পুলিশ সদস্যদের বিরুদ্ধে মামলা তদন্ত করবে পিবিআই

সিল্কসিটিনিউজ ডেস্ক: খুলনার খালিশপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. নাসিম খান, পুলিশ ও আনসার সদস্যসহ ১৩ জনের বিরুদ্ধে দায়ের করা চোখ উৎপাটনের মামলা পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন-পিবিআইকে তদন্তের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

রোববার খুলনার মুখ্য মহানগর হাকিম আমলী আদালতের বিচারক শহিদুল ইসলাম এ নির্দেশ দেন। আগামী ১৮ অক্টোবর মামলার পরবর্তী দিন ধার্য করা হয়েছে।

এর আগে গত ৭ সেপ্টেম্বর নগরীর খালিশপুর নয়াবাটি রেললাইন বস্তি কলোনির মো. জাকির হোসেনের স্ত্রী রেনু বেগম বাদী হয়ে খুলনার মুখ্য মহানগর হাকিমের আমলী আদালতে মামলাটি দায়ের করেন। মামলায় দাবিকৃত দেড় লাখ টাকা না পেয়ে পুলিশ কর্মকর্তারা যোগসাজসে তাঁর ছেলে ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী মো. শাহজালালের দুটি চোখ উৎপাটন করে বলে অভিযোগ করা হয়।

বাদীপক্ষের আইনজীবী মো. মোমিনুল ইসলাম জানান, ৭ সেপ্টেম্বর আদালত বাদীর জবানবন্দি গ্রহণ করে রোববার আদেশের জন্য দিন ধার্য করেন। আদেশে আদালত মামলাটি তদন্তের জন্য পিবিআইকে নির্দেশ দিয়েছেন। এর মধ্য দিয়ে মামলার কার্যক্রম শুরু হলো।

আদালতে বাদীপক্ষে আইন ও সালিশ কেন্দ্রের (আসক) প্যানেল আইনজীবী আবদুর রশীদ ও খুলনার আইনজীবী মিনা মিজানুর রহমান অংশ নেন।

মামলার আসামিরা হচ্ছেন খালিশপুর থানার ওসি নাসিম খান, উপপরিদর্শক (এসআই) রাসেল, তাপস রায়, মোরসেলিম মোল্লা, মিজান, মামুন ও নূর ইসলাম, এএসআই সৈয়দ সাহেব আলী, আনসারের সিপাই আফসার আলী, ল্যান্সনায়েক আবুল হোসেন ও নায়েক রেজাউল এবং অপর দুজন খালিশপুর পুরাতন যশোর রোড এলাকার সুমা আক্তার ও শিরোমনি বাদামতলা এলাকার রাসেল।

শাহজালাল পিরোজপুর জেলায় কাঁচামালের ব্যবসা করলেও তাঁর বাবা জাকির হোসেন ও মা রেনু বেগম থাকেন খুলনার খালিশপুরে। শাহজালাল বিয়ে করেছেন খালিশপুরের গোয়ালখালীতে।

মামলার নথির বরাত দিয়ে অ্যাডভোকেট মোমিনুল ইসলাম জানান, গত ১৮ জুলাই মো. শাহজালাল স্ত্রী ও শিশুমেয়েকে নিয়ে পিরোজপুরের কাউখালী উপজেলার সুবিদপুর গ্রামের বাড়ি থেকে খুলনা নগরীর নয়াবাটি রেললাইন বস্তি কলোনির শ্বশুর বাড়িতে যান। ওই দিন রাত ৮টায় শাহজালাল তাঁর মেয়ের দুধ কেনার জন্য বাসার পাশের দোকানে যান। তখন পুলিশের সোর্স সুমা আক্তার ও রাসেল তাঁকে কৌশলে খালিশপুর থানায় নিয়ে যান। খবর পেয়ে তাঁর বাবা ও মা থানায় গেলে ওসি নাসিম খান দেড় লাখ টাকা দাবি করেন। তাঁরা সেই টাকা দিতে অস্বীকৃতি জানান।

মোমিনুল ইসলাম আরো জানান, শাহজালালের বাবা-মা ছেলেকে উদ্ধারের জন্য খালিশপুর থানার সামনে অবস্থান করছিলেন। তাঁরা থানার সামনে বসে থাকা অবস্থায় ভোর রাতের দিকে পুলিশভ্যানে শাহজালালকে নিয়ে বাইরে যায় পুলিশ। সকালে পুলিশের পক্ষ থেকে জানানো হয়, ছিনতাই করতে গিয়ে শাহজালালের দুটি চোখ উঠিয়ে ফেলেছে বিক্ষুব্ধরা। পরে শাহজালালের নামে ছিনতাই মামলা দেওয়া হয়। আদালতের নির্দেশে উন্নত চিকিৎসার জন্য শাহজালালকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে নেওয়া হয়েছে। ঢামেকে চিকিৎসাধীন শাহজালালের দুটি চোখ চিরতরে অন্ধ হয়ে গেছে বলে জানিয়েছেন চিকিৎসকরা। তাঁর চোখে পচন ধরায় দুটি চোখই উঠিয়ে ফেলা হয়েছে।

শাহজালালের মা রেনু বেগমের ভাষ্য, তাঁরা খালিশপুর থানায় গিয়ে শাহজালালের সঙ্গে দেখা করার সময় তিনি সুস্থ ছিলেন। থানার সামনে বসে থাকা অবস্থায় তাঁদের সামনে দিয়ে শাহজালালকে সুস্থ অবস্থায় পুলিশ ভ্যানে করে নিয়ে গিয়ে যায়। পরে ছিনতাই নাটক সাজানো হয়েছে।

মামলায় আরো উল্লেখ করা হয়, আসামিরা নিজেরা বাঁচতে একটি মিথ্যা মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে শাহজালালকে আদালতে পাঠান। পরে সব মামলায় জামিন নিয়ে ৭ সেপ্টেম্বর মামলা করেন তাঁর মা।

এর আগে খালিশপুর থানার ওসি নাসিম খান বলেন, ছিনতাই করার সময় স্থানীয় লোকজন শাহজালালকে আটক করে পিটুনি দেয়। এ সময় তাঁর চোখ দুটি উপড়ে যায়।

 

সূত্র: এনটিভি