পেঁয়াজের কেজি ১৪০ টাকা

oi

সিল্কসিটি নিউজ ডেস্ক:

কয়েক মাস ধরেই পেঁয়াজের বাড়তি দামে নাজেহাল ভোক্তা। সরকার পণ্যটির দাম বেঁধে দিলেও লাভের লাভ হয়নি। এর মধ্যে আগুনে ঘি ঢেলেছে ভারতের রপ্তানিমূল্য বৃদ্ধির খবর। দেশের বাজারে এখনো বাড়তি দামের পেঁয়াজ ঢোকেনি। অথচ এরই মধ্যে আমদানি ও দেশি- দুধরনের পেঁয়াজের দাম রাতারাতি বেড়ে গেছে। খুচরায় প্রতি কেজি দেশি পেঁয়াজের দাম এখন ১৪০ টাকা। এমন আকাশচুম্বী দামে আবারও ভোক্তার গলার কাঁটায় পরিণত হয়েছে পেঁয়াজ।

খুচরা বাজার ও ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, মূলত গত সোমবার দাম হঠাৎ এক লাফে কেজিপ্রতি ১৫ থেকে ২৫ টাকা বেড়ে যায়। বাজারে এখন দেশি পেঁয়াজের কেজি বিক্রি হচ্ছে ১৩০ থেকে ১৪০ টাকা পর্যন্ত।

অথচ গত রবিবারও এ পেঁয়াজ ১১৫ টাকাতে পাওয়া গেছে। অর্থাৎ মাত্র এক রাতের ব্যবধানেই পণ্যটির দাম লাগামছাড়া বেড়েছে, যা বেশির ভাগ ভোক্তার নাগালের বাইরে।

খুচরা বিক্রেতা মো. মিলন হোসেন জানান, দাম হঠাৎ বেড়ে ১৪০ টাকা হয়েছে। আমদানিকৃত পেঁয়াজ ১২০ টাকাতেও বিক্রি হচ্ছে। কারণ জানা নেই। আড়তেই দাম বেড়ে গেছে। বেশি দামে কিনতে হলে আমাদেরও বেশি দামে বিক্রি করতে হয়। গত সোমবার থেকে এ দামেই বিক্রি করছি।

এদিকে পেঁয়াজের এমন আকশচুম্বী দামে ক্ষুব্ধ ক্রেতারা। অটোরিকশা চালক মো. কাশেম মোল্লা বলেন, ‘এই আগুনের দামে কজন মানুষ পেঁয়াজ কিনতে পারেন। দাম বাড়তেই পারে। তাই বলে এক রাতে ২০-২৫ টাকা!’

বেসরকারি চাকরিজীবী মো. সাইফুল ইসলাম বলেন, সরকার দাম বেঁধে দিল ৬৫ টাকা। ভাবলাম এবার যদি দাম কমে। কিন্তু কই! সরকারের নির্দেশ উপেক্ষা করে দ্বিগুণেরও বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে।

সরকারি সংস্থা ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) তথ্যেও উঠে এসেছে অস্বাভাবিক দাম বাড়ার চিত্র। সংস্থাটির পর্যবেক্ষণ বলছে, গতকাল রাজধানীর বাজারে দেশি পেঁয়াজের কেজি ১২৫ থেকে ১৩০ টাকা বিক্রি হয়েছে। গত সপ্তাহে যা ৯০ টাকাতে কেনা গেছে এবং গত বছর এ সময় দাম ছিল ৫০ থেকে ৬০ টাকা। একইভাবে দাম বেড়ে গতকাল আমদানিকৃত পেঁয়াজ ১১০ থেকে ১২০ টাকা বিক্রি হয়। গত সপ্তাহে ৭০ টাকা এবং বছর আগে এমন সময় দাম ছিল ৪৫ টাকা। সংস্থাটি বলছে, মাসের ব্যবধানে পণ্যটির পেছনে ৫০ শতাংশ এবং এক বছরে ১৩১ দশমিক ৮২ শতাংশ খরচ বেড়েছে।

পাইকারি বিক্রেতারা বলছেন, দেশি পেঁয়াজ ফুরিয়ে আসছে। তাই আমদানিকৃত, বিশেষ করে ভারতীয় পেঁয়াজের ওপর চাপ বাড়ছে। কিন্তু পূজার ছুটির কারণে বেশ কিছুদিন আমদানি বন্ধ ও ভারতীয় পেঁয়াজের রপ্তানিমূল্য বেড়ে যাওয়ায় দাম বেড়েছে।

প্রসঙ্গত, নিজ দেশে পেঁয়াজের সরবরাহ ও দাম ঠিক রাখতে গত ২৯ অক্টোবর প্রতি টন পেঁয়াজের রপ্তানির ন্যূনতম মূল্য ৮০০ ডলার বেঁধে দেয় ভারতের কেন্দ্রীয় সরকার, যা আগামী ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত বহাল থাকবে।

যদিও এ বর্ধিত দামের পেঁয়াজ এখনো দেশে আসেনি। তারপরও রাতারাতি দাম কীভাবে বাড়ে জানতে চাইলে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক পাইকারি বিক্রেতা জানান, মূলত রপ্তানিমূল্য বাড়ার খবরেই দাম বাড়িয়ে দিয়েছে সরবরাহকারীরা। অতীতেও এমনটা হয়েছে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, জামালপুর ইসলামপুর উপজেলার আড়তগুলোতেও দিনের ব্যবধানে দাম বেড়ে গেছে। দৈনিক আমাদের সময়ের স্থানীয় প্রতিনিধি খোঁজ নিয়ে জানান, গত সোমবার সকালের দামের চেয়ে বিকালের দামে ৫০ টাকা পর্যন্ত ফারাক দেখা গেছে। কিছু অসাধু ব্যবসায়ী সিন্ডিকেট করে দাম বাড়িয়ে দেয়, এরপর তা গোটা বাজারে ছড়িয়ে পড়ে।

এর আগেও দেখা গেছে, বাজারে দেশি ও অন্যান্য দেশ থেকে আমদানিকৃত পেঁয়াজ থাকা সত্ত্বে¡ও পার্শ¦বর্তী দেশ ভারত রপ্তানিমূল্য বাড়ালে দেশের বাজারে চড়ামূল্য দিতে হয় ভোক্তাদের। ২০১৯ সালেও ভারত রপ্তানিমূল্য ৮৫০ টাকা বেঁধে দিলে দাম বেড়ে ইতিহাস গড়ে পেঁয়াজ। সেসময় বাজার সামাল দিতে না পেরে বাধ্য হয়ে দেশের বড় বড় শিল্প গ্রুপকে পেঁয়াজ আমদানি করতে অনুরোধ করে সরকার। একপর্যায়ে বিমানে করেও আমদানি হয়।

এবার একইভাবে দাম বাড়ছে কিনা, জানতে চাইলে কারওয়ানবাজার ও শ্যামবাজারের ব্যবসায়ীরা জানান, অসাধু ব্যবসায়ী চক্র এখনো সক্রিয় রয়েছে, যারা ভারতের রপ্তানিমূল্য বাড়ার খবরেই দাম বাড়িয়ে দিচ্ছেন। পাইকারি বাজারে বেশির ভাগ ব্যবসায়ী কমিশন ব্যবসা করেন। সরবরাহকারীরা ফোনে তাদের যে দাম বলে দেন, সে দামেই বিক্রি হয়। পাইকারি বিক্রেতারা সেখান থেকে নির্দিষ্ট কমিশন পেয়ে থাকে।

ভোক্তা অধিকার সংগঠন কনজ্যুমার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) সভাপতি গোলাম রহমান বলেন, ভারত রপ্তানি মূল্য বাড়ালেও সে পেঁয়াজ এখনই দেশের বাজারে পৌঁছানোর কথা না। কিন্তু দেশের বাজারে রাতারাতি দাম লাফিয়ে বেড়ে গেল। কেতাবি ভাষায় অসাধু ব্যবসায়ীরা শলা-পরামর্শ করে দাম বাড়িয়ে দিচ্ছেন। আগের মতো আবারও সুযোগ লুফে নিয়ে দাম বাড়াচ্ছেন তারা। তিনি বলেন, সরবরাহে সরকারের নিয়ন্ত্রণ থাকতে হবে। না হলে যতই দাম বেঁধে দিক, লাভ হবে না। এ ছাড়া সংকটকালে আমদানিতে শুল্ক কমানো এবং পরে দেশে পেঁয়াজের মৌসুমে শুল্ক আবারও বাড়তে হবে। কিন্তু আমাদের এখানে এ চর্চা নেই। পেঁয়াজের মতো পণ্যে সময় অনুযায়ী শুল্ক আরোপও কমাতে হবে।