বৃহস্পতিবার , ১৩ জুন ২০২৪ | ১২ই আষাঢ়, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
  1. অন্যান্য
  2. অপরাধ ও দুর্নীতি
  3. অর্থ ও বাণিজ্য
  4. আইন আদালত
  5. আন্তর্জাতিক
  6. কৃষি
  7. খেলা
  8. চাকরি
  9. ছবিঘর
  10. জাতীয়
  11. তথ্যপ্রযুক্তি
  12. দুর্ঘটনা
  13. ধর্ম
  14. নারী
  15. নির্বাচিত খবর

পোরশায় মাটি খুঁড়লেই মিলছে প্রত্নতাত্বিক সম্পদ 

Paris
জুন ১৩, ২০২৪ ৯:২০ অপরাহ্ণ

পোরশ প্রতিনিধি :
নওগাঁর পোরশায় মাটি খুঁড়লেই মিলছে প্রত্নতাত্বিক সম্পদ। আর এসব প্রত্নতাত্বিক সম্পদ মুল্যবান হওয়ায় প্রায় একযুগের অধিক সময় ধরে এলাকার লোকজন মাটি খুঁড়ে এসব প্রত্নতাত্বিক সম্পদ তুলে নিয়ে যাচ্ছে। বিষয়টি জানাজানি হলেও এগুলো রক্ষায় এ পর্যন্ত সরকারি বা বেসরকারি কোন সংস্থা ব্যবস্থা গ্রহন করেনি।
স্থানীয়ভাবে জানা গেছে, নওগাঁর পোরশা উপজেলার নিতপুর ইউনিয়নের পশ্চিম রঘুনাথপুর গ্রামে প্রত্নতাত্বিক ওই সম্পদগুলি উদ্ধারের জন্য প্রতিনিয়ত খোঁড়াখুঁড়ি করছে লোকজন। টেকঠা নামক ওই মাঠে প্রায় ১৪ বছর আগে স্থানীয়রা মাটি খনন করে গর্ত থেকে কিছু মূল্যবান জিনিষপত্র পায়।
এই জিনিসগুলি ছিল পাথরের তৈরী বিভিন্ন মার্বেল ও তসবী জাতীয় জিনিসপত্র। যে গুলো দেখতে সুন্দর এবং মুল্যবানও ছিল। এরপর থেকে ওই মুল্যবান জিনিসপত্র পাওয়ার আসায় মাটি খনন করতে শুরু করে লোকজন। এতে যেখানেই মাটি খনন করে সেখানেই বিভিন্ন ধরনের জিনিসপত্র পায় তারা। ফলে এসব মূল্যবান জিনিষপত্র পাওয়ার আশায় প্রতিযোগিতা করে এলাকার মানুষ প্রতিদিন সকাল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত আশপাশের আবাদি জমি ও আম বাগান খনন করেই চলেছেন।
পাঁচ্ছেন দামি সব জিনিসপত্র। পুনর্ভবা নদীর পূর্বপাড়ের প্রায় ৪ কিলোমিটার এলাকাজুড়ে চলছে মূল্যবান ওই জিনিসপত্র পাওয়ার প্রতিযোগিতা।  কেউ নিজ মালিকানাধীন জমিতে আবার কেউ অন্যের কাছ থেকে জমি লিজ নিয়ে খনন করে এসব জিনিসপত্র উদ্ধার করছেন। পশ্চিম রঘুনাথপুর জেলেপাড়ার বৃদ্ধ আবদুল কাদের জানান,  ১২-১৪ বছর পূর্বে এখানে কোন ঘরবাড়ি ছিল না। ফাঁকা মাঠ ছিল। বর্তমানে প্রত্নতাত্বিক তৈজসপত্র উদ্ধারকে কেন্দ্র করে বসতবাড়ি হয়েছে। তিনি জানান, সর্বপ্রথম তিনি ওই স্থানে কয়েকটি ছোট-ছোট পাথর পেয়েছিলেন। পাথরগুলো ঠিক তসবীতে ব্যবহারের মত পাথর।
কাদের মসজিদের একজন মুয়াজ্জিন হিসাবে পাথর গুলো যে মূল্যবান তা ধারনা করেননি বলে জানান। পরে তিনি পাথর গুলি দিয়ে তসবী তৈরী করে ব্যবহার করেন এবং পরবর্তীতে অন্যজনের কাছে পাঁচশত টাকার বিনিময়ে বিক্রি করে দেন। এ বিষয়টি জানাজানি হলে লোকজন শুরু করেন মাটি খননের। কাদের জানান, এখন প্রতিদিন স্থানীয়রা  ৪ থেকে ৫ ফুট মাটি খনন করলেই পাঁচ্ছেন বিভিন্ন রং এর তামার পয়সা, তাবিজ, তসবি পাথর, বিভিন্ন রংএর কলম, পাথরের মার্বেল বিভিন্ন বোতাম সহ মূল্যবান জিনিসপত্র। আর মূল্যবান জিনিস পাওয়া মাত্র তারা বিভিন্ন দামে বিক্রি করে দিচ্ছেন।
তারা জানান, কোন কোন পাথরের জিনিস ১০-১২ হাজার টাকা আবার কিছু জিনিস পত্র সর্বোচ্চ ২ লক্ষ টাকা দিয়ে বিক্রি করা হয়েছে। তবে তারা জানান, বর্তমানে যে জিনিসপত্র পাওয়া যাচ্ছে সেগুলো উল্লিখিত মুল্যে বিক্রি হচ্ছে। টেকঠা গ্রামের রবিউল জানান, তাদের গ্রামের পাশে পোরশা গ্রামের মৃত ওহাব শাহ্ চৌধুরীর ৩ বিঘা জমি রয়েছে।
তিনি ওই জমি তিন বছরের জন্য ২ লক্ষ টাকার বিনিময়ে লিজ নিয়েছেন। শুধু মাটি খনন করে মূল্যবান সব জিনিসপত্র উদ্ধারের আশায়। তিনি আরো জানান, এর আগেও তিনি পোরশা গ্রামের অন্য জনের জমি লীজ নিয়ে অনেক মূল্যবান জিনিষপত্র পেয়েছিলেন। এতে তার লাভ হয়েছিল। নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক ব্যক্তি জানান, তিনি ৩ বিঘা জমি লিজ নিয়ে খনন করে ২টি চিরুনি, দুটি জালি, তিনটি ছোট সাইজের ফুটবল ও কয়েকটি মার্বেল ও বোতাম পেয়েছেন।
এগুলো তিনি প্রায় ৭৫ হাজার টাকায় বিক্রি করেছেন।  টেকঠার ফইমুদ্দিনের স্ত্রী আনোয়ারা বেগম জানান, তার বাড়ির পাশে নিজের ৮শতাংশ জমি খনন করে তিনি ১টি চাকতি পেয়ে ৫ হাজার টাকায়। ২টি ঢোল ৫০ হাজার টাকায় ২টি জালি পোটল ১ লক্ষ টাকায় এবং কয়েকটি মার্বেল ও বোতাম পেয়ে সেগুলো ২০ হাজার টাকায় বিক্রি করেছেন।
তিনি জানান, এসব মূল্যবান জিনিষপত্র নওগাঁ, বগুড়া, নাটোর ও পাবনা এলাকার কিছু ব্যবসায়ীরা ক্রয় করে নিয়ে যাচ্ছেন।  স্থানীয় প্রবিণ ব্যক্তিরা জানান, এই এলাকা একসময় নদি বন্দর হিসাবে ব্যবহার হতো। সে সময় এ এলাকায় হিন্দুদের বসবাস ছিল। কালের বিবর্তনে পরিবার গুলি বিলিন হয়ে যাওয়ার কারণে তাদের রেখে যাওয়া মূল্যবান জিনিসপত্র মাটির নিচে চাপা পড়ে। সেই মূল্যবান জিনিসগুলো এখন পাওয়া যাচ্ছে বলে তাদের ধারনা।
তবে সংশ্লিষ্ট একটি সূত্র জানায়, টেকঠা নামক স্থানের ক্ষতিসাধন রোধ করে অবৈধ প্রত্নসম্পদ পাঁচারকারীদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহনের জন্য অনুরোধ করে ২০২২ সালের শেষের দিকে সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয় এর প্রত্নতত্ব অধিদপ্তরের রাজশাহী ও রংপুর অঞ্চলের আঞ্চলিক পরিচালক স্থানীয় প্রশাসন বরাবর একটি পত্র প্রেরণ করেছিলেন।
কিন্তু পত্রের আলোকে কোন ব্যবস্থা নেয়া হয়নি। এ বিষয়ে নওগাঁর পাহাড়পুর যাদুঘরের কাস্টডিয়ান ফজলুল করিম জানান, ইতোমধ্যে তিনি অধিদপ্তর থেকে চিঠি পেয়েছেন। চিঠির আলোকে তিনি সে স্থানটি পরিদর্শন করেছেন। আগামী কিছুদিনের মধ্যে আবার তারা স্থানটি পরিদর্শন করে তথ্য সংগ্রহ করবেন এবং সে স্থানটি সংরক্ষনের জন্য ব্যবস্থা গ্রহণের প্রস্তাব প্রেরণ করবেন বলে তিনি জানান।

সর্বশেষ - রাজশাহীর খবর