কারখানা জুন মাসের মজুরি পরিশোধ করলেও বেশির ভাগ কারখানাই জুন মাসের মজুরি পরিশোধ ও ঈদ বোনাস এবং চলতি মাসের আংশিক মজুরি নিয়ে কঠিন সংকটে পড়ার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে।

জানা গেছে, এর আগে রপ্তানিমুখী শিল্পের শ্রমিকদের বেতন-ভাতা দিতে পাঁচ হাজার কোটি টাকার তহবিল দিয়েছিল সরকার। দুই মাসেই সেই তহবিলের টাকা খরচ হয়ে যায়। জুনের মজুরি দিতে দুই হাজার ৯০৩ কোটি টাকা প্রয়োজন। বড় শিল্প ও সেবা খাতের ৩০ হাজার কোটি টাকার তহবিল থেকে পোশাক শ্রমিকদের জুন মাসের বেতন দেওয়ার জন্য সরকারের নির্দেশনা রয়েছে।

জানতে চাইলে নিট পোশাক খাতের সংগঠন বিকেএমইএর জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি মোহাম্মদ হাতেম  বলেন, ‘আমরা সরকারের কাছে আরো তিন মাসের মজুরি দিতে সহায়তা চেয়েছি। সরকার জুন মাসের মজুরি দিতে বড় শিল্প ও সেবা খাতের জন্য বরাদ্দ তহবিল থেকে টাকা দেওয়ার নির্দেশনা দিলেও ব্যাংকগুলোর গড়িমসির কারণে অনেক উদ্যোক্তাকে এই টাকা পেতে সমস্যায় পড়তে হচ্ছে।’

এদিকে শ্রমিক সংগঠনের নেতারা বলেন, শ্রমিকদের জুন মাসের মজুরি, ঈদ বোনাস ও চলতি জুলাই মাসের অর্ধেক মজুরির ব্যাপারে তাঁদের জোরালো দাবি থাকলেও মালিকরা এই বিষয়ে মুখ খুলছেন না। মাসের ১০ তারিখের মধ্যে এর আগের মাসের মজুরি পরিশোধের আইন থাকলেও গত ১২ জুলাই পর্যন্ত অধিকাংশ কারখানাই মজুরি পরিশোধে ব্যর্থ হয়েছে। ফলে শ্রমিকদের মজুরি ও ঈদ বোনাসসহ অন্যান্য বকেয়া নিয়ে একটা ধোঁয়াশা তৈরি হয়েছে। তাঁরা বলছেন, শ্রমিকদের সংকটে ফেলে উদ্যোক্তারা সরকারের দিকে তাকিয়ে আছেন। বরাবরই তাঁরা এসব করেন শ্রমিকদের দোহাই দিয়ে সুবিধা নিতে।

তাঁরা জানান, কারখানার মালিকরা বলছেন, টাকা পেলে ঈদের বোনাস দেওয়া হবে। চলতি মাসের শেষের দিকে ঈদ। ফলে জুলাই মাসের মজুরি দেওয়া হবে কি না এই নিয়েও একটা ধোঁয়াশা তৈরি হয়েছে। আর ঈদের আগে বেতন-বোনাস না দিলে কিছু কিছু কারখানায় পরিস্থিতি ভয়াবহ রূপ নিতে পারে।

মোহাম্মদ হাতেম বলেন, ৩০ হাজার কোটি টাকার প্রণোদনা প্যাকেজ থেকে মজুরির জন্য টাকা দিতে সরকারের নির্দেশনা থাকলেও অনেক ব্যাংক টাকা দিচ্ছে না। আর টাকা না পেলে জুলাই মাসের বেতন-বোনাস দেওয়া কঠিন হয়ে পড়বে।

বাংলাদেশ গার্মেন্ট অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিয়াল শ্রমিক ফেডারেশনের সভাপতি বাবুল আখতার  বলেন, তৈরি পোশাক খাতের শ্রমিকদের মধ্যে একটা থমথমে ভাব বিরাজ করছে। শ্রমিক ছাঁটাই চলছে। কারখানা বন্ধ হচ্ছে। আগামী ঈদের আগে বড় বড় কারখানাগুলো আংশিক চলতি মাসের বেতন এবং বোনাস দিলেও ছোট-মাঝারি কারখানাগুলো নিয়ে শঙ্কা রয়েছে। এ ছাড়া এক বছরের কম সময় চাকরি করেছে এমন প্রায় চার থেকে পাঁচ লাখ শ্রমিক ঈদ বোনাস থেকে বঞ্চিত হবে আইন অনুসারে। এ ছাড়া ঈদের আগে রাজধানীর মিরপুর, নারায়ণগঞ্জ, গাজীপুরে বেশ কিছু কারখানা বন্ধ হওয়ার আশঙ্কা করছেন তিনি।

বিজিএমইএর সভাপতি ড. রুবানা হকের কাছে জানতে চাইলে তিনি এ বিষয়ে কোনো কথা বলতে রাজি হননি। তবে জনসংযোগ বিভাগের একজন কর্মকর্তা কালের কণ্ঠ’কে জানান, তাঁদের কাছে জুন মাসের মজুরির হালনাগাদ কোনো তথ্য নেই। আর কারখানাগুলোতে সবেমাত্র জুন মাসের মজুরি দেওয়া শুরু হয়েছে।

প্রসঙ্গত, করোনার কারণে ৩১৮ কোটি ডলারের পোশাকের ক্রয়াদেশ বাতিল বা স্থগিত হলে মার্চের দ্বিতীয় সপ্তাহ থেকে এই নিয়ে ব্যাপক উদ্বেগ প্রকাশ করেন পোশাক খাতের উদ্যোক্তারা। এরপর ২৫ মার্চ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা রপ্তানিমুখী শিল্পের জন্য পাঁচ হাজার কোটি টাকার প্রণোদনা ঘোষণা করেন।

 

সুত্রঃ কালের কণ্ঠ