সিল্কসিটিনিউজ ডেস্ক:
পেশাটি পুরুষের’—এমন বৈষম্যমূলক শব্দ চয়নের দিন আর নেই। কারাতের রিং বা আগুনের সঙ্গে যুদ্ধ অথবা রকেটে চেপে মহাকাশে বিচরণ—কঠিন, জটিল, বিরল বলে বিবেচিত সব পেশাতেই এখন নারীর উজ্জ্বল উপস্থিতি।
সাফল্য-ব্যর্থতার মিশেলে এগিয়ে চলা। আজ ৮ মার্চ, আন্তর্জাতিক নারী দিবস। দিনটিকে সামনে রেখে বার্তা সংস্থা এএফপি প্রথা ভাঙা পেশায় লড়াই করে যাওয়া বেশ কয়েকজন নারীর সঙ্গে কথা বলে। তাঁদের মধ্যে তিনজনকে নিয়েই সাজানো হয়েছে এ প্রতিবেদন—
তুরস্কের দমকলকর্মী
‘শুরুর দিকে পরিবার থেকে বলত, এই কাজ করতে হবে না। এগুলো ছেলেরা করে। আমি কারো কথায় কান দিইনি। ’— বলছিলেন তুরস্ক দমকলের উর্দিপরা প্রথম নারীকর্মী দেভরিম ওজদেমির (৩৭)। ২০০৮ সালের কথা এটি। এখন কাজ করছেন পশ্চিমাঞ্চলীয় শহর ইজমিরে।
শুরুটা তিনি করলেও তুর্কি দমকলে এখন ৫১ নারী কাজ করছেন। তিনি বলেন, ‘কাজটা শারীরিক কসরতের। মাঝেমধ্যে ভারী সরঞ্জাম বইতে হয়। এ ছাড়া এ কাজে আমার আর কোনো সমস্যা নেই। ’ নারী-পুরুষ বেতনে বৈষম্য নেই বলেও জানান তিনি। শুরুতে বাধা দিলেও এখন সবাই তাঁকে সমর্থন করছে জানিয়ে তিনি বলেন, তাঁর কাজে নতুন প্রজন্ম দারুণভাবে উৎসাহিত হচ্ছে। বিশেষ করে তাঁর ছয় বছরের ছেলে। ‘রাতে মায়েরা সন্তানদের রূপকথার গল্প শুনিয়ে ঘুম পাড়ান, আর আমি ছেলেকে বলি আমার অভিযানের কাহিনী। আমার ছেলের কাছে আমিই হিরোইন। এর চেয়ে অসাধারণ অনুভূতি আর হয় না। আমাকে দেখে ও এখন থেকেই দমকলকর্মী হতে চায়। ’
দক্ষিণ আফ্রিকার যোদ্ধা
মিক্সড মার্শাল আর্টে দক্ষিণ আফ্রিকার প্রথম নারী চ্যাম্পিয়ন শানা পাওয়ার (২৫)। প্রথা ভেঙে রিংয়ে উঠে আগুন ঝরান তিনি। পারদর্শিতার কারণেই তাঁকে ডাকা হয় ‘টাইটানিয়াম’ বলে। জোহানেসবার্গের এই নারী জানালেন, যুক্তরাষ্ট্রের হলি হোমকে দেখে প্রথম এই খেলায় আকৃষ্ট হন তিনি। ‘ছেলেবেলা থেকেই আমি খুব খেলুড়ে। আমি মনে করি, শরীর-মন—দুটিই একই রকম গুরুত্বপূর্ণ। যদি মন তৈরি করা যায় তাহলে শরীরেও আরোধ্য শক্তি চলে আসে। ’ বললেন, সহযোগিতা পেয়েছেন জীবনের সব স্তরের মানুষের কাছ থেকে। তবে পুরুষদের তুলনায় এ ক্ষেত্রে পয়সা কম। যদিও প্রশিক্ষণে একই রকম সুযোগ-সুবিধা দেওয়া হয়েছে তাঁকে।
যুক্তরাষ্ট্রের নভোচারী
ওয়েন্ডি লরেন্সের বয়স এখন ৫৮। নাসার নভোচারী ছিলেন। সোনাঝরা অতীতের স্মৃতিচারণা করে তিনি বলেন, ‘অ্যাপোলো ১১ যখন চাঁদের বুকে পা রাখে তখন আমার বয়স ১০। নিল আর্মস্ট্রং ও বাজ অলড্রিনকে চাঁদে হেঁটে বেড়াতে দেখে আমার ভাবনা পাল্টে যায়। মনে হতো, বড় হয়ে তাঁদের মতো হতে হবে। আমাকে নভোচারী হতে হবে। আমি মহাকাশে উড়ে বেড়াব। ’ নাসার নভোযানে ১৯৯৫ সাল থেকে ২০০৫ সালের মধ্যে তাঁর এই সাধ মিটেছে অন্তত চারবার। প্রশিক্ষিত এই নেভি হেলিকপ্টার পাইলটের বেড়ে ওঠা ফ্লোরিডার জ্যাকসনভিলে। বলছিলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্রে কিছু বাক্য খুব পরিচিত। বলা হয়, তোমার হাঁটা মেয়েদের মতো বা বসা মেয়েদের মতো। ফ্লাইং স্কুলে যখন যেতাম মনে হতো, এবার আমার সহকর্মীরা বলবেন, আমি বিমান চালাই মেয়েদের মতো। এই কথাটি না শোনার জন্য কঠোর পরিশ্রম করতাম। মন এভাবে তৈরি করেছিলাম যে তাদের সবাইকে ভুল প্রমাণ করবই আমি। ’ এই প্রত্যয় নিয়ে পথ চলা লরেন্স অবসরে যান ২০০৬ সালে। নারী-পুরুষ নির্বিশেষে সবার প্রতি তাঁর পরামর্শ, ‘নারীকে সুযোগ দিন। তাদের কাজ, তাদের সক্ষমতা আপনাকে চমকে দিতে পারে। ’ সূত্র : এএফপি।