পোশাক শিল্পের বাজার সম্প্রসারণের লক্ষে ওয়াশিংটনে গোলটেবিল বৈঠক

ওয়াশিংটন ডিসিতে অবস্থিত বাংলাদেশ দূতাবাস মার্কিন সরকার এবং সংশ্লিষ্ট অংশীজনদের অংশগ্রহণে শুক্রবার এক গোলটেবিল বৈঠকের আয়োজন করে। বৈঠকে বাংলাদেশে তৈরি পোশাক শিল্পের কারখানা নিরাপত্তা এবং শ্রমিকদের কল্যাণের লক্ষ্যে চলমান প্রচেষ্টার পাশাপাশি কিভাবে আরো মার্কিন আমদানিকারকগণকে বাংলাদেশি তৈরি পোশাক আমদানিতে উৎসাহিত করা যায় সেই বিষয়ে আলোচনা করা হয়।

যুক্তরাষ্ট্রে সফররত বাংলাদেশ গার্মেন্টস ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিজিএমইএ) সভাপতি ফারুক হাসানও ছিলেন এই অনুষ্ঠানে।

“রানা প্লাজা পরবর্তী সাত বছর: কে কি করছে?” শিরোনামে অনুষ্ঠিত এই বৈঠকে দক্ষিণ এশিয়া বিষয়ক যুক্তরাষ্ট্রের সহকারী বাণিজ্য প্রতিনিধি ক্রিস্টোফার উইলসন, টেক্সটাইল বিষয়ক সহকারী বাণিজ্য প্রতিনিধি উইলিয়াম জ্যাকসন, পররাষ্ট্র দফতরের দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়ার পরিচালক জেনিফার লারসন, পররাষ্ট্র দফতরের ডেমোক্রেসি, হিউম্যান রাইটস অ্যান্ড লেবারের পরিচালক মরিন হ্যাগার্ড-সহ যুক্তরাষ্ট্রের সংশ্লিষ্ট দপ্তরসমূহের জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তারা অংশগ্রহণ করেন। এছাড়াও ম্যাকলার্টি অ্যাসোসিয়েটসের প্রতিনিধি টেরেসিতা শ্যাফার, বিজিএমইএর ভাইস প্রেসিডেন্ট মিরান আলী, ইউএস-বাংলাদেশ বিজনেস কাউন্সিলের প্রতিনিধি, আমেরিকান অ্যাপারেল অ্যান্ড ফুটওয়্যার অ্যাসোসিয়েশন (এএএফএ) এর প্রতিনিধি এবং ওয়ালমার্ট ও টার্গেট-এর প্রতিনিধিদের পাশাপাশি বাংলাদেশ দূতাবাসের উর্ধ্বতন কর্মকর্তাগণও এতে অংশগ্রহণ করেন।

সূচনা বক্তব্যে যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত এম শহীদুল ইসলাম বাংলাদেশের অর্থনীতি এবং এর আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে তৈরি পোশাক শিল্পের অপরিসীম অবদানের কথা তুলে ধরেন। রাষ্ট্রদূত শহীদুল উল্লেখ করেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকার শ্রমিকদের কল্যাণ ও শিল্পকে রক্ষা করার জন্য বিশেষতঃ রানা প্লাজার ঘটনার পর থেকে বিভিন্ন পদক্ষেপ ও উদ্যোগ গ্রহণ করেছে।

বিজিএমইএ সভাপতি ফারুক হাসান তার বক্তব্যে বাংলাদেশ সরকার এবং বিজিএমইএ কর্তৃক গৃহীত বিভিন্ন উদ্যোগের কথা তুলে ধরেন। এর মধ্যে পোশাক শ্রমিকদের কল্যাণে গঠিত আরএমজি সাসটেইনেবিলিটি কাউন্সিল প্রতিষ্ঠা এবং কর্মস্থলের নিরাপত্তা বজায় রাখতে গঠিত ট্রাইপাট্রাইট কন্সালটেটিভ কাউন্সিল বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য বলেও সকলকে অবহিত করেন ফারুক হাসান।

বৈঠকে অংশগ্রহণকারীদের উদ্দেশ্যে বিজিএমইএ নেতা কোভিড-১৯ মহামারীর কারণে বাংলাদেশের পোশাক শিল্পে উদ্ভুত নতুন চ্যালেঞ্জ এবং বিজিএমইএ কিভাবে এই কঠিন সময়ে শ্রমিকদেরকে সহযোগিতা করেছে তার উল্লেখ করেন। এছাড়াও তিনি প্রণোদনা প্যাকেজের মাধ্যমে সরকারের উদার অবদানের কথা স্বীকার করেন। একটি সাবলীল ও টেকসই সাপ্লাই চেইন এবং সোর্সিংয়ের প্রয়োজনীয়তার উপর জোর দিয়ে সভাপতি ফারুক হাসান তৈরিপোশাকশিল্প মালিকদের খরচ কমানোর নিমিত্তে কারখানার একাধিক নিরীক্ষা কমানোর জন্য মার্কিন ক্রেতাদের প্রতি আহ্বান জানান। বাংলাদেশে শ্রমিকের ন্যূনতম মজুরি বৃদ্ধি এবং তৈরি পোশাকের ক্রমবর্ধমান উৎপাদন খরচ বিবেচনায় বিজিএমইএ সভাপতি বাংলাদশে তৈরি পোশাকের উচ্চ ও ন্যায্য মূল্য প্রদানের জন্য মার্কিন ক্রেতাদেরকে অনুরোধ জানান। এছাড়াও তিনি বাংলাদেশে তৈরি পোশাকের জন্য শুল্ক কমানোর বিষয়টি বিবেচনা করার জন্য মার্কিন সরকারের প্রতি আহ্বান জানান।

ইন্টারেক্টিভ সেশন চলাকালীন সহকারী বাণিজ্য প্রতিনিধি ক্রিস্টোফার উইলসন দেশে এবং বিদেশে শ্রমিকদের কল্যাণে বাইডেন প্রশাসনের প্রচেষ্টার কথা উল্লে করেন। ট্যারিফ ইস্যুকে মার্কিন কংগ্রেসের বিশেষ ক্ষমতা হিসেবে উল্লেখ করে তিনি শ্রম এবং সংশ্লিষ্ট বিষয়ে দুই সরকারের মধ্যে আলোচনা চালিয়ে যাওয়ার ওপর গুরুত্বারোপ করেন।

এই বৈঠকে অংশগ্রহণকারীরা তৈরি পোশাক শিল্পের মাধ্যমে নারী শ্রমিকদের ক্ষমতায়ন, কোভিড-১৯ মহামারী এবং পোশাক শ্রমিকদের জন্য ভ্যাকসিন সহায়তাসহ অন্যান্য প্রাসঙ্গিক বিষয়ে আলোচনা করেন। এছাড়াও তারা শ্রমিকদের অর্থনৈতিক ও মানবাধিকার সম্পর্কিত গুরুত্বপূর্ণ কল্যাণমূলক বিষয়ে তথ্য বিনিময়ের একটি কার্যকর এবং সময়োপযোগী উদ্যোগ হিসেবে আয়োজিত গোলটেবিল বৈঠকের প্রশংসা করেন।

রাষ্ট্রদূত এম শহীদুল ইসলাম বাংলাদেশ ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে ব্যবসা- বাণিজ্য আরও সম্প্রসারণের লক্ষ্যে টিকফাসহ সকল ফোরামে ব্যাপক আলোচনা ও সংলাপের গুরুত্ব তুলে ধরে গোলটেবিল বৈঠকের সমাপ্তি ঘোষণা করেন।

 

সূত্রঃ বাংলাদেশ প্রতিদিন