পেঁয়াজের বিক্রি কমেছে, কমেনি দাম

গত সোমবার ভারত বাংলাদেশে পেঁয়াজ রফতানি বন্ধ করে দেয়ায় রাতারাতি এ পণ্যটির দাম বেড়ে দ্বিগুণ হয়ে যায়। আতঙ্কে মঙ্গলবার ও বুধবার এক শ্রেণির ক্রেতারা বাড়তি পেঁয়াজ কিনে মজুত করেন। এতে রাজধানীর বাজারগুলোতে কেনার এক ধরনের হিড়িক পড়ে যায়। দু’দিন বাড়তি কেনার পর বৃহস্পতিবার (১৭ সেপ্টেম্বর) পেঁয়াজ কেনার পরিমাণ কিছুটা কমেছে। ফলে খুচরা বাজারে কমেছে পেঁয়াজ বিক্রি। তবে হঠাৎ করে বেড়ে যাওয়া পেঁয়াজের দাম কমেনি।

খুচরা বিক্রেতারা বলছেন, গতবছর ভারত পেঁয়াজ রফতানি বন্ধ করায় দেশের বাজারে পেঁয়াজের কেজি ২৫০ থেকে ৩০০ টাকা হয়েছিল। এ কারণে এবার ভারতের রফতানি বন্ধ এবং পেঁয়াজের দাম বাড়ার সংবাদে মঙ্গলবার পেঁয়াজ কেনার এক ধরনের হিড়িক পড়ে যায়। বুধবারও বাড়তি পেঁয়াজ কেনেন ক্রেতারা। মূলত গত দু’দিনেই ভোক্তাদের বড় অংশ পেঁয়াজ কিনে মজুত করে ফেলেছেন। এ কারণে পেঁয়াজের বিক্রি কমেছে।

তারা বলছেন, পেঁয়াজের বিক্রি কমলেও পাইকারি বাজারে দাম কমেনি। যে কারণে খুচরা বাজারেও পেঁয়াজের দাম কমেনি। সহসা পেঁয়াজের দাম কমার সম্ভাবনাও কম। তবে ভারত যদি বাংলাদেশকে পেঁয়াজ দেয়ার সিদ্ধান্ত নেয় তাহলে দাম কিছুটা কমতে পারে। আর ভারত পেঁয়াজ না দেয়ার সিদ্ধান্তে অনড় থাকলে দাম আরও বেড়ে যেতে পারে।

বৃহস্পতিবার (১৭ সেপ্টেম্বর) রাজধানীর বিভিন্ন বাজারে খোঁজ নিয়ে দেখা গেছে, খুচরা বাজারে দেশি পেঁয়াজের কেজি বিক্রি হচ্ছে ৯০ থেকে ১১০ টাকা। আমদানি করা ভারতের পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৭০ থেকে ৮০ টাকা কেজি। অপরদিকে পাইকারিতে দেশি পেঁয়াজের কেজি বিক্রি হচ্ছে ৮০ থেকে ৮৫ টাকা। আমদানি করা ভারতের পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৬০ থেকে ৬৫ টাকা।

মালিবাগ হাজীপাড়ার ব্যবসায়ী মো. সেলিম বলেন, দাম বাড়ার সংবাদে মঙ্গলবার ২০ বস্তা পেঁয়াজ কিনেছিলাম। গত দুই দিনে ১২ বস্তা পেঁয়াজ বিক্রি হয়ে গেছে। ক্রেতাদের বেশিরভাগ পাঁচ কেজি করে পেঁয়াজ কিনেছেন। তবে আজ পেঁয়াজের ক্রেতা নেই।’

তিনি বলেন, ‘বেশিরভাগ মানুষ গত দুই দিনে বাড়তি পেঁয়াজ কিনে মজুত করে ফেলেছেন। যে কারণে আজ বিক্রি খুব কম। তবে ৮-১০ দিন পরে আবার পেঁয়াজের চাহিদা বাড়বে। তখন পেঁয়াজের দাম আরও বেড়ে যেতে পারে। অবশ্য শুনছি পেঁয়াজ দেয়ার জন্য বাংলাদেশের পক্ষ থেকে ভারতকে অনুরোধ জানানো হয়েছে। ভারত যদি অনুরোধ রেখে বাংলাদেশকে পেঁয়াজ দেয় তাহলে দাম কিছুটা কমতে পারে।’

প্রায় একই ধরনের কথা বলেন হাজীপাড়া বৌ-বাজারের ব্যবসায়ী মো. জাহাঙ্গীর। তিনি বলেন, ‘শ্যামবাজারে গিয়ে শুনছি ভারতে পেঁয়াজ বোঝাই অনেক ট্রাক আটকে আছে। টেলিভিশনেও এমন খবর শুনছি। এসব পেঁয়াজ বাংলাদেশে আসার অনুমতি দেয়ার জন্য সরকারের পক্ষ থেকে নাকি অনুরোধ করা হয়েছে। আটকে থাকা পেঁয়াজের ট্রাক বাংলাদেশে আসলে দাম কমবে বলে শ্যামবাজারের ব্যবসায়ীদের বলাবলি করছেন।’

তবে ভিন্ন কথা বললেন রামপুরার ব্যবসায়ী আরিফুল ইসলাম। তিনি বলেন, ‘পেঁয়াজের দাম আগামী ২-৩ মাস কমার সম্ভাবনা কম। ভারত পেঁয়াজ দিলে দাম কিছুটা স্থির থাকতে পারে, কিন্তু দাম কমবে বলে মনে হয় না। আর ভারত পেঁয়াজ না দিলে দাম আরও বেড়ে যাবে। তবে এবার হয়তো গত বছরের মতো হবে না। কারণ পেঁয়াজের দাম নিয়ন্ত্রণে এবার আগেভাগেই অভিযান শুরু হয়েছে। ইতোমধ্যে বিভিন্ন বাজারে চালানো হয়েছে। এই অভিযান না চালালে পেঁয়াজের কেজি দেড়শ টাকা হয়ে যেত।’

কারওয়ান বাজারের ব্যবসায়ী হাবিবুর রহমান মোস্তফা বলেন, ‘পেঁয়াজের দাম নতুন করে আরও বাড়ার সম্ভাবনা কম। কারণ পেঁয়াজের বিক্রি অনেক কমে গেছে। আতঙ্কে দুইদিনে সাধারণ মানুষ অনেক পেঁয়াজ কিনেছেন। আজ বিক্রি নেই বললেই চলে।’

তিনি বলেন, ‘এবার পেঁয়াজের দাম অস্বাভাবিক বাড়ার সম্ভাবনা যেমন কম, তেমনি দাম কমার সম্ভাবনাও কম। গতকাল আমরা দেশি পেঁয়াজ ৮০ টাকা কেজি বিক্রি করেছি। আজও ৮০ টাকা কেজি বিক্রি করছি। নতুন পেঁয়াজ না ওঠা পর্যন্ত পেঁয়াজের এই দাম স্থির থাকবে বলে মনে হচ্ছে। আমাদের ধারণা, পেঁয়াজের দাম খুব বেশি ওঠা-নামা করবে না। হয়তো কেজিতে ৫-১০ টাকা কম-বেশি হতে পারে।’

কারওয়ান বাজারের আরেক ব্যবসায়ী গৌতম বাবু বলেন, ‘কারওয়ান বাজার ও শ্যামবাজারে আজ দেশি পেঁয়াজের কেজি বিক্রি হচ্ছে ৮০ টাকা। আমদানি করা ভারতের পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৬০ টাকা। আজ নতুন করে পেঁয়াজের দাম বাড়া বা কমা কোনোটিই হয়নি। পরিস্থিতি দেখে মনে হচ্ছে, পেঁয়াজের এই দাম কয়েকদিন স্থির হবে।’

 

সূত্রঃ জাগো নিউজ